সৌদি-পাক সম্পর্কে সত্যিই কি চিড় ধরলো?

মুসলিম বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরবের সঙ্গে পাকিস্তানের কয়েক দশকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে এবার সত্যি সত্যিই চিড় ধরলো। গত রোববার ভারতে বিশাল বিনিয়োগের পরিকল্পনার কথা দেশটি জানানোর মধ্য দিয়ে এটি স্পষ্ট হলো।

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ, ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী

ভারতের সরকারি বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন দিল্লিতে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত সৌদ বিন মোহাম্মদ আল সাতী। এতে ভারতকে সৌদির কৌশলগত অংশীদার ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে মূল্যয়াণ করার কথা বলেন তিনি।

আল সাতী বলেন, দুই দেশের মধ্যে প্রশিক্ষণ, জ্ঞান ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে। অগ্রাধিকারভিত্তিতে কিছু খাতে বিনিয়োগের বিষয়ে সৌদি ও ভারতের মধ্যে আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।

ভারতের এনডিটিভি জানায়, ভারতকে করোনা মহামারির প্রভাব কাটিয়ে উঠার মতো অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে দেখছে সৌদি আরব। এ জন্য বড় ধরনের এই বিনিয়োগের কথা ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।

সৌদি রাষ্ট্রদূত সৌদ বিন মোহাম্মদ আল সাতী

অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করতে নয়া দিল্লির উদ্যোগের প্রশংসা করে আল সাতী বলেন, সৌদি-ভারতের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হলে তা অঞ্চলিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

এর আগে গত সপ্তাহে সৌদি আরব সফর করে এসেছেন ভারতীয় সেনা প্রধান জেনারেল এমএম নরভেন। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করেননি সৌদি রাষ্ট্রদূত। শুধু বলেন, দুই দেশের কৌশলগত অংশীদারির কিছু ক্ষেত্রে সহযোগিতার নতুন পথ উন্মোচিত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এর মধ্যে পেট্রোকেমিক্যালস, পরিশোধন, অবকাঠামো, খনন-উৎপাদন ও কৃষির মতো খাত রয়েছে।

ইমরান খান ও সৌদি যুবরাজ

জানা যায়, তুরস্ক ও ইরানের দিকে ঝুঁকে পড়ায় সৌদি জোটের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে পাকিস্তানের। এ কারণে তুর্কি ব্লক ছেড়ে মার্কিন-ইসরায়েল ব্লকে আনতে দেশটির ওপর প্রচণ্ড চাপ দিচ্ছে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।

পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য দেশটির নাগরিকদের শ্রম ও ভ্রমণ ভিসা ইস্যু করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে আমিরাত। একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সৌদি ও বাহরাইন সরকার।

আমিরাত ও সৌদিতে ৫০ লাখের বেশি পাকিস্তানি শ্রমিক কাজ করছে। বাহরাইনসহ অন্য আরব দেশগুলোতেও দেশটির বিপুল সংখ্যক শ্রমিক রয়েছে। পাকিস্তানের বৈদেশিক আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস এসব আরব দেশ।

ইমরান খান ও তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান

এটিকেই হাতিয়ার করে ইসরায়েলের স্বীকৃতি ও ভারতঘেঁষা নীতি গ্রহণে পাক সরকারের ওপর চাপ দিচ্ছে সৌদি বলয়। বিষয়টি সরাসরি না বললেও ‘ভিন্ন বার্তা’র মাধ্যমে বুঝিয়ে দেয়া হয়েচ্ছে।

বিষয়টি স্বীকার করে সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নিজেই বলেন, কোনো চাপের কাছেই তার দেশ মাথা নত করবে না। এরপর চীনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে সৌদি ঋণ পরিশোধের উদ্যোগ নেন বলে জানা যায়।