বাবুনগরী: আল্লামা শফী ‘হত্যার মামলা রাজনৈতিক চক্রান্ত’

সংগঠনের সাবেক আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। তাকে হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলাটি ‘রাজনৈতিক চক্রান্ত’ বলে মন্তব্য করেছেন সংগঠনটির আমীর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।

আল্লামা শাহ আহমদ শফী ও আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী

আজ বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। যৌথভাবে এর আয়োজন করে মাদ্রাসা ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।

এতে বলা হয়, মাদ্রাসার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট এবং হেফাজত নেতাদের হয়রানি করতে হীন চক্রান্তে মামলাটি করা হয়েছে। এটি অবিলম্বে প্রত্যাহার করা না হলে ওলামাদের সঙ্গে পরামর্শ করে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, আল্লা শফী (রহ.) জীবিত থাকতে যারা ফায়দা লুটেছে, তারাই এখন রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারে নেমেছে। মন্ত্রীর কাছ থেকে নিজেদের ফায়দা লুটতে মামলাটি করেছে তারা।

হেফাজতের আগের নেতৃত্ব

এদেরকে ‘চিহ্নিত দালাল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফায়দা লুটেরাদের কয়েকজনকে আমরা চিনি, দেশবাসীও চেনে। এখন তাদের নাম বলছি না আমি।

হাটহাজারী মাদ্রাসা আহমদ শফীর অক্সিজেন খুলে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করে মাদ্রাসাটির পরিচালক জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, তখন আহমদ শফীর ব্যক্তিগত সহকারী (খাদেম) মাওলানা শফিউল আলমসহ মাদ্রাসার বেশ কয়েকজন শিক্ষক সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় উপস্থিত থাকা মাওলানা শফিউল আলম বলেন, আহমদ শফী সাহেবের অক্সিজেন খোলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। এটি ডাহা মিথ্যা অভিযোগ।

হেফাজতে ইসলামের সংবাদ সম্মেলন

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষক ও হেফাজত নেতা নুরুল আবছার আযহারী। মাওলানা মহিবুল্লাহ বাবুনগরী, মাওলানা তাজুল ইসলাম, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির, মাওলানা মীর ইদ্রিস, মাওলানা আহসান উল্লাহ ও মাওলানা জাকারিয়া নোমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সেখানে আরো উপস্থিত ছিলেন হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা ইয়াহিয়া, মাওলানা ওমর, মাওলানা ফোরকান, মাওলানা শুয়াইব, মাওলানা আহমদ দিদার, মাওলানা আনোয়ার শাহ, মাওলানা আবদুর সবুর প্রমুখ।

২০১৩ সালে শাপলা চত্বরের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে হেফাজতে ইসলাম। শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মাদ্রাসা ও হেফাজতের নেতৃত্ব নিয়ে তা প্রকাশ্যে আসে।

বাবুনগরী ও আনাস মাদানি

একভাগে আছেন সর্বশেষ মাদ্রাসা ও হেফাজতের নেতৃত্ব থেকে ছিটকে পড়া আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানি। অন্যভাগে রয়েছেন উভয় ক্ষেত্রে নেতৃত্ব ফিরে পাওয়া আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।

আনাস মাদানির নেতৃত্বাধীন অংশটি বরারবই দাবি করে আসছে, আল্লামা শফীর মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না, তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ অভিযোগে গত ১৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এ নালিশি মামলাটি দায়ের করেন শফীর শ্যালক মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন। এটি আমলে নিয়ে তদন্তে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন আদালত।

আল্লাম মামুনুল হক

প্রধান আসামি করা হয়েছে- সম্প্রতি ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্য দিয়ে তোপের মুখে পড়া হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হককে। এ ছাড়া আরো ৩৫ জনকে আসামি করা হয়েছে মামলাটিতে।

তবে হেফাজত আমির বাবুনগরীসহ বর্তমান নেতৃত্ব দাবি করে আসছে, আল্লামা শফী আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন। যখন বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ নিয়ে কোনো গাফিলতি করা হয়নি।