ভাস্কর্য ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে ‘সমঝোতায়’ হেফাজত?

ভাস্কর্য-মূর্তি ইস্যু ও নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে বেশ চাপে রয়েছে দেশের অন্যতম প্রভাবশালী অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। চলতি মাসে সংগঠনটির নেতারা কর্মসূচি দেয়ার কথা জানালেও এখন পর্যন্ত তা আসেনি।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের লোগো

উপরন্তু হেফাজতের সাবেক আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যু নিয়ে দায়ের করা মামলার বিষয়ে আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলন করা হয়। চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসা ও হেফাজতের যৌথ আয়োজনে এটি করা হলেও তাতে ভাস্কর্য-মূর্তি ইস্যু নিয়ে একটি কথাও আসেনি।

এ সময় আহমদ শফীর মৃত্যুকে ‘স্বাভাবিক’ আখ্যায়িত করে হত্যা মামলা দায়েরকে ‘রাজনৈতিক চক্রান্ত’ বলে উল্লেখ করেন হেফাজত আমীর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। সংবাদ সম্মেলনে মাদ্রাসাটি অস্থিতিশীল করতে ‘অতীতের ফায়দা লুটেরারা নতুন সুবিধা নিতে অপচেষ্টা’ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়।

এরপর ডয়চে ভেলের খবরে প্রশ্ন তোলা হয়, হেফাজতে ইসলাম মূর্তি ইস্যুতে পিছু হটছে নাকি সরকারের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে? এর উত্তর যা-ই হোক না কেন, সংগঠনটির এবার নতুন কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে না নামার বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। 

হাটহাজারীতে হেফাজতের সংবাদ সম্মেলন

জার্মান এ গণমাধ্যমটি বলছে, আন্দোলনের বদলে হেফাজত এখন মামলা নিয়েই বেশি ভাবছে। এ কারণে ভাস্কর্য-মূর্তি ইস্যুতে সোচ্চার বাবুনগরী সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে কথা বলেননি, সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও কিছু বলা হয়নি।

বরং হেফাজত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা আহমদ শফীর ‘হত্যা মামলা’সহ অন্যান্য মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে। অন্যথায় দেশের ওলামাদের সঙ্গে পরামর্শ করে ‘কঠোর পদক্ষেপ’ নেয়ার হুমকি দেয়া হয়।

অবশ্য এ বিষয়ে জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়েজি বলেন, আল্লামা শফীর মৃত্যু ও মামলা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করায় যৌক্তিকভাবেই অন্য কোনো বিষয়ে কোনো কথা বলা হয়নি।

কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর

ভাস্কর্য-মূর্তি ইস্যুতে সংগঠনটি নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসেনি উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, সরকারের কাছে এগুলো অপসারণের দাবি করানো হয়েছে। এখন তা সরানোর দায়িত্ব সরকারের, আমাদের নয়।

এদিকে, ইস্যুটি নিয়ে কয়েকদিন আগে হেফাজতের নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন, যা উভয় পক্ষই ‘সফল’ বা ‘ফলপ্রসূ’ বলে বর্ণনা করে। তবে সংগঠনটির নেতারা বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করার কথা বললেও তা এখনো হয়নি।

তবে ওই বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, আলেমদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে, প্রধানমন্ত্রী আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। হেফাজত নেতা জাকারিয়া নোমান আজ বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ফলাফল আসতে পারে।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী

সরকারের সঙ্গে হেফাজতের কোনো সমঝোতা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে সরাসরি উত্তর দেননি আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী নেতা ও নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, সমঝোতা করে কেউ জেল থেকে বেরিয়ে ঘরে বসে থাকলে, তা কি সে প্রকাশ করে?

সংগঠনটির আমির মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে এরই মধ্যে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করীমের নামেও আরেকটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়েছে। এসব মামলা তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

আল্লাম বাবুনগরী, মামুনুল হক ও ফয়জুল করিম

বলা হচ্ছে, কুষ্টিয়ায় নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় স্থানীয় ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বাবুনগরী ও মামুনুল হকের কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঘটনাটি ঘটানো হয়। ফলে মামলাটি তদন্ত পর্যায়ে এসে এই দুই নেতাকে আসামির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার আশঙ্কা করা হচ্ছে।