সিইসি: সব অভিযোগ ভিত্তিহীন, অসত্য

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও অসদাচরণের অভিযোগ এনেছেন দেশের বিশিষ্ট ৪২ জন নাগরিক। এ বিষয়ে ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের’ মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য রাষ্ট্রপতি বরাবর আবেদন জানিয়ে গত ১৪ ডিসেম্বর একটি চিঠি দেয়া হয়েছে।

সিইসি নুরুল হুদা

বিশিষ্টজনদের সেসব অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন, অসত্য ও অনভিপ্রেত’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। আজ বৃহস্পতিবার বিকালে ইসি ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।

‘জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কায় বিষয়টি স্পষ্ট করতে সংবাদ সম্মেলনে আসার কথা উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ইসিকে দায়ী করে দেয়া ওই বক্তব্য অনভিপ্রেত ও গ্রহণযোগ্য নয়।

অভিযোগগুলোর ব্যাপারে নিজেদের বক্তব্য জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, প্রশিক্ষণে আর্থিক অনিয়মের সুযোগ নেই। নিয়োগে দুর্নীতির তথ্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন। বিলাসবহুল গাড়ির কথা অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

ইভিএমে ভোট

এ ছাড়া নির্বাচনকে গতিশীল করতে ইভিএম কেনায় দুর্নীতি এবং নির্বাচনে অসদাচরণের অভিযোগ অসত্য দাবি করেন সিইসি। ২০১৮ সালের ভোট নিয়ে বিদেশি কূটনীতিক ও গণমাধ্যম কোনো অভিযোগ করেনি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

নির্বাচনের প্রতি জনগণের আস্থাহীনতার অভিযোগ ভিত্তিহীন উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভোট হচ্ছে, প্রতি পদে ২-৮ জন প্রার্থী হচ্ছেন। ৬০-৮০ শতাংশ ভোট পড়ছে।

এ সময় নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী উপস্থিত থাকলেও ছিলেন না নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা

এর আগে গত রোববার চিঠিটি ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ উল্লেখ করে কোনো অভিযোগেরই ভিত্তি নেই বলে দাবি করেন ইসি শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। তবে বিশিষ্টজনদের উদ্দেশ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশার শাহাদাত বলেন, যারা এ কাজ করেছেন, তারাই তা বলতে পারবেন।

ইসিতে দায়িত্ব পালন করা সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, একই সঙ্গে রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ দেয়া, ইসিকে অভিযুক্ত করা, ইসির করণীয় বা দণ্ডের বিষয়টিও এক অর্থে বলে দিয়েছেন তারা। এটি শিষ্টাচারবর্জিত কিনা বা কতটা বিবেচনাপ্রসূত, তা বিবেচনার ভার সাংবাদিকদের ওপর ছেড়ে দিলাম।

রাষ্ট্রপতি বরাবর পাঠানো ৪২ বিশিষ্ট নাগরিকের চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই বিভিন্ন ধরনের গুরুতর অসদাচরণে লিপ্ত হয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা। তারা গুরুতর আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়মে (অভিশংসনযোগ্য অপরাধ) যুক্ত হয়েছেন, বিভিন্নভাবে আইন ও বিধিমালা লঙ্ঘনের মাধ্যমে গুরুতর অসদাচরণ করে যাচ্ছেন।

৪২ বিশিষ্টজনের কয়েকজন

আবেদনে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত ইসির আর্থিক অনিয়মের সংবাদ, ইভিএম কেনা ও ব্যবহারে অনিয়ম, একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে অসদাচরণ ও অনিয়ম, কর্মচারী নিয়োগে সিইসির বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, নিয়ম ভেঙে ৩ জন ইসির তিনটি গাড়ি ব্যবহারসহ নানা ধরনের অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, এসব অনিয়ম, দুর্নীতি ও অসদাচরণের তদন্ত হওয়া উচিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি ইসিকে অপসারণ করবেন বলে আশা বিশিষ্টজনদের।

অভিযোগগুলো আইনানুগ ও সংবিধান মেনে করা হয়েছে উল্লেখ করে সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এর প্রেক্ষিতে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ানো উচিত ইসির।

এর আগে প্রতিটি ইসি কমবেশি বিতর্কিত হলেও সরাসরি আর্থিক অনিয়মে জড়িত থাকাটা দেখা যায়নি, বলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তাই এসব অভিযোগ রাষ্ট্রপতির পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কাছেও পাঠানোর কথা বলেন তিনি।