টার্গেট ২০২৩: স্বর্ণ-গ্যাস ও অস্ত্রে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে এরদোয়ানের তুরস্ক
- Details
- by অরণ্য সৈকত
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কার্যত সমাপ্তি ঘটে ১৯২৩ সালের ২৪ জুলাই, সুইজারল্যান্ডের লুজানে স্বাক্ষরিত ‘লুজান চুক্তি’র মাধ্যমে। একপক্ষে ছিলো অটোমান সাম্রাজ্যের প্রতিনিধিত্বকারী তুরস্ক। অন্যপক্ষে ছিল ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি, জাপান, গ্রিস, রোমানিয়া ও যুগোস্লাভিয়া। আধুনিক তুরস্ককে দমিয়ে রাখার ওই চুক্তি শেষ হচ্ছে ১০০ বছর পর, ২০২৩ সালে।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ও তার স্ত্রী
এই সময়ের মধ্যে বিশ্ব দরবারে আবারো ঘুরে দাঁড়াতে মহাকল্পপরিকল্পনা ও কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তুরস্ক। সেসব লক্ষ্য অর্জনে অর্থনীতি, কূটনীতি, সমরনীতিসহ অন্যান্য খাত ঢেলে সাজিয়েছে দেশটি। এসবের কেন্দ্রে রয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিস্যেপ তাইয়্যোপ এরদোয়ান।
তুর্কিদের এখন যে একের পর অগ্রযাত্রার খবর আসছে, তার পেছনে রয়েছে এরদোয়ানের নীতি ও কৌশল। সাম্প্রতিক সময়ে তার দেশের অর্জনগুলো দৃশ্যমান হচ্ছে এবং গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিচ্ছে।
এ ক্ষেত্রে তুরস্ক সবচেয়ে বড় সাফল্যের দেখা পেয়েছে তিনটি খাতে। তা হলো- জ্বালানির অনুসন্ধান ও প্রাকৃতিক সম্পদ আবিষ্কার, সমরাস্ত্র শিল্পের উন্নতি ও অস্ত্র বিক্রির রেকর্ড এবং পুরো অঞ্চলে প্রভাববলয় বৃদ্ধি ও সামরিক উপস্থিতি।
অটোম্যান সাম্রাজ্য
এখানে উল্লেখ্য, লুজান চুক্তিতে তুরস্কের পুনরুত্থান ঠেকাতে অপমান ও স্বার্থহানিকর বিভিন্ন শর্ত চাপিয়ে দেয়া হয়। এর মধ্যে অটোম্যান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশকে স্বাধীন করে দেয়া, আরব প্রদেশগুলোর ওপর কর্তৃত্ব ত্যাগ, সাইপ্রাস ও আর্মেনিয়ার স্বত্ব ছাড়া, ফসফরাস প্রণালীতে জাহাজ চলাচলের ফি না নেয়া এবং ভূখণ্ডে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ ও সাগরে জ্বালানি অনুন্ধান থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করার মতো বিষয় রয়েছে।
চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই জ্বালানি অনুসন্ধান, সমরাস্ত্র নির্মাণ ও বিক্রি এবং আঞ্চলিক প্রভাব সৃষ্টিতে মাইলফলক অর্জন করেছে তুরস্ক। যা আগামী ২০২৩ সালে আরো অনেকগুণ বিস্তৃত হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এই সময়ের মধ্যে শীর্ষ ১০ বিশ্ব অর্থনীতির একটি হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে আঙ্কারা। এর অংশ হিসেবে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন দুই ট্রিলিয়ন ডলার, বার্ষিক রপ্তানি ৫০০ বিলিয়ন ডলার এবং বৈদেশিক বাণিজ্য এক ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা আছে।
তুর্কি গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানের ফলাফল ঘোষণা করছেন এরদোয়ান
এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অনেক দূর এগিয়েছে এরদোয়ানের তুরস্ক। এরইমধ্যে দেশটির মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলের সোগাট শহরে একটি স্বর্ণের মজুদ আবিষ্কার করা হয়েছে। যাতে সাড়ে ৩ মিলিয়ন আউন্স বা ৯৯ টন স্বর্ণের মজুদ রয়েছে। এর বাজার মূল্য ধরা হয়েছে ৬০০ কোটি ডলার।
কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে আনাদলু জানায়, আগামী দুই বছরের মধ্যে স্বর্ণ উত্তোলন শুরু করা হবে, যাতে তুর্কি অর্থনীতি বেশ চাঙ্গা হবে। সে লক্ষণ ইতোমধ্যেই স্পষ্ট হয়েছে, স্বর্ণ প্রাপ্তির খবরে সংশ্লিষ্ট গুব্রেটাস কোম্পানির শেয়ার ১০ শতাংশ বাড়ার মধ্য দিয়ে।
এর আগে সেপ্টেম্বর মাসে তুরস্কের জ্বালানি ও প্রাকৃতিক সম্পদ বিষয়ক মন্ত্রী ফাতিন ডনমেজ বলেন, গত বছর ৩৮ টন স্বর্ণ উৎপাদন করে রেকর্ড করেছে তুরস্ক। আগামী পাঁচ বছর আমাদের টার্গেট হলো- প্রতি বছর ১০০ টন স্বর্ণ উৎপাদন করা।
তুরস্কে ৯৯ টন স্বর্ণ আবিষ্কার
এদিকে, আলজাজিরা জানায়, কৃষ্ণ সাগরে এখন পর্যন্ত তুরস্কের আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রের মজুদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০৫ বিলিয়ন ঘনমিটারে। গত আগস্টে ৩২০ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করা হয়, যা দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক সম্পদ আবিষ্কার এবং চলমান ২০২০ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অনুসন্ধান। এরপর নতুন আরো ৮৫ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার হয়।
তুর্কি সরকার বলছে, এসব ক্ষেত্র থেকে ২০২২ সাল থেকেই বার্ষিক ১৫ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস প্রবাহের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এটি সম্ভব হলে জ্বালানি আমদানির ক্ষেত্রে রাশিয়া, ইরান ও আজারবাইজানের ওপর দেশটির নির্ভরতা অনেকাংশে কমবে। গত বছর এসব দেশ থেকে ৪১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি জ্বালানি আমদানি করে আঙ্কারা।
অন্যদিকে, তুরস্কের প্রেসিডেন্সি অফ ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান ইসমাইল দেমির বরাত দিয়ে আনাদলু জানায়, সামরিক ড্রোন, মনুষ্যবিহীন হেলিকপ্টার আবিষ্কার ও উন্নয়নে তাক লাগানো সাফল্য পেয়েছে আঙ্কারা।
তুরস্কের ড্রোন
এ ছাড়া নিজস্ব ট্যাঙ্ক, হালকা সাঁজোয়া যান, মনুষ্যবিহীন বিমানবাহী যান ও মিসাইলের ইঞ্জিনের উন্নয়ন এবং পাওয়ার ট্রান্সমিশন সিস্টেমের উন্নয়নে কাজ করছে দেশটি। ভবিষ্যতে যুদ্ধের প্রযুক্তি যেমন- ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক (বৈদ্যুতিক চৌম্বকীয়) ও লেজার সিস্টেমেও দেশটি মনোনিবেশ করেছে বলে জানান তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পের প্রধান।
বলা হচ্ছে, তুর্কি ড্রোনসহ বিভিন্ন সমরাস্ত্র সম্প্রতি নাগর্নো-কারাবাখ যুদ্ধে আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে আজারবাইজানকে বিজয় এনে দিয়েছে। তুর্কি ড্রোন ও অস্ত্রে দেশটি সমর্থিত লিবিয়ার জাতীয় সরকার বিদ্রোহী গোষ্ঠী খলিফা হাফতারের বাহিনীকে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়। সিরিয়া ও ইরাকেও ড্রোন দিয়ে হামলার পাশাপাশি সামরিক অভিযান চালিয়ে সফলতা পেয়েছে আঙ্কারা।
সোমালিয়া থেকে সুদান, কাতার থেকে আজারবাইজান, লিবিয়া থেকে পাকিস্তান- সর্বত্রই তুর্কি প্রভাব ক্রমবর্ধনাভাবে বেড়েই চলছে। এই বিশাল অঞ্চলের মধ্যে প্রায় ডজনখানেক দেশ ও অঞ্চলে তুর্কি বাহিনীর উপস্থিতি, বেশ কয়েকটি দেশে সামরিক ঘাঁটিও রয়েছে আঙ্কারার। এই ব্যয় নির্বাহের পাশাপাশি স্বর্ণ, গ্যাস ও অস্ত্র বিক্রির অর্থ যে দেশটির অর্থনীতিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
ভূ-মধ্যসাগরে গ্যাস অনুন্ধান
তুরস্কের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ফ্রান্সের পদে পদে হোঁচট খাওয়া- তাই প্রমাণ করে। পূর্ব ভূমধ্যসাগরে তেল গ্যাস অনুসন্ধানকে কেন্দ্র করে গ্রিসের সঙ্গে সৃষ্ট উত্তেজনার মধ্যেও সেখানে তুর্কি অনুসন্ধানী জাহাজ পাঠানোও তার একটি প্রমাণ। এসব নিয়ে তুরস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। অন্যদিকে, রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এস-৪০০ কেনায় মার্কিন নিষেধাজ্ঞার খড়গে কিংবা সৌদি জোটের তুর্কিবিরোধী জোট গড়ে তোলার চেষ্টায়ও থেমে থাকছে না এরদোয়ান সরকার।
এ জন্যই হয়তো উসমানীয় খিলাফত বা অটোম্যান সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধারে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ আসছে। এটি সত্য হোক বা না হোক, তিনি যে পুরো আরব বিশ্বের মুকুটবিহীন সুলতানে পরিণত হয়েছেন, তা কিন্তু প্রায়ই উঠে আসছে পশ্চিমাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.