দুর্নীতির মামলা: গৃহবন্দি নয়, কারাগারে থাকতে হবে নাজিব রাজাককে

মালয়েশিয়ার একটি আদালত দুর্নীতির মামলায় কারাবন্দি দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের বাকি সাজা কারাগারের বদলে গৃহবন্দি হয়ে ভোগ করার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। আদালত বলেছেন, এ বিষয়ে যে রাজকীয় আদেশের কথা বলা হচ্ছে, তা যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে জারি করা হয়নি। ফলে আদেশটি বৈধ নয়।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দেওয়া এই রায় নাজিবের জন্য আরেকটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। আলোচিত ‘১ এমডিবি আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার দায়ে ২০২২ সালের আগস্ট থেকে কারাবন্দি নাজিব রাজাক। তিনি দাবি করেছিলেন, গত বছর তৎকালীন রাজার দেওয়া ক্ষমার অংশ হিসেবে একটি রাজকীয় আদেশ জারি হয়েছিল, যার মাধ্যমে তিনি বাড়িতে থেকে সাজা ভোগের অধিকার পান। সেই আদেশ কার্যকর করার জন্য মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করতে তিনি আদালতে আবেদন করেন।

কুয়ালালামপুর হাইকোর্টের বিচারক অ্যালিস লোক বলেন, আদেশটির অস্তিত্ব নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। তবে সাবেক রাজা এই আদেশ দেওয়ার আগে দেশের পারডনস বোর্ডের সঙ্গে পরামর্শ করেননি। রায়ে তিনি লেখেন, ‘পারডনস বোর্ডকে পাশ কাটিয়ে রাজা এককভাবে গৃহবন্দির অনুমতি দিতে পারেন না। মালয়েশিয়ার আইনে গৃহবন্দির কোনো নির্দিষ্ট বিধান না থাকায় এ ধরনের আদেশ কার্যকরযোগ্য নয়।’

রায় ঘোষণার সময় নাজিবকে খুব একটা প্রতিক্রিয়া দেখাতে দেখা যায়নি। বিচারক এজলাস ত্যাগের পর তাঁর আইনজীবী রায়কে ‘অপ্রত্যাশিত ও হতবাক করার মতো’ বললে মুচকি হাসেন নাজিব। তার আইনজীবী মুহাম্মদ শাফি আবদুল্লাহ দ্য স্টার পত্রিকাকে জানান, এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। নাজিব বরাবরই দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। তাঁর দাবি, মালয়েশীয় অর্থলগ্নিকারী লো তায়েক ঝো (জো লো) তাঁকে প্রতারণা করেছেন। কেলেঙ্কারির হোতা হিসেবে পরিচিত জো লো এখনো পলাতক।

নাজিবের বিচারের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য চার্লস সান্তিয়াগো। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই রায়কে স্বাগত জানান। সান্তিয়াগো লেখেন, ‘বিচার বিভাগের ওপর বিশ্বাস ফিরে এসেছে।’

গত বছর মালয়েশিয়ার পারডনস বোর্ড নাজিবের ১২ বছরের কারাদণ্ড কমিয়ে ছয় বছর করে। একই সঙ্গে তাঁর ওপর আরোপিত জরিমানা ২১ কোটি রিঙ্গিত থেকে কমিয়ে ৫ কোটিতে নামিয়ে আনা হয়। পারডনস বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নাজিবের মুক্তির সম্ভাব্য তারিখ ২০২৮ সালের ২৩ আগস্ট।

এদিকে আগামী শুক্রবার সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী জানতে পারবেন, ‘১ এমডিবি কেলেঙ্কারি’র সঙ্গে সরাসরি যুক্ত আরেকটি দুর্নীতি মামলায় তিনি খালাস পাবেন নাকি দোষী সাব্যস্ত হন। এই মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ‘১ এমডিবি তহবিল’ থেকে ৭০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ নিজের ব্যাংক হিসাবে নেওয়ার চারটি অভিযোগ এবং একই অর্থের সঙ্গে জড়িত ২১টি অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রতিটি অভিযোগে তাঁর সর্বোচ্চ ২০ বছর এবং অর্থপাচারের প্রতিটি অভিযোগে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পরপরই নাজিব ‘১ এমডিবি উন্নয়ন তহবিল’ প্রতিষ্ঠা করেন। তদন্তকারীদের অভিযোগ, অন্তত ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার এই তহবিল থেকে আত্মসাৎ করা হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে অর্থ পাচার করা হয়। এই অর্থ ব্যবহার করা হয় হলিউড চলচ্চিত্র নির্মাণ ও বিলাসবহুল জীবনযাপনে। যার মধ্যে ছিল হোটেল, বিলাসবহুল ইয়ট, শিল্পকর্ম ও গহনা কেনা।

দণ্ডিত হলেও নাজিব এখনো তাঁর দল ইউনাইটেড মালয় ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের (উমনো) ভেতরে প্রভাব ধরে রেখেছেন। দলটি বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের নেতৃত্বাধীন ঐক্য সরকারের অংশীদার, যারা ২০২২ সালের নির্বাচনের পর ক্ষমতায় আসে।