প্রধানমন্ত্রী: উন্নত পুলিশ বাহিনী গড়তেই ‘বড় বাজেট’

বাংলাদেশ পুলিশকে উন্নত দেশের পুলিশের সমপর্যায়ে উন্নীত করতেই পুলিশের বাজেট ও জনবল ব্যাপক হারে বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত হয়ে আজ রোববার এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে পুলিশের মোট বাজেট ছিল ৩ হাজার কোটি টাকা। বর্তমান (২০২০-২১) অর্থবছরে পুলিশের বাজেট বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকা।

৩৭তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের এক বছর মেয়াদী মৌলিক প্রশিক্ষণ উপলক্ষে এই সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংযের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি ভার্চুয়ালি প্যারেড পরিদর্শন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন। সেইসঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী সহকারী পুলিশ সুপারদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে গত ১২ বছরে ১ হাজার ৫০১টি ক্যাডার পদসহ ৮২ হাজার ২৩১টি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান জনবল ২ লাখ ১২ হাজার ৮৩৬ জন। বাংলাদেশ পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে নতুন ইউনিট গঠন অব্যাহত আছে, যাতে সারাদেশে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও দমনে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

তিনি বলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ-পুলিশ, স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও অন্যান্য বিভিন্ন বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিট গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া এয়ারপোর্ট আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, নারী আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এবং কক্সবাজার এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতে দুটি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর বাইরে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) এবং পুলিশ এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) গঠন করা হয়েছে।

এ ছাড়া অপরাধী শনাক্তকরণ এবং মামলা তদন্তে প্রকৃত তথ্য উদঘাটনের জন্য বাংলাদেশ পুলিশের সাইবার পুলিশ সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। সেইসঙ্গে ডিএনএ ল্যাব, এএফপিআইএস এবং আধুনিক রাসায়নিক পরীক্ষাগার স্থাপন করা হয়েছে।

সরকার প্রধান জানান, বাংলাদেশ পুলিশে সংযোজিত হতে যাচ্ছে সর্বাধুনিক অপারেশনাল গিয়ার ‘ট্যাকটিক্যাল বেল্ট’, যাতে হ্যান্ড ফ্রি রেখে অধিকতর দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারেন অপারেশনাল ডিউটিতে থাকা অফিসার ও ফোর্সরা।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী পুলিশ সদস্যদের কল্যাণে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। বলেন, আমাদের সরকারই পুলিশ সদস্যদের জন্য পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের ভিত্তি গঠন করে দিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে পুলিশের জন্য কার্যক্রম শুরু করেছে কমিউনিটি ব্যাংক, বাংলাদেশ। এ ছাড়া বাংলাদেশ পুলিশ পরিচালিত দেশের ৮টি বিভাগীয় শহরে আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এ ছাড়া বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিকে সেন্টার অফ এক্সিলেন্স হিসেবে গড়ে তুলতে সাংগঠনিক কাঠামো সংস্কার, জনবল বৃদ্ধি, অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি এবং লজিস্টিকস সরবরাহ করার পাশাপাশি আরো বিভিন্ন ধরনের যুযোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। দেশীয় প্রশিক্ষণের পাশাপাশি পুলিশের সব পর্যায়ের সদস্যদের জন্য বৈদেশিক প্রশিক্ষণ এবং উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রকে আমরা বিস্তৃত করেছি, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

সরকার প্রধান নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের গৌরবময় ইতিহাসের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আজকের নবীন কর্মকর্তারাও দেশের ও মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন বলে আমি আশা করি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। অন্যদিকে, স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা প্রমুখ।