মিয়ানমারে সামরিক বিদ্রোহ: কী বলছে বিশ্ব

মিয়ানমারের গণতন্ত্র ১০ বছরও টিকলো না। ১০ বছরেরও কম সময় আগে দেশটির তৎকালীণ সামরিক সরকার গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলো। এই ঘটনার এক দশক হওয়ার আগে আরো একবার ক্ষমতা দখল করে নিয়েছে সেনা বাহিনী। সোমবার দেশটির সরকারের উপদেষ্টা অং সান সু চিকে আটক করেছে সেনারা। দেশটির প্রেসিডেন্ট এবং ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরও আটক করা হয়েছে।

মিলিটারি বলছে গত জাতীয় নির্বাচনে কারচুপির কারণে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গত নির্বাচনটি বিপুল ব্যবধানে জিতে নেয় সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)।

মিয়ানমারের আকস্মিক সামরিক বিদ্রোহে নড়েচড়ে বসেছে সারা বিশ্ব। জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থা এবং বিভিন্ন দেশ তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে। মিয়ানমারের পক্ষ থেকেও মন্তব্য করা হয়েছে।

মিয়ানমার যা বলছে

থান্ট মিয়েন্ট-ইউ, মিয়ানমারের একজন লেখক ও ইতিহাসবিদ, তিনি বলেন, একেবারে ভিন্ন একটি ভবিষ্যতের দরজা খুলে গেলো।

তিনি বলেন, “আমার মনে হয় মিয়ানমারের ইতিহাস বদলে যাবে। দেশটি নানা রকম বিভাজনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলো। লাখ লাখ লোকের কাছে খাবার কিছু নেই।”

অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়ার বিদেশ বিষয়ক মন্ত্রী ম্যারিস পেইনে এই ঘটনায় গভীর সংশয় ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা মিয়ানমারের সেনাকে তাদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোর আহবান জানাচ্ছি। এবং উদ্ভুত পরিস্থিতি আইন অনুসারে সমাধানের আহবান করছি।” অস্ট্রেলিয়া আটককৃতদের দ্রুত ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের একজন মুখপাত্র মিয়ানমারের ঘটনায় সংশয় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, মিয়ানমারের ঘটনায় ওয়াশিংটন সতর্ক। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, “সাম্প্রতিক নির্বাচনে যে ফল এসেছে তা বদলানোর জন্য যে কোনো পদক্ষেপের বিরোধিতা করে যুক্তরাষ্ট্র। যারা এ ধরনের কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

জাতিসংঘ

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গোতেরেস এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “মিয়ানমারের ঘটনায় এবং নাগরিক নেতাদের গ্রেপ্তারে গভীরভাবে নিন্দা জানাচ্ছি। মিয়ানমারের নতুন মৌসুমের সংসদ শুরু হওয়ার আগে এ ধরনের ঘটনা বিপজ্জনক।”

সিঙ্গাপুর

সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ঘটনায় মিয়ানমারকে সংযম দেখানোর আহবান করেছে। বলা হয়েছে, “সিঙ্গাপুর মিয়ানমারের সাম্প্রতিক ঘটনায় গভীর সংশয় ও দুঃখ প্রকাশ করছে। আমরা গভীরভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি এবং আশা করছি সেখানে সব পক্ষ সংযম দেখাবে।”

হিউম্যান রাইট ওয়াচ

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইট ওয়াচের এশিয়া পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস মিয়ানামারের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের দ্রুত এবং নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন।

তিনি বলেন, “দেশটির সেনাবাহিনীর পদক্ষেপ এটা প্রমাণ করে যে সে দেশের জনগণ নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছে, তা সেনারা সম্মান করে না। আমরা বিশেষভাবে তাদের নিয়ে চিন্তিত, যাদেরকে অবৈধভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর এটা মনে রাখা উচিত যে, এই ঘটনার জন্য তাদের দায় নিতে হবে।”