আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে তিনি

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) সরকারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি ও প্রেসিডেন্টসহ শীর্ষ নেতাদের আটক করেছে। এর পর পরই আগামী এক বছরের জন্য দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করেছে বার্মিজ আর্মি। আর ক্ষমতায় বসেছেন দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিং অং হ্লাইং।

জেনারেল মিং অং হ্লাইং

আজ সোমবার সকালে হওয়া এ সেনা অভ্যুত্থানের পর পরই বিশ্ব রাজনীতির আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন মিয়ানমারের নতুন এই সামরিক শাসক। তাকে নিয়ে সর্বত্র শুরু হয়েছে আলোচনা-বিশ্লেষণ।

কে এই মিং অং হ্লাইং? চলুন তার সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক

মিং অং হ্লাইং ১৯৫৬ সালের ৩ জুলাই তৎকালীন তাভয় ও বর্তমান মিয়ানমারের দাউই অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা থাং হ্লেইং একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন।

রেঙ্গুন আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটিতে আইন বিষয়ে পড়াশোনা শেষে ১৯৭৪ সালে তিনবারের প্রচেষ্টায় ডিফেন্স সার্ভিসেস একাডেমিতে যোগ দেন মিং অং হ্লাইং। তিনি খুবই স্বল্পভাষী ও গম্ভীর ব্যক্তিত্বের অধিকারী। এ কারণে সহপাঠীরা তাকে এড়িয়ে চলতো।

স্নাতক সম্পন্নের পর মিন অং হ্লাইং মোন রাজ্যে কমান্ডার পদে অধিষ্ঠিত হন। ২০০২ সালে তিনি পূর্বাঞ্চলের শান রাজ্যে ট্রায়াঙ্গল রিজিওন কমান্ডের কমান্ডার হিসেবে পদোন্নতি পান। ২০০৮- ২০০৯ পর্যন্ত তিনি মেজর জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০০৯ এর শেষ দিকে পদোন্নতি পেয়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হন। ২০১১ এর প্রথম দিকে চার তারকা জেনারেল এবং ২০১২ এর প্রথম দিকে উপ-সিনিয়র জেনারেল হন। সবশেষ ২০১৩ সালে পাঁচ তারকাপ্রাপ্ত সিনিয়র জেনারেল পদে পদোন্নতি পান।

এই সামরিক শাসক মিয়ানমারের জাতীয় প্রতিরক্ষা ও সুরক্ষা কাউন্সিলেরও (এনডিএসসি) সদস্য এবং এর আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম চিফ অব স্টাফ ছিলেন। তার পদমর্যাদা ভাইস প্রেসিডেন্টের সমান।

যেভাবে তিনি মিয়ানমারের ক্ষমতায়

২০০৯ সালে কোকাঙে বিদ্রোহী মিয়ানমার ন্যাশনালিটিস ডেমোক্র্যাটিক আলিয়ঁস আর্মির বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনায় তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এর পরই তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। ২০১০ সালের জুনে মিন অং হ্লাইং সেনা-নৌ ও বিমানবাহিনীর জয়েন্ট চিফ অফ স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পান। পরবর্তী বছর ২০১১ সালের ৩০ মার্চ সশস্ত্র বাহিনীর নতুন কমান্ডার-ইন-চিফ নিযুক্ত হন।

অং সান সু চির সঙ্গে জেনারেল মিং অং হ্লাইং, পুরনো ছবি

ওই বছরই চীনা সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি তৈরির ক্ষেত্রে আলোচনায় তিনি নেতৃত্ব দেন। কাচিন সংঘাতের বিষয়ে চীনের তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট শি- জিনপিংয়ের সঙ্গেও আলোচনা করেন। ২০১১ সালের নভেম্বরে দ্য ইরাবতী এক প্রতিবেদনে এ খবর প্রকাশ করেছিল।

২০১২ সালের ২৭ মার্চ নাইপিদোতে এক বক্তৃতার সময় তিনি জাতীয় রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর অব্যাহত ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন এবং পরের মাসের ৩ তারিখেই তাকে ভাইস-সিনিয়র জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দেয় মিয়ানমার সরকার। যা দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ এবং ২০১৩ সালের মার্চে তিনি সিনিয়র জেনারেল পদে পদোন্নতি পান।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব বদলের কথা ছিল। কিন্তু সে সময় মিং অং হ্লাইং তার মেয়াদ আরো পাঁচ বছর বাড়িয়ে নেন। তখন থেকেই মূলত নিজেকে একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে শুরু করেন।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কাউন্সিল ইউএনএইচআরসি জানিয়েছে, তার নেতৃত্বাধীন সেনারা মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বেসামরিক নাগরিকদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করে চলেছে। রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধেও বৈষম্য আরোপ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধেরও অভিযোগ আছে।