আপনি পড়ছেন

চীনের স্বায়ত্তশাসিত জিনজিয়ান প্রদেশে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের শেষ করে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে দেশটির কমিউনিস্ট সরকার। তাদের হত্যা-নির্যাতনের পাশাপাশি পুরুষদের দাস বানানো এবং নারীদের ‘পদ্ধতিগত গণধর্ষণ’ করা হচ্ছে।

uyghur muslim persecutionউইঘুর মুসলিম নির্যাতনের চিত্র

ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে আজ বুধবার প্রকাশিত বিবিসির দীর্ঘ এক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। উইঘুর ক্যাম্পের পরিস্থিতি নিয়ে সর্বশেষ ও বিস্তারিত বিবরণের ভিত্তিতে এটি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পুনঃশিক্ষণ’ নামের বন্দিশিবিরে উইঘুর নারীদের ওপর যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতন চালানো হচ্ছে। উইঘুরদের সবাইকে শেষ করে দেয়ার লক্ষ্যে ‘পদ্ধতিগত গণধর্ষণ’ করা হচ্ছে।

জানা যায়, জিনজিয়ানের বিশাল বন্দিশিবিরে ১০ লাখের বেশি উইঘুর মুসলিমকে আটকে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষের পাশাপাশি নারীর সংখ্যাও কম নয়। অত্যন্ত গোপনীয় সেই ব্যবস্থাপনার আড়ালে শিবিরে কী ঘটে, তা খুব একটা প্রকাশ পায় না।

তারপরেও প্রত্যক্ষ সেই অভিজ্ঞতা জানার ‘বিরল ঘটনা’ সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সুবাধে সামনে আসছে। মূলত ওই শিবিরের সাবেক বন্দি ও রক্ষীদের মাধ্যমে ভয়াবহ নির্যাতনের চিত্র জানা যাচ্ছে।

uyghur muslim tursunai ziaudunতুরসুনাই জিয়াউদুন

তাদের একজন তুরসুনাই জিয়াউদুন বন্দিশিবিরে ৯ মাস থাকার পর ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ছাড়া পান। পরে পালিয়ে প্রথমে কাজাখস্তান এবং সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যান তিনি।

জিয়াউদুন বিবিসিকে জানান, ওই শিবিরগুলোতে প্রতিরাতেই নারীরা গণধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হন। দুই থেকে ৭ জন পর্যন্ত পুরুষের দ্বারা অসংখ্যবার ধর্ষিতা হয়েছে অনেক নারী।

তিনি জানান, বন্দিশিবিরে করোনার প্রার্দুভাব না থাকলেও সব সময় মাস্ক পরে থাকেন দায়িত্বরত চীনা পুরুষ কর্মকর্তারা। তারা পুলিশের পোশাকের থেকে ভিন্ন ধরনের স্যুট পরেন সবসময়।

ওই পুরুষ কর্মকর্তারা মধ্যরাতে বন্দিশিবিরের সেলে এসে নারীদের বাছাই করে এক ধরনের ‘বিশেষ’ কক্ষে নিয়ে যান। নজরদারির ক্যামেরা না থাকা ওই কক্ষে তাদের পালাক্রমে ধর্ষণ করেন মাস্ক পরা চীনা পুরুষেরা।

prisoner camp in xinjiangইউঘুর বন্দি শিবির

একাধিকবার রাতে সেল থেকে বিশেষ ওই কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়েছে জিয়াউদুনকে। সেখানে তার সঙ্গে যা ঘটেছে, তা কখনো ভোলার নয় বলে মনে করেন তিনি।

জীবনের সবচেয়ে ‘বড় সেই ক্ষতের’ বিষয়ে বলতে চান না উল্লেখ করে এই নারী বলেন, শিবির থেকে ছাড়া পেয়ে বেঁচে গেছেন তিনি। তবে এই পদ্ধতিগত ধর্ষণের কারণে তিনি আসলে এখন ‘মৃত’, পুরোপুরি শেষ হয়ে গেছেন।

চীনা কর্তৃপক্ষ ‘পুনঃশিক্ষণ’ নামের বন্দিশিবির থেকে অনেককে ছেড়ে দেয়ার কথা জানাচ্ছে। এই ছাড়াকে ‘আসলে শেষ করে দিয়ে ছাড়া’ বলে মনে করেন জিয়াউদুন। তার মতে, চীনা কর্তৃপক্ষ উইঘুরদের সবাইকে শেষ করে দেয়ার লক্ষ্যে এমনটি করছে।

এর আগে আল জাজিরার কাছে বন্দিশিবিরে মুসলিমদের ভয়াবহ পরিস্থিতির লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেলেন ডাক্তার ও শিক্ষাবিদ সাইরাগুল সাউতবে। ওই ক্যাম্পে দুই বছর কাটানো এই নারী দুই সন্তানের জননী।

uyghur mapউইঘুরের মানচিত্র

সাইরাগুলের সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে শিবিরে নারী বন্দিদের মারধর, যৌন নির্যাতন, জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ এবং ধর্মান্তরসহ নির্যাতনের ভয়াবহ, অমানবিক ও সহিংস চিত্র।

বন্দিশিবিরের সেই নিষ্ঠুরতার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় সুইডেনে বসবাস করা সাইরাগুল সাউতবেকে। এসব নিয়ে বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে একটি বই লিখেছেন তিনি, যা সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে।

দীর্ঘ প্রতিবেদনে আলজাজিরা জানায়, সাইরাগুলের মতো অন্য বন্দিদের সাক্ষ্য চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, ওই বন্দিশিবিরগুলোতে মুসলিমদের ওপর কতটা কঠোর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে চীন। ধর্মীয় বিশ্বাস ও সংস্কৃতিকে কীভাবে অবমাননা করা হচ্ছে, পাল্টে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

uyghur muslim campউইঘুর মুসলিম নির্যাতন

বলা হচ্ছে, বিশেষভাবে জাতিগত উইঘুর মুসলিমদের টার্গেট করে ২০১৭ সাল থেকে দমন-পীড়ন বাড়ানো হয়েছে। ব্যাপক নজরদারি করার পাশাপাশি ক্যাম্পে গড়ে তোলা হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর নেটওয়ার্ক।

সন্ত্রাস মোকাবেলার নামে ক্যাম্পগুলোতে উইঘুরের মুসলিমদের ওপর ধর্মনিরপেক্ষতা নীতি চাপিয়ে দিয়েছে কমিউনিস্ট চীন সরকার। এ বিষয়ে উইঘুর পণ্ডিত ও জার্মান নৃবিজ্ঞানী আদ্রিয়ান জেনজ বলেন, বিভিন্ন প্রমাণ ও রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে উইঘুরে শূকরের ফার্মের অনুমোদন ও বিস্তৃত করার বিষয়টি উঠে এসেছে।

তবে বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে চীন সরকার। দেশটির দাবি, সন্ত্রাসবিরোধী চেতনা জাগ্রত করতেই এসব শুদ্ধকরণ শিবির তৈরি করা হয়েছে। সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো কোনো ঘটনা ঘটছে না, ধর্মীয় বিশ্বাসেও আঘাত দেয়া হচ্ছে না।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.