বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও হামুদুর রহমান কমিশনের রিপোর্ট
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
এতদিন পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাদেশ হয়ে উঠার পেছনে ভারতকে ঢালাওভাবে দোষারোপ করতো পাকিস্তান। কিন্তু ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধান বিচারপতিসহ মোট তিনজন বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত এক কমিশনের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ভারত নয় বরং নিজেদের সেনাবাহিনীর ভুল, নৈতিক স্খলন এবং দায়িত্বে অবহেলার কারণেই তারা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে হেরে গিয়েছিল। আর এর ফলে সৃষ্টি হয় বাংলাদেশের। নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের পরও আওয়ামী লীগ প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে কেন যুদ্ধের পথ বেছে নিতে হয়েছিল সে বিষয়টিও এ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
যুদ্ধে পরাজয় মেনে চুক্তিতে সই করছেন পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজি, পাশে ভারতীয় জেনারেল অরোরা
১৯৭১ সালে কোন পরিস্থিতিতে ‘কমান্ডাররা আত্মসমর্পণ করেছিলেন এবং তাদের নির্দেশনায় পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্র জমা দিয়ে যুদ্ধের অবসান’ ঘটায় তা সবিস্তারে জানার জন্য ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরেই পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জুলফিকার আলী ভুট্টোর নির্দেশে একটি কমিশন গঠন করা হয়। পাকিস্তানের তৎকালীন বাঙালি বংশোদ্ভূত প্রধান বিচারপতি হামুদুর রহমানকে প্রধান করে গঠিত হয় এ কমিশন। খোদ পাকিস্তানের গঠন করা কমিশনের প্রতিবেদনে দুটি যুদ্ধে পাক সেনাবাহিনীর দুর্বলতা ও অত্যচারের চিত্র ফুটে উঠেছে। দেখা গেছে, তাদের একের পর এক ভুল ও নিষ্পেশনেই আজকের এই বাংলাদেশের জন্ম।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাক বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। এর কয়েকদিন পরই অর্থাৎ ২৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতির নির্দেশে হামুদুর রহমান কমিশন গঠন করা হয়। ১৯৭৪ সালের ২৩ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করে হামুদুর রহমান কমিশন। প্রতিবেদনটি হাতে পাওয়ার পর সেখানে নিজেদের সেনাবাহিনীর ব্যাপক দুর্বলতার প্রমাণ দেখে তা ধ্বংস করতে চেয়েছিল তৎকালীন সরকার। আর তাই প্রতিবেদনটির একটি কপি রেখে বাকিগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়।
প্রতিবেদনটি তৈরি করতে শত শত বিশেষ নথিপত্র এবং সামরিক কার্যক্রম যাচাই-বাছাই করা হয়। এছাড়াও তৎকালীন জেনারেল নিয়াজিসহ তার সঙ্গে আত্মসমর্পণ করেছে- এমন ৩০০ জন প্রত্যক্ষদর্শীকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। অত্যন্ত লজ্জাজনকভাবে ঢাকার কাছে হেরে যাওয়ার ৫০ বছর পরও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানের পৃথক হয়ে যাওয়া এবং বাংলাদেশ সৃষ্টির জন্য ভারতের ওপর দোষারোপ করা হয়।
কিন্তু ইতিহাস জানে, পূর্ব পাকিস্তানের ওপর বর্বোরোচিত নিষ্পেশন ও গণহত্যার জন্য পুরোপুরি পাকিস্তানই দায়ী। প্রধান বিচারপতি হামুদুর রহমান কমিশনের প্রতিবেদনেও এ বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটিতে পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে নৃশংসতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহারের কথা রয়েছে এবং বেসামরিক ও সামরিক নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতার দায়ভার পুরোপুরি পূর্ব পাকিস্তানের সীমাবদ্ধতার ওপর দেওয়া হয়েছে।
কমিশন এসব অপরাধের জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কিছু শীর্ষ কর্মকর্তার কোর্ট-মার্শালসহ কঠোর শাস্তির সুপারিশ করে। তবে পাকিস্তানের কোনো কর্তৃপক্ষই- তা হোক সেনাশাসিত সরকার অথবা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত- অভিযুক্ত সেনাকর্মকর্তাদের শাস্তি দেয়ার উদ্যোগ নেয়নি। বরং প্রতিবেদন হাতে পৌঁছানোর পর রাষ্ট্রপতি জুলফিকার আলি ভুট্টো এর প্রত্যেকটি কপি পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। সৌভাগ্যবশত এই প্রতিবেদনের একটি রেপ্লিকা সংরক্ষিত ছিল। যার সুবাদে পুরো বিশ্ব জানতে পারছে, সে সময় আসলেই কী ঘটেছিল এবং বাংলাদেশ সৃষ্টির পেছনের ঘটনা কী?
পূর্ব পাকিস্তানে পাক মিলিটারিদের হেরে যাওয়ার পেছনে নীতি-নৈতিকতা, রাজনীতি এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতাই দায়ী থাকার একটি পুরো চিত্র ফুটে উঠেছে প্রতিবেদনটিতে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান তার অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে নিয়ে কেন বাংলাদেশ গঠনে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন তারও ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পুরো পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে জয় লাভ করলেও পূর্ব পাকিস্তানকে কেন সশস্ত্র পথ বেছে নেওয়া হলো- এ বিষয়টিও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে হেরে যাওয়ার জন্য সরাসরি পূর্ব পাকিস্তানকে দোষ দেওয়া হয়। হামুদুর রহমান কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘কাঠামো ধ্বংস, ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে রাজনৈতিক শক্তির দখল, অদক্ষতা, দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের বিষয়ে ইচ্ছাকৃত অবহেলা এবং শারীরিক ও মানুষিকভাবে কাপুরুষতাই তাদের শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষমতাকে বিনষ্ট করেছে।’ প্রতিবেদনে পূর্ব পাকিস্তানের কাছে পশ্চিম পাকিস্তানের হেরে যাওয়ার জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীকেই পুরোপুরি দোষারোপ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে সে সময় পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। সেখানে বলা হয়, হুমকি এবং ঘুষ প্রদানের মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনাকে প্রভাবিত করেছিলেন ইয়াহিয়া খান। সেনাসদস্যদের অবাধ্য আচরণ এবং হেরে যাওয়ার জন্য ইয়াহিয়ার গা-ছাড়া মনোভাবকেও দায়ী করা হয়। লেফটেন্যান্ট কমান্ডার গুল হাসান এবং প্রধান কমান্ডারের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। এ ছাড়া মুক্তি বাহিনীর গেরিলাযোদ্ধাদের ভয়ে রণে ভঙ্গ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে প্রধান কমান্ডার মোহম্মদ রহিমের বিরুদ্ধে। লুটপাট, দায়িত্বে অবহেলা এবং শত্রুদের বিরুদ্ধে কঠিন প্রতিরোধ সৃষ্টি করা ছাড়াই আত্মসমর্পণের অভিযোগ তোলা হয়েছে কমান্ডার মোহাম্মদ জামশেদ এবং আবিদ জাহিদের বিরুদ্ধে।
সূত্র: দ্য ইকনোমিক টাইমস
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.