স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ২৬০ কোটি টাকার বাজেট!

লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন বাংলাদেশ হাঁটি হাঁটি পা পা করে ৪৯ বছর অতিক্রম করে ফেলেছে। মাসখানেক পরই ৫০ বছরে পদার্পন করবে। সেই সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ৫০টি জাতীয় পতাকা সম্বলিত একটি র‌্যালি হবে। যা পর্যায়ক্রমে দেশের ৬৪টি জেলা প্রদক্ষিণ করবে। সবশেষে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় ফিরবে এই র‌্যালি। এর মধ্য দিয়ে ওইদিন সুবর্ণজয়ন্তীর বছরব্যাপী এবং মুজিববর্ষের কর্মসূচিও শেষ হবে।

বাংলাদেশ

জানা গেছে, সম্প্রতি সুবর্ণজয়ন্তীর মূল আয়োজক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় বছরব্যাপী কর্মসূচির খসড়া প্রণয়ন করেছে এবং প্রস্তাবিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাজেট ধরা হয়েছে ২৬০ কোটি টাকা।

প্রস্তাবিত কর্মসূচিতে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা এবং সেখানে বিদেশি রাষ্ট্রনায়কদের ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে। বছরব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানগুলোতে ভারত-রাশিয়াসহ বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হবে।

প্রস্তাবিত কর্মসূচিগুলো হলো- সংসদ প্লাজা, হাতিরঝিল এবং অন্যান্য স্থানে রাতে লাইট অ্যান্ড লেজার ও ড্রোন শো আয়োজন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে গণহত্যা বিষয়ক সেমিনার-আলোচনাসভা ও প্রদর্শনীর আয়োজন, মুক্তিযুদ্ধে বীরঙ্গনাসহ সকল মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান নিয়ে দেশব্যাপী ধারাবাহিক আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ উত্তরীয়, টি-শার্ট, ক্যাপ, বীরাঙ্গনাদের শাড়ি বা শাল উপহার দেয়া, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক জাতীয় কুইজ/রচনা/সঙ্গীত/নৃত্য/ চিত্রাঙ্কন ইত্যাদি প্রতিযোগিতা, দেশব্যাপী সুবর্ণজয়ন্তী মেলা, বছরভিত্তিক নতুন প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে মুক্তির উৎসব আয়োজন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ক গ্লোবাল বিজনেস সামিট আয়োজন, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আন্তর্জাতিক পূর্ণদৈর্ঘ্য/স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করা।

কেন্দ্রীয়ভাবে বীরমুক্তিযোদ্ধা মহাসমাবেশের আয়োজন, জেলায় ৫০টি জাতীয় পতাকাবাহী র‌্যালি প্রদর্শনীর দিনে জেলা পর্যায়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ আয়োজন, উপজেলা পর্যায়ে বীরমুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ, সুবর্ণজয়ন্তী সৌধ/মিনার/কলাম নির্মাণ, মুক্তিযুদ্ধ পদক প্রবর্তন, দেশব্যাপী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার স্থাপন, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ হাজার বাসস্থান (বীরনিবাস) নির্মাণ ও হস্তান্তর, বীরে কণ্ঠে বীরগাথা, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতা রেকর্ড ও আর্কাইভকরণ, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য পরিচিতিমূলক ডিজিটাল সনদপত্র ও স্মার্টকার্ড প্রদান, মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য সম্মাননা পাওয়া বিদেশি বন্ধুদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ-প্রচার ও আর্কাইভকরণ, মিত্রবাহিনীর নিহত সদস্যদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণকাজের উদ্বোধন, ভারতের ত্রিপুরায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থলে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ, মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টর হেডকোয়ার্টারে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ, মুজিবনগর থেকে নদিয়া পর্যন্ত প্রস্তাবিত স্বাধীনতা সড়কের বাংলাদেশ অংশের নির্মাণকাজ শুরু করা।

এ ছাড়া সুবর্ণজয়ন্তীর বিশেষ স্মরণিকা প্রকাশ, বঙ্গবন্ধুর জীবনপঞ্জি প্রকাশ, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের অগ্রগতি বিষয়ক গ্রন্থ ও গবেষণামূলক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ, স্বাধীনতা সংগ্রামের দিনপঞ্জি প্রকাশ, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গ্রন্থাগার এবং মুক্তিযুদ্ধ কর্নারে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই বিতরণ, বিশেষ মোবাইল গেমস, ডকুমেন্টারি, টিভিসি ও চলচ্চিত্র নির্মাণ, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্রকলা প্রদর্শনী, সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক টিভি বিজ্ঞাপন, প্রামাণ্যচিত্র ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্র নির্মাণ, দেশের সব সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে সুবর্ণজয়ন্তী কর্নার স্থাপন, জীবিত বিশিষ্ট বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে টক-শো আয়োজন ও বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচার, চারুকলা ইনস্টিটিউটের তত্ত্বাবধানে বিশেষ ভাস্কর্য প্রদর্শনী।

আর সমাপনী অনুষ্ঠান ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের দিন প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে জাঁকজমকপূর্ণ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের আয়োজন, খ্যাতিমান রাষ্ট্রনায়ক, বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, সাহিত্যিক এবং মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য সম্মাননা পাওয়া বিদেশি বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানানো হবে।

এবং সবশেষে ৫০টি জাতীয় পতাকা সম্বলিত র‌্যালি সব জেলা প্রদক্ষিণ শেষে ঢাকার মূল অনুষ্ঠানে আসবে। এরপর বীর মুক্তিযোদ্ধারা নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিদের কাছে পতাকাগুলো তুলে দেবেন। রাতে আমন্ত্রিত অতিথিদের নৈশভোজের আয়োজনে দেশাত্ববোধক সঙ্গীত, নৃত্য, আতশবাজি, আলোকসজ্জা ইত্যাদির মাধ্যমে বছরব্যাপী আয়োজনের সমাপ্তি ঘোষণা হবে।

বাজেটের বিষয়ে সুবর্ণজয়ন্তীর প্রস্তুতিসভায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ''২৬০ কোটি টাকা প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গ্রন্থাগারের জন্য, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই কেনার জন্য ৫০ কোটি টাকা, জেলা প্রশাসনের জন্য এক কোটি করে ৬৪ কোটি টাকা, উপজেলা প্রশাসনের জন্য ৩০ লাখ ধরে (সদর উপজেলা বাদে) ১২৮ কোটি ৬০ লাখ, ডকুমেন্টারি ও শটফিল্ম তৈরি বাবদ ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সার্বিক কার্যক্রমের জন্য ১৫ কোটি টাকা।''