আপনি পড়ছেন

তিনি ঘাতকদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘আমার হাঁপানি আছে, প্লিজ আমার মুখ বাঁধবেন না।’ এরপর তার মাথা একটি ব্যাগের মধ্যে ঢোকানো হয়। শ্বাস আটকে যাওয়ার কষ্টে ছটফট করছিলেন তিনি। তারপর তার মাথা কেটে ফেলা হয়। টুকরো টুকরো করা হয় লাশ।

jamal khashoggi saudi journalistসাংবাদিক জামাল খাশোগির প্রতীকী ছবি

সৌদি সরকারের সমালোচক সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ড ছিল এক কথায় লোমহর্ষক। ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরে তাকে হত্যার জন্য সৌদি আরব থেকে একটি ঘাতক দল এসে হাজির হয়েছিল।

তুরস্কের ডেইলি সাবাহ তখন খাশোগির জীবনের শেষ মুহূর্তের একটি অডিও রেকর্ডিং-এর বিষয়বস্তু প্রকাশ করে।

পত্রিকাটি বলছে, সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরে এই অডিও রেকর্ডিং ধারণ করা হয়েছে এবং তুর্কি গোয়েন্দা সংস্থা এটি সংগ্রহ করেছে।

জামাল খাশোগি সৌদি কনস্যুলেটে পৌঁছানোর আগে সৌদি আরব থেকে আসা ঘাতক দলের সদস্য একজন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ খাশোগিকে ‘কোরবানির পশু’ বলে বর্ণনা করেছিল।

কনস্যুলেটে ঢোকার পর কিছু একটা আঁচ করে খাশোগির সন্দেহ হয়। এ সময় তাকে বলা হয়, তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। তাই তাকে সৌদি আরবে ফেরত যেতে হবে।

কিন্তু তিনি সেই হুকুম মানতে চাননি। এই সময় তিনি তার ছেলেকে একটি টেক্সট মেসেজ পাঠান। এরপরই তাকে ওষুধ দিয়ে অচেতন করা হয়।

জ্ঞান হারানোর আগে তিনি তার কথিত ঘাতকদের উদ্দেশে বলেন, তার হাঁপানি রয়েছে, সে কারণে তার মুখ যেন বেঁধে ফেলা না হয়।

খবরে বর্ণনা করা হয়, এরপর কীভাবে খাশোগির মাথা একটি ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। প্রাণ রক্ষার্থে তার ছটফটানির শব্দও রেকর্ড হয়।

তারপর যেভাবে খাশোগির মাথা কেটে ফেলা হয়, সেই শব্দও রেকর্ড হয় বলে সাবাহ জানায়।

jamal khashoggi with saudi princeসাংবাদিক জামাল খাশোগির সঙ্গে সৌদি যুবরাজ বিন সালমান (বামে প্রথমে)

সৌদি আরবের ক্ষমতাধর যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ব্যক্তিগতভাবে জামাল খাশোগিকে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ২০১৮ সালে তৈরি করা মার্কিন সরকারের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিবেদনটি ধামাচাপা দিয়ে রাখলেও বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তা প্রকাশ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোহাম্মদ বিন সালমান এমন একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করেছিলেন, যাতে সৌদি নিরাপত্তা বাহিনীকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে, খাশোগিকে ‘ধরে আনতে অথবা হত্যা করতে’ হবে।

এই প্রথম মার্কিন সরকার খাশোগিকে হত্যার জন্য সরাসরি সৌদি যুবরাজকে দায়ী করল। মোহাম্মদ বিন সালমান শুরু থেকে এ হত্যাকাণ্ডের দায় অস্বীকার করে আসছিলেন।

এদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, খাশোগি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে সৌদি আরবের ৭৬ নাগরিকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। এসব সৌদি নাগরিক আমেরিকার ভিসা পাবেন না।

খাশোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে অনেক নাটক করেছে সৌদি আরব। ইস্তাম্বুলে সৌদি কনসুলেটের মধ্যে ঘুষোঘুষির এক পর্যায়ে সাংবাদিক জামাল খাশোগি মারা যান, প্রথমে এমন ব্যাখ্যা দিয়েছিল সৌদি। এর দুদিন না যেতেই নতুন আরেক তত্ত্ব হাজির করে সৌদি সরকার।

সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবের মার্কিন টিভি ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, খাশোগিকে খুন করা হয়েছে। তবে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সেই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দেননি।

তার কথা, নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু দুর্বৃত্ত নিজেদের সিদ্ধান্তে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

কিন্তু সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সর্বশেষ এ ব্যাখ্যার পরপরই তুরস্কের একটি সরকার সমর্থিত পত্রিকায় চাঞ্চল্যকর খবর প্রকাশিত হয়, যাতে ওই হত্যাকাণ্ডের পেছনে যুবরাজ সালমানের প্রত্যক্ষ ভূমিকা নিয়ে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

ইয়েনি সাফাক নামে যে পত্রিকাটি এ নিয়ে খবর ফাঁস করছে, তারা লিখেছে, হত্যাকাণ্ডের পরপরই প্রভাবশালী সৌদি গোয়েন্দা কর্মকর্তা মাহের আব্দুল-আজিজ মুতরেব ইস্তাম্বুল থেকে যুবরাজ সালমানের অফিসে চারবার টেলিফোনে কথা বলেছিলেন।

জামাল খাশোগিকে হত্যার কয়েক মাস আগে থেকেই অনলাইনে তাকে লক্ষ্য করে হুমকি-ভীতি প্রদর্শন-হয়রানি চলে।

মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টে সাংবাদিক জন ওয়ারিক লিখেছেন, আরবি সামাজিক মাধ্যমে জামাল খাশোগির সমালোচকের অভাব ছিল না।

কিন্তু ২০১৮ সালের অক্টোবরে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরের সেই বীভৎস হত্যাকাণ্ডের আগের কয়েক মাসে সেইসব পোস্টের ভাষা-মেজাজ বদলে যাচ্ছিল।

বলা হয়েছিল, ‘খাশোগি, এটাই তোমার শেষের শুরু’। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে এক পোস্টে লেখা হয়েছিল, ‘জাতির বিরুদ্ধে তোমার উচ্চারিত প্রতিটি শব্দের হিসাব রাখা হচ্ছে, খুব শিগগিরই তোমার শাস্তি হবে।’

অনেক পোস্টেই তাকে প্রচ্ছন্নভাবে হত্যার হুমকি দেওয়া হতো।

২০১৮ সালের অক্টোবরে এক পোস্টে বলা হয়, ‘তার মুখোশ খুলে যাবে, আমরা খাশোগিকে হাতে পাব।’

একটি পোস্টে দেওয়া হয় প্রতীকী অর্থপূর্ণ সৌদি রূপক কাহিনী। এটি একটি ষাঁড়ের গল্প- যে নিজের শিং দিয়ে মাটি খুঁড়ে একটি ছুরি তুলে আনে, আর তার মালিক সেই ছুরিটি দিয়েই তাকে জবাই করে। দৃশ্যত এর অর্থ, খাশোগি নিজেই তার হত্যার জন্য কর্তৃপক্ষের হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছেন।

তার পর লেখা হয় ‘একটি ষাঁড় নিজের শিং-এ নিজেই গেঁথে গেছে।’

সে সময়ই খাশোগি তার বন্ধুদের কাছে বর্ণনা করেছিলেন, সৌদি আরবের বিভিন্ন টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে কীভাবে তার উদ্দেশে ঘৃণা, বিদ্রুপ ও হুমকি-সম্বলিত নানা মন্তব্য ও বার্তা প্রকাশ করা হচ্ছে।

খাশোগি এতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এবং তার নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন।

তার বিশ্বস্ত বন্ধু ম্যাগী মিচেল সালেম বলেন, তিনি প্রতিদিন কাঁদতেন, তিনি বেদনার্ত হয়ে পড়েছিলেন। ওই সময় খাশোগি যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াতে অবস্থান করছিলেন। প্রতিদিন এই বিদ্বেষমূলক বার্তা এত বেড়ে যাচ্ছিল যে, খাশোগি ভাবতে শুরু করেছিলেন লেখা বন্ধ করে দেবেন কি না।

খাশোগি বন্ধুদের বলেছিলেন যে, তার বিশ্বাস, অনলাইনে তার বিরুদ্ধে এই অপপ্রচারের পেছনে আছেন সাউদ আল-কাহতানি, যিনি সৌদি প্রশাসনের মিডিয়া বিষয়ক পরামর্শদাতা।

ক্ষমতাধর এই লোকটির কাজ ছিল সৌদি রাজতন্ত্রের ভাবমূর্তি রক্ষা করা এবং এর সমালোচকদের কণ্ঠ রোধের প্রয়াস চালানো।

প্রসঙ্গত, খাশোগি ২০১৮ সালের অক্টোবরে দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আনতে গিয়ে নৃশংসভাবে নিহত হন। এখন পর্যন্ত খাশোগির লাশের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.