মমতার ভোটব্যাঙ্কে আব্বাসের ঝাঁকুনি, সুবিধা বিজেপির!
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বড় চিন্তা এখন মুসলিম ভোটকে কেন্দ্র করে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোটের ফল নির্ধারণকারী হয়ে উঠছেন মুসলিমরাই।
ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট নেতা আব্বাস সিদ্দিকী
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় যদি আগের মতো মুসলিম ভোট টানতে পারেন, তবে তার ফের ক্ষমতায় আসাটা পরিষ্কার। কিন্তু, গতবারের মতো তিনি মুসলিমদের ঢালাও সমর্থন যে পাচ্ছেন না, তাও নিশ্চিত।
কারণ, বাম ও কংগ্রেসের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছে আব্বাস সিদ্দিকীর দল ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)। বাংলাভাষী মুসলিমদের কাছে তার জনপ্রিয়তা বেড়েছে। অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কাছেও তিনি জনপ্রিয়।
পশ্চিমবঙ্গের ভোটে বিহার নির্বাচনের পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা দেখছেন অনেকে। গত বছর বিহার নির্বাচনে পাঁচটি আসনে জিতেছিল আসাদউদ্দিন ওয়াইসির হায়দ্রাবাদভিত্তিক রাজনৈতিক দল সর্বভারতীয় মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এমআইএম)। পশ্চিমবঙ্গের উর্দুভাষী মুসলিম ভোটারদের কাছে তার জনপ্রিয়তা রয়েছে।
আব্বাস সিদ্দিকী কিংবা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি- দুই দিক থেকেই মুসলিমরা মমতার দল থেকে ছিটকে পড়ছেন। সুবিধাটা স্পষ্টত যাচ্ছে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) দিকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সব চিন্তা এখন পশ্চিমবঙ্গ-কেন্দ্রিক।
তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এবং বিজেপি সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
বিহারের নির্বাচনে আসাদউদ্দিন ওয়াইসি মূলত বিজেপিকে সুবিধা করে দিতেই নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন বলে অভিযোগ কংগ্রেসের। দলটির (কংগ্রেস) নেতারা ওয়াইসিকে সরাসরি ‘বিজেপির দালাল’ উল্লেখ করে বলেছিলেন, তার দল মুসলিম ভোট কেটেছে বলেই বিজেপি জোট বিহারে আবার ক্ষমতায় আসতে পেরেছে। ঠিক একইভাবে, এবারও আব্বাস সিদ্দিকীর দলকে বিজেপির ‘বি টিম’ বলছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। এবার যদি রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসে, আব্বাস সিদ্দিকীই এর পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছিলেন বলে প্রতীয়মান হবে।
পশ্চিমবঙ্গে ২৭ থেকে ৩০ শতাংশ মুসলিম, যারা কখনোই বিজেপিকে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় দেখতে চায় না, তাদের ভোট বিবেচনা করলেও ক্ষমতায় আসার মতো বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোটের বিপুল ভোটার নেই। কিন্তু, তৃণমূল নিশ্চিতভাবেই তাদের ভোটব্যাংক হারাচ্ছে।
১৯৭৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা সাত মেয়াদে ৩৪ বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট। ২০১১ ও ২০১৬ সালের নির্বাচনে জিতে টানা দুই মেয়াদে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় আছে তৃণমূল কংগ্রেস।
হুগলীর ফুরফুরা দরবারের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীর মতে, ৩৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থেকেও বামফ্রন্ট রাজ্যের মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্য তেমন কিছু করেনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার দল তৃণমূল মুসলিমদের উন্নয়নের কথা বলে ক্ষমতায় এলেও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। আব্বাস সিদ্দিকী মনে করেন, ভাগ্য পরিবর্তন করতে হলে মুসলিমদের নিজেদেরই রাজনীতিতে আসতে হবে।
মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতার’ জন্য মমতা সরকারকে সরাসরি আক্রমণ করছেন আব্বাস। তবে, কেবল মুসলিম নয়, অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্যেও কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
তৃণমূল ও বিজেপি উভয় দলকেই হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘পিছিয়ে পড়া দলিত, আদিবাসী, মুসলিম সবার জন্য আমি আব্বাস সিদ্দিকী আছি।’
পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনে লড়াই করার কথা আগেই জানিয়েছিলেন আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। তিনি চেয়েছিলেন, আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে জোট করতে। তবে, শেষমেশ কংগ্রেস-বামফ্রন্টের জোটেই যোগ দিয়েছেন আব্বাস।
এ প্রসঙ্গে আব্বাস সিদ্দিকী বলেন, ‘এমআইএমের সঙ্গে প্রথম বৈঠকের পর কয়েক সপ্তাহ ধরে তারা কোনো যোগাযোগ করেনি। আমরা জানি না, এখানে তাদের দলের দায়িত্বে কে আছেন।’
এদিকে, বিহার নির্বাচনের মতো বিজেপিকে নির্বাচনে জেতাতেই বিজেপি বিরোধীদের ভোট কাটার জন্য আব্বাস সিদ্দিকী মাঠে নেমেছেন বলে সরাসরি অভিযোগ করেছেন মমতা। তৃণমূল নেতারা আইএসএফকে বিজেপির ‘বি টিম’ বলেও মন্তব্য করেছেন।
এ প্রসঙ্গে আব্বাস বলেন, ‘আমরা বিহারের পুনরাবৃত্তি চাই না। আমাদের লড়াই দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে।’
প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে বিজেপিবিরোধী অবস্থান কম কেন, জানতে চাইলে আব্বাস বলেন, ‘আমরা বিজেপি সম্পর্কে খুব বেশি কথা বলি না, কারণ তারা আমাদের চিন্তা-ভাবনা প্রক্রিয়ায় নেই। তবে মমতা ব্যানার্জি না থাকলে বিজেপি কখনও বাংলায় পা রাখতে পারতো না। বিজেপিকে থামাতে হলে প্রথমে মমতাকে সরাতে হবে।’
পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনে মূল আসন নন্দীগ্রামে লড়বেন তৃণমূল প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার বিপরীতে দাঁড়িয়েছেন তৃণমূল থেকে দলত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দেওয়া শুভেন্দু অধিকারী। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত নন্দীগ্রামে বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোট থেকে একজন আইএসএফের প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। আসনটিতে এ বছর নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলবে বলে ধারণা করছেন পর্যবেক্ষকরা।
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, উত্তর চব্বিশ পরগনা, হুগলি, হাওড়া, বর্ধমান এবং বীরভূমের মতো দক্ষিণের জেলাগুলোতে ব্যাপক জনপ্রিয় আব্বাস।
লোকনীতি নামের একটি সংস্থার জরিপে দেখা গেছে, ২০১৪ সালের লোকসভার নির্বাচনে রাজ্যে মুসলিম ভোটের ৪০ ভাগ ভোট পেয়েছিল তৃণমূল। ২০১৯ সালে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৭০ ভাগ অর্থাৎ মুসলিমদের ভোট তৃণমূলের দিকে কিছুটা বেড়েছে। ফলে, আব্বাস সিদ্দিকী ও আসাদউদ্দিন ওয়াইসির পৃথক নির্বাচন মানেই তৃণমূলের অন্তত দুই ডজন আসন অনিশ্চয়তায় পড়া।
তৃণমূলের কাছে মুসলিম ভোট গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু একই কারণে হিন্দুদের মধ্যে দলটির জনপ্রিয়তা কমেছে। এরই সুবিধা নিচ্ছে বিজেপি। ২০১৪ সালে লোকসভায় বিজেপি হিন্দু ভোটের ২১ ভাগ পায়, ২০১৯ সালে পেয়েছে ৫৭ ভাগ।
পশ্চিমবঙ্গে এবার ৮ দফায় হবে ভোটগ্রহণ। ভোটগ্রহণ শুরু হবে ২৭ মার্চ। আর শেষ দফার ভোটগ্রহণ হবে ২৯ এপ্রিল। ফলাফল ঘোষণা করা হবে ২ মে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.