কাতারে কেন যাচ্ছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী?

রাজনীতি এক জায়গায় স্থির থাকে না। কাতার নামের ক্ষুদ্র যে দেশটি কিছুদিন আগে রাজনীতির কোণে বন্দি ছিল, সেই কাতার এখন সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মতো মার্কিন যুদ্ধবিমানকে আকাশে সঙ্গ দেয়। কিছুদিন আগেও সৌদি ও তার মিত্ররা কাতারকে একঘরে রাখার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে, সেই কাতারের সঙ্গে আবার তাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়েছে। কাতারই কদিন আগে সৌদি যুবরাজের দুর্দিনে সহায়তার হাত বাড়িয়েছে।

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু

২০১৭ সালে, কাতারের বিরুদ্ধে অবরোধ তুলে নিতে কিছু শর্ত দিয়েছিল সৌদি-মিত্ররা, এর মধ্যে প্রথম সারিতে ছিল তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। কাতার সেটা তো করেইনি, বরং উল্টো সেই সম্পর্ক দিনের পর দিন সুদৃঢ় করেছে। আরবের প্রভাবশালীরা যখন কাতারের শত্রু, তখন দেশটিকে সহায়তায় এগিয়ে আসে তুরস্ক। তুরস্ককে বলা হয় কাতারের ‘বিপদের বন্ধু’। আরব দেশগুলোর হুমকি উপেক্ষা করে মুসলিম ব্রাদারহুড, হামাস কিংবা ইসলামিক জিহাদের সঙ্গে সমান্তরাল সম্পর্ক বজায় রেখেছে দুই দেশ। দুই দেশের অর্থনৈতিক, সামরিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক অনেক গভীর।

এরইমধ্যে আবার আরব লীগ ও তুরস্কের মধ্যে বিভেদ আরও স্পষ্ট হয়ে ধরা দিয়েছে। পরস্পরের বিরুদ্ধে কূটনীতির সীমাবহির্ভূত বাকযুদ্ধ হয়েছে। কাতার সেই আরব লীগের সদস্য। খবরে বলা হয়েছে, কাতারের মতামত উপেক্ষা করেই আরব লীগের সাম্প্রতিক বৈঠকে তুরস্কের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা হয়েছে।

রাজনীতির এ দোলাচল ও সাম্প্রতিক পট-বদলের প্রেক্ষাপটে কাতারে উড়াল দিচ্ছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু। বন্ধুত্বের বর্তমান অবস্থা মূল্যায়ন হবে এবং আগামী দিনে সম্পর্ক সম্প্রসারণের ছক তৈরি হবে এ সফরে।

তুরস্ক ও কাতারের সম্পর্ক অনেক গভীর

তুরস্কের তরফে এ সফরের ঘোষণা দিয়ে বলা হয়েছে, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান ও কিরগিজস্তান সফরের পরপরই দুইদিনের জন্য কাতার সফর করবেন কাভুসোগলু। বুধবারই এ সফর শুরু হওয়ার কথা।

বিবৃতিতে বলা হয়, এ কূটনৈতিক সফরে তিনি কাতারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বর্তমান আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ঘটনাবলির সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন। সিরিয়ার অবস্থা এবং সেখানে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অগ্রগতিও আলোচনায় থাকবে।

২০১১ সাল থেকে গৃহযুদ্ধে লণ্ডভণ্ড সিরিয়া। তুরস্কের অভিযোগ, গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভে নজিরবিহীন নিষ্ঠুরতা চালাচ্ছে আসাদ সরকার। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ বছরে সেখানে লাখ লাখ মানুষের জীবনহানি ঘটেছে, ঘরহারা হয়েছেন এক কোটিরও বেশি মানুষ।

সফরের সূচিতে তুরস্ককে দৃশ্যত অগ্রাধিকার দেওয়া হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের হালনাগাদ, পূর্ব ভূমধ্যসাগর নিয়ে মিশরের কঠোর অবস্থান, সৌদি যুবরাজের বিরুদ্ধে মার্কিন ক্লাসিফাইড রিপোর্ট, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধাবস্থাসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে দুই দেশের মধ্যে গভীর আলোচনার আভাস দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।