বাঙ্কার খনন শুরু, গৃহযুদ্ধের দামামা মিয়ানমারে

ধীরে ধীরে গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার। সামরিক জান্তা শুধু গুলি করে মানুষ হত্যা করছে না, তারা একইসঙ্গে আকাশ থেকে বোমা হামলা চালাচ্ছে থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে। এর ফলে ওইসব গ্রামের ভীতসন্ত্রস্ত লোকজন সীমান্ত পাড়ি দিয়ে চলে যাচ্ছেন থাইল্যান্ডে। কিন্তু থাই কর্তৃপক্ষ তাদের আশ্রয় না দিয়ে পুশব্যাক করছে। উপায়হীন এসব মানুষ দেশে ফিরে বাংকার খুঁড়ে তাতে অবস্থান নিচ্ছেন। জনতার পাশে থেকে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে তিনটি জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্র গ্রুপ।

মিয়ানমারে জান্তা সরকারের দমন-পীড়ন সহ্য করতে না পেরে পার্শ্ববর্তী থাইল্যান্ডে পালিয়ে যাচ্ছে লোকজন 

অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম সিডনি মর্নিং হেরাল্ড-এ এ ধরনের তথ্য দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনের শিরোনাম- ‘তারা বাঙ্কার খনন শুরু করেছে, মিয়ানমার গৃহযুদ্ধের কাছাকাছি’। প্রতিবেদনে প্রতিবেদক ক্রিস ব্যারেট লিখেছেন, থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী গ্রাম আই তু হতা-য় আকাশ থেকে বোমা ফেলা হচ্ছে। ফলে এ গ্রামের ভীতসন্ত্রস্ত মানুষ সীমান্ত অতিক্রম করে চলে গিয়েছিল থাইল্যান্ডে। কিন্তু থাই কর্তৃপক্ষ তাদেরকে পুশব্যাক করেছে। ওইসব মানুষ এ অবস্থায় মিয়ানমারে ফিরতে চান না, কিন্তু না ফিরেও তাদের উপায় নেই।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত এলাকার বেসামরিক গ্রুপ ‘কারেন পিস সাপোর্ট নেটওয়ার্ক’-এর পরিচালক নাও ওয়াহ খু শি সিডনি মর্নিং হেরাল্ডকে ওইসব মানুষ সম্পর্কে বলেছেন, এরা বোটে করে যখন সীমান্তের অন্যপাড়ে যাচ্ছেন, তখন তারা খবর পাচ্ছেন, যুদ্ধবিমান আবার গ্রামে আসছে। এতে এসব মানুষ আতঙ্কিত। উপায়হীন এসব মানুষের সামনে কোনো বিকল্প নেই। তাই তারা বাংকার খোঁড়া শুরু করেছেন।

ক্রিস ব্যারেট লিখেছেন, গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা হত্যাসহ দমন-পীড়ন অব্যাহত রাখার ফলে গত দুই মাসে সেখানে কমপক্ষে ৫১০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এতে দেশটি এখন গৃহযুদ্ধের জড়িয়ে পড়ার হুমকিতে আছে।

বাঙ্কার খনন শুরু, গৃহযুদ্ধের দামামা মিয়ানমারে

এতে আরও বলা হয়, মিয়ানমারের জাতিগত তিনটি সশস্ত্র সংগঠন নিয়ন্ত্রণ করে দেশের বিশাল অংশ। মঙ্গলবার তারা সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার হুমকি দিয়েছেন। তারা বলেছেন, যদি সামরিক জান্তা বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে হামলা অব্যাহত রাখে, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় গুলি করে, মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলে, ডজন ডজন শিশু প্রাণ হারায়, তাহলে জনতার পাশে থেকে তারা যুদ্ধ করবে। এ তিনটি গ্রুপ হলো- মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি, আরাকান আর্মি এবং তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি।

মিয়ানমারে চলমান প্রতিবাদ-বিক্ষোভের অন্যতম প্রধান আয়োজক সংগঠন ‘জেনারেল স্ট্রাইক কমিটি অব ন্যাশনালিটিজ’ এর আগে দেশের বহু জাতিগত মিলিশিয়া সংগঠনকে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানায়। তার একদিন পর ওই তিনটি গ্রুপ এমন সিদ্ধান্তের কথা জানাল।