আপনি পড়ছেন

১৮ বছর বয়সে ভোটাধিকার পাওয়ার আগেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন কুমারেশ অধিকারী। কিশোর বয়সে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নিজ গ্রামের দেয়ালে দলীয় বিভিন্ন স্লোগান লিখতেন। কুমারেশ বিশ্বাস করতেন, এসব কর্মকাণ্ড দলে তার পদ পেতে সহায়তা করবে।

bjp supporter drawing modi pic

এরইমধ্যে কেটে গেছে পাঁচ দশক, কুমারেশের বয়স এখন ৭১। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় জনসমর্থন পেতে এখনো প্রতিশ্রুতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। যদিও তার রাজনীতির প্রতি মোহ রয়েই গেছে। কুমারেশ অধিকারী এক সময় ভারতের মার্কসপন্থী কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিএম) কর্মী ছিলেন, যে দলটি আজ সম্পূর্ণ বিপরীত আদর্শের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার চালাচ্ছে।

মোদির বিজেপি কখনো পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসেনি। ফলে আট ধাপের বিধানসভা নির্বাচন তাদের জন্য এবারো চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। গত ২৮ মার্চ প্রথম ধাপের ভোট শুরু হয়েছে; শেষ হবে আগামী ২৯ এপ্রিল। এরপর ২ মে ফলাফল প্রকাশ করা হবে।

কুমারেশ অধিকারী প্রতিবেশী বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষা প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস করেন। তিনি তার বাম রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশের আদর্শিক অবস্থান এখন কতটা বদলে গেছে, তা ব্যাখ্যা করছিলেন। কলকাতা থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে নদিয়া জেলার কাদিপুর গ্রামে নিজের আসবাবপত্রের দোকানে বসে কুমারেশ বলেন, 'কমিউনিস্টরা সব সময় গরিবের কণ্ঠস্বর। গরিব পরিবার থেকে উঠে আসায় আমি তাদেরই বেছে নেই। ইতোমধ্যে অনেক বছর কেটে গেছে। কিন্তু আমি গরিবই রয়ে গেছি। সিপিএম যথেষ্ট চাকরির ব্যবস্থা করতে পারেনি। তারা যে দারিদ্র্য দূরীকরণে খুব একটা কাজ করেনি, তা আমার গ্রামের দিকে তাকালেই স্পষ্ট।'

kumaresh adhikari westbengal politicianকুমারেশ অধিকারী

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের প্রধান বাম রাজনৈতিক দল সিপিএম, তারা ১৯৭৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা ৩৪ বছর রাজ্য শাসন করেছে। বিশ্বের ইতিহাসে এটি বাম শাসনের রেকর্ড। কুমারেশ অধিকারীর কাদিপুর গ্রাম কৃষ্ণনগর আসনে পড়েছে। এখানে 'অগ্নিদেবী' খ্যাত মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) ২০১১ সালে ৩৪ বছর আগের সিপিএমকে হটিয়ে দেয়।

পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক সহিংসতার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। সিপিএম ক্যাডাররা তাদের আমলে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা করেছে, প্রকাশ্যে আহত করেছে। ২০১১ সালে মমতার দল ক্ষমতায় আসার পর তাদের পাশবিক বাহিনীর নৃশংস নিপীড়ন যেসব বাম নেতার ওপর পড়ে, কুমারেশ অধিকারী তাদের অন্যতম।

কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরাকে তিনি বলেন, 'আমাকে একটি খুঁটির সঙ্গে বেঁধে তৃণমূলের গুণ্ডারা নির্যাতন করেছে। ক্ষমতা হারানোর পর সিপিএম খুব দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ে। এর অন্যতম কারণ তারা কখনো আমার মতো কর্মীদের দীর্ঘ সুরক্ষায় কাজ করেনি।'

ফলে টিকে থাকার জন্যই কুমারেশ অধিকারীর মতো রাজনীতিক বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। 'বিজেপি এখন ভারতের একটি শক্তি এবং তাদের যথেষ্ট রাজনৈতিক রসদ রয়েছে। নিজের টিকে থাকার জন্যই আমি ২০১৪ সালে বিজেপিতে যোগ দেই। তাদের অনেকেই আমাকে পছন্দ করেন', যোগ করেন কুমারেশ অধিকারী।

পশ্চিমবঙ্গে আরেকটি নির্বাচন শুরু হয়েছে। বাম রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা ব্যাপক হারে বিজেপিতে ঝুঁকেছেন এবং গোটা ভারতে একটি ফেনোমেন তৈরি হয়েছে, স্থানীয়ভাবে যাবে বলা হচ্ছে- 'বাম সে রাম' অর্থাৎ বাম থেকে হিন্দু দেবতা রামের কাছে ধরনা দিচ্ছে সবাই। এমনটি হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। মোটা দাগে বলতে হবে, তৃণমূলের আক্রমণ থেকে বাঁচতে বলা হলেও গুরুত্বপূর্ণ হলো বিজেপির হিন্দুত্ববাদ আদর্শের নিয়ন্ত্রক আরএসএস পশ্চিমবঙ্গে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।

bjp supporters with modi cap

এর পেছনে উৎসাহ হিসেবে কাজ করেছে ইউরোপের নাৎসিবাদ। মূলত সংখ্যালঘু বিশেষ করে, মুসলিমদের রাজনৈতিক অধিকার অস্বীকার করে ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্যই ১৯৫২ সালে আরএসএস গঠিত হয়। প্রশিক্ষিত কর্মী বাহিনীর মাধ্যমে তারা মুসলিম ও খ্রিস্টানদের ধমান্তরিত করছে বলে আলজাজিরাকে জানিয়েছেন বিজেপি ও সিপিএমের অনেক নেতা।

কলকাতার বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার মুহাম্মদ রিয়াজ বলেন, 'সিপিএমের দীর্ঘ শাসনে পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী রাজনীতিক ও ভোটাররা নির্যাতনের শিকার হন। এদের মধ্যে অন্যতম মমতা ব্যানার্জি। তিনি ক্ষমতায় আসার পর কোনো বিরোধী শক্তিকে সফল হতে দেননি। ২০১১ সালের পর থেকে সিপিএমের বেশিরভাগ স্থানীয় কার্যালয় বন্ধ রয়েছে। ফলে সিপিএম ক্যাডার ও তাদের ভোটাররা বিকল্প হিসেবে বিজেপিতেই ঝুঁকেছেন।'

নির্বাচনী তথ্যও রিয়াজের কথার সাক্ষ্য দেয়। ২০১৬ সালের রাজ্য এবং ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট কমে ৭ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে বিজেপির ভোট ১০ দশমিক ১৬ থেকে লাফিয়ে হয়েছে ৪০ দমিশক ৭ শতাংশ।

সিপিএমের জ্যেষ্ঠ নেতা মুহাম্মদ সেলিম বলেন, বিগত দুই বছরে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি অনেক বদলে গেছে। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনের সময় মানুষ তৃণমুল কংগ্রেস ও বিজেপির চেহারা দেখে ফেলেছে। আমরা রাস্তায় নেমে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য লড়াই করেছি। সিপিএম ছাত্র, নারী ও কৃষক ইস্যু নির্বাচনে সামনে এনেছে। কিন্তু সংবাদমাধ্যম এসব তুলে ধরে না। কিন্তু এবারের নির্বাচনে ঠিকই ভোটাররা সিপিএমের পক্ষে রায় দিবেন।'

তবে পশ্চিমবঙ্গে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও সিপিএমের সাহসী নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বিজেপির প্রতি ঝোঁক নিয়ে সতর্ক করে বলেছেন, 'তৃণমূল কংগ্রেসের জ্বলন্ত উনন থেকে বিজেপির অগ্নিকাণ্ডে ঝাঁপ দেওয়া ঠিক হবে না।'

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.