নেতানিয়াহুর দুর্নীতি মামলা বাতিলের আহ্বান ট্রাম্পের, ইসরায়েলের রাজনীতিতে ঝড়

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতি মামলা বাতিলের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আহ্বানে দেশটির রাজনীতিতে তীব্র বিভক্তি দেখা দিয়েছে। ট্রাম্পের এই মন্তব্যের কঠোর বিরোধিতা করেছে ইসরায়েলের বিরোধী দলগুলো, তবে নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের কট্টর ডানপন্থী মন্ত্রীরা একে স্বাগত জানিয়েছেন।

ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ

বুধবার ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ নেতানিয়াহুকে একজন ‘যোদ্ধা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি দাবি করেন, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগ একটি ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রমূলক মামলা’ এবং এটি অবিলম্বে বাতিল করা উচিত।

ট্রাম্পের এই আহ্বানের প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ দেশটির ‘ইয়েদিওত আহরোনোত’ পত্রিকাকে বলেন, ‘ট্রাম্পের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, একটি স্বাধীন দেশের অভ্যন্তরীণ আইনি প্রক্রিয়ায় তার হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।’ লাপিদ আরও বলেন, ‘গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে নেতানিয়াহুর ওপর চাপ প্রয়োগের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ট্রাম্প এই মন্তব্য করেছেন। এটাই ট্রাম্পের স্বভাব।’

বিরোধী ডেমোক্র্যাটস পার্টির সদস্য ও নেসেট (ইসরায়েলি সংসদ) সদস্য গিলাদ কারিভ তার এক্স ( টুইটার) অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়, এমনকি প্রধানমন্ত্রীও নন।’

আশ্চর্যজনকভাবে, নেতানিয়াহুর নিজের দল লিকুদ পার্টির নেসেট সদস্য আরিয়েল কেলনারও ট্রাম্পের এই আহ্বানের বিরোধিতা করে বলেন, ‘নীতিগতভাবে আমি ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যেকোনো বিদেশি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বিরোধী। তবে এখন আমাদের বিচার ব্যবস্থারও আত্মসমালোচনা করার সময় এসেছে।’

কট্টর ডানপন্থীদের সমর্থন

তবে ট্রাম্পের এই বক্তব্যকে জোরালোভাবে সমর্থন করেছেন ইসরায়েলি সরকারের কট্টর ডানপন্থী মন্ত্রীরা। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির এক্সে লিখেছেন, ‘ইসরায়েল নিঃসন্দেহে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র, কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একদম সঠিক কথা বলেছেন। গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের চেষ্টায় ‘গভীর রাষ্ট্র’ যে অযৌক্তিক সাজা তৈরি করেছে, তা বাতিল করার সময় এসেছে। বিচার ব্যবস্থায় জরুরি সংস্কার অপরিহার্য!’

একই সুরে কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সার। তিনি চুক্তির মাধ্যমে বিচার নিষ্পত্তির প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, “যখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন নেতানিয়াহু ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ঐতিহাসিক অভিযানের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ছিলেন।”

যোগাযোগ মন্ত্রী শ্লোমো কারহিও নেতানিয়াহুর বিচার বাতিলের পক্ষে মত দিয়ে দাবি করেন, এই মামলাটি ইসরায়েলের “জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর হয়েছে”।

এদিকে, কট্টর ডানপন্থী ন্যাশনাল রিলিজিয়াস পার্টির আইনপ্রণেতা সিমচা রথম্যান প্রধানমন্ত্রীর বিচার বন্ধের দাবিতে একটি বিল আনার কথা বলেছেন, যাতে এই ‘অর্থহীন প্রক্রিয়া’ বন্ধ করা যায়।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ঘুষ, প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে তিনটি পৃথক মামলা (কেস ১০০০, ২০০০ এবং ৪০০০) দায়ের করা হয়। তবে নেতানিয়াহু বরাবরই সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন এবং এগুলোকে ‘ভুয়া’ বলে অভিহিত করেছেন। ২০২০ সালের ২৪ মে তার বিচার শুরু হয় এবং তিনিই ইসরায়েলের ইতিহাসে প্রথম ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী, যিনি ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছেন।