ফিলিস্তিন নির্বাচন: ৩৬ প্রার্থী চূড়ান্ত, কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফাতাহ

ফিলিস্তিনের আসন্ন নির্বাচনে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফাতাহ। বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী হামাস ছাড়াও এমন একটি স্বাধীন প্রার্থীদের জোট দাঁড়িয়েছে, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ফিলিস্তিনের প্রয়াত জনপ্রিয় নেতা ইয়াসির আরাফাতের ভাতিজা। মাহমুদ আব্বাসের অনেক ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহকর্মীও এ জোটকে সমর্থন করছেন। ফলে দীর্ঘ ১৫ বছর পর হতে যাওয়া নির্বাচনে আবারো হামাসের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে গেছে।

ফিলিস্তিন নির্বাচনে ৩৬ প্রার্থী চূড়ান্ত, কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে আব্বাসের ফাতাহ

এমন পরিস্থিতিতে রোববার (৪ এপ্রিল) ফিলিস্তিনের নির্বাচন কমিশন সংসদ নির্বাচনে ৩৬ প্রার্থীর তালিকা অনুমোদন করে। আগামী ২২ মে এ নির্বাচনের পর ৩১ জুলাই দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, স্বাধীন ফিলিস্তিন সরকার গঠনে আন্তর্জাতিক সমর্থন পেতে নির্বাচনে ধর্মনিরপেক্ষ ফাতাহর বিপক্ষে ইসলামপন্থী হামাসের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত নির্ধারিত সময়ে বিভিন্ন গ্রুপ পৃথকভাবে তাদের প্রার্থীদের তালিকা জমা দেয়। ৩০ মার্চ আসনভিত্তিক প্রার্থীর নাম প্রকাশ করা হয়। এদের মধ্যে ৩৬ প্রার্থীর আবেদন গ্রহণ করার কথা জানায় নির্বাচন কমিশন।

ফাতাহ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। ইসরায়েলের দখল করা ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড পশ্চিমতীরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি। বিপরীতে ২০০৭ সাল থেকে ইসরায়েল অবরুদ্ধ করে রাখা গাজায় লড়বে হামাস।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে ফাতাহ অন্তঃকোন্দল ছাড়াও স্বাধীন প্রার্থীদের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। স্বাধীন প্রার্থীদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ফিলিস্তিনের প্রয়াত নেতা ইয়াসির আরাফাতের ভাতিজা নাসের আল-কিদওয়া। তার সঙ্গে আছেন ফিলিস্তিনের ম্যান্ডেলাখ্যাত মারওয়ান বারগৌতি। ২০০০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তীব্র দ্বিতীয় প্রতিরোধ আন্দোলনে (ইন্তিফাদা) নেতৃত্ব দেন মারওয়ান। এজন্য ইসরায়েলের আদালত তাকে একাধিকবার যাবজ্জীবন দিয়েছে। সম্প্রতি আবুধাবিতে নির্বাসনে যাওয়া গাজায় মাহমুদ আব্বাসের নিরাপত্তা প্রধানও স্বাধীন প্রার্থীদের সমর্থন দিচ্ছেন। এ ছাড়া দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ফিলিস্তিনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা সালাম ফায়াদও তাদের সঙ্গে রয়েছেন।

ফিলিস্তিনি নির্বাচন কমিশন

ফাতাহ এবং হামাস পশ্চিমতীর ও গাজায় সম্মত হলেও ইসরায়েলের দখল করা জেরুজালেমে ভোটগ্রহণ এখনো অনিশ্চিত। কারণ তেল আবিব থেকে রাজধানী স্থানান্তরের পর ইসরায়েল জেরুজালেমে ফিলিস্তিনের সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কিন্তু ফিলিস্তিনের নেতারা যে করেই হোক এ শহরে ভোট করতে চাইছেন। কারণ ভবিষ্যত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হবে এ অঞ্চল।

ফিলিস্তিনের গাজাবিষয়ক বিশ্লেষক হানি হাবিব বলেন, নির্বাচনে ফাতাহ ও হামাস ঐক্যবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন জো বাইডেন প্রশাসনকে ‘আমরা আলোচনার জন্য প্রস্তুত’ এমন বার্তা দিতে চাইছে। কারণ সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে এ সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে।

২০০৬ সালে ফিলিস্তিনে সর্বশেষ পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে হামাস জয়লাভ করে সব হিসাব উল্টে দিয়েছিল। তবে এরপর থেকে ফাতাহর সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক বিরোধ দেখা দেয়, যা ২০০৭ সালে হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ নিলে আরও জটিল হয়। তখন থেকেই গাজা অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল।