ভঙ্গুরপ্রায় পাকিস্তানের অর্থনীতি!

পাকিস্তানের দুর্বল অর্থনীতি বেশ কিছু কারণে বর্তমানে আরো নাজুক পরিস্থিতির সম্মুখীন। আবেগের ওপর ভর করে নেয়া সিদ্ধান্ত, রেকর্ড পরিমান মূল্যস্ফীতি এবং আঞ্চলিক বাণিজ্য সমস্যাগুলোর চাপে দেশটির অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এখন প্রায় ভঙ্গুর অবস্থায়।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে পাকিস্তানে মূল্যস্ফীতি ছিলো ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। মার্চে তা বেড়ে ৯ শতাংশের বেশি দাঁড়িয়েছে। পণ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধি ও ঘাটতি পূরণে ভারত থেকে সড়ক এবং সমুদ্রপথে চিনি, তুলা, তুলার সুতা আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তানের ইকোনমিক কোঅর্ডিনেশন কমিটি (ইসিসি)। কিন্তু এই উদ্যোগটি প্রত্যাখান করে দেশটির কেন্দ্রিয় মন্ত্রীপরিষদ।

পাকিস্তানের দৈনিক ডন জানিয়েছে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান যখন বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন তখন তিনি ইসিসির প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ দেখেছিলেন এবং এর অনুমোদনও দিয়েছিলেন। তাই হঠাৎ করে তার এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন সবাইকে বিস্মিত করেছে। ইসিসির সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়িত হলে দুইবছর পর দেশদুটির মধ্যে আবারো বাণিজ্য শুরু হতো।

হঠাৎ করে ইমরান খান অর্থমন্ত্রী ড.আব্দুল হাফেজ শাইখকে পদচ্যুত করেন। বলা হচ্ছে, কোভিড-১৯ মহামারির কঠিন সময়ে শক্ত হাতে দেশের অর্থনীতির হাল ধরা সত্ত্বেও শাইখের বিরুদ্ধে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

উল্লেখ্য, মহামারির সময়ে ৪ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক সহায়তা জোগাড়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন শাইখ।

মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসনের সমালোচনা প্রধান কারণ হলেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে শাইখকে পদচ্যুত করা হয়। পাকিস্তানের ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকসের দেয়া তথ্যে দেখা যায়, শাইখকে পদচ্যুত করার তিনদিন পর মূল্যস্ফীতি রেকর্ড সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, আগের বছরের তুলনায় বিদ্যুতের দাম ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ, রান্নাঘরের প্রায় সব সামগ্রীর দাম দুই অঙ্ক করে বেড়েছে। এছাড়াও গত বছরের তুলনায় ডিমের দাম ৬৪ শতাংশ, গম ৩৫ শতাংশ, চিনি ২৪ শতাংশ, গমের আটা ১৯ শতাংশ বেড়েছে।

এমন পরিস্থিতি সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তার কার্যক্রমের বিষয়ে অটল ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে থাকা মন্ত্রীপরিষদ অর্থসহায়তা পেতে আইএমএফের শর্তপূরণের অনুমতি দেয়। এসব শর্তের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো, ধাপে ধাপে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি করে ১৮ মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ৯০০ বিলিয়ন রূপি অতিরিক্ত চার্জ আদায় করতে হবে, আসন্ন বাজেটে ৭০০ কোটি রূপি অতিরিক্ত কর অন্তর্ভুক্ত করা এবং আরো অন্যান্য পদক্ষেপ।

ডনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইমরান খান স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের (এসবিপি) অভূতপূর্ব ও নিরঙ্কুশ স্বায়ত্তশাসন প্রদান করেছেন। এছাড়া অর্থমন্ত্রী হিসেবে হামাদ আজহারকে দায়িত্ব দেয়ার পর গণমাধ্যমগুলোয় গুঞ্জন উঠে যে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সাবেক অর্থমন্ত্রী শওকত তারিনকে অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের দায়িত্ব দেয়া হবে।

সাবেক অর্থমন্ত্রী শাইখ এবং গভর্নর ড.রেজার নেয়া বিভিন্ন নীতিমালা বিশেষ করে উচ্চ সুদের হার, মুদ্রার অতি অবমূল্যায়ন এবং বিদ্যুত, গ্যাস ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধিতে নেয়া পদক্ষেপগুলোর কড়া সমালোচক এই তারিন।