ইরান-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা, বিপদে ইইউ

ইরান পরমাণু চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরোক্ষভাবে আলোচনা শুরুর কথা জানিয়েছে। মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় দুই পক্ষের মধ্যে এ আলোচনা হয় বলে খবর দিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।

পরমাণু ইস্যুতে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা শুরু

ইরান দাবি করে আসছিল, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আগ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো আলোচনায় তারা বসবে না। মূলত এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইতিবাচক বক্তব্য আসার পরই তেহরান আলোচনায় সম্মতি দিয়েছে বলে খবর দিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবসরপ্রাপ্ত মুখপাত্র সাঈদ খতিবজাদেহ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার যে আগ্রহ দেখিয়েছে, তাতে সাড়া দিয়ে তেহরান সহযোগিতার সঠিক পথেই রয়েছে। সাঈদ নিজে ২০১৮ সালের মে মাসে পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ঠেকাতে সে সময় কাজ করেছিলেন। তার মতে, তেহরান শুধু কথা নয়, দালিলিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র কত দ্রুত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে, তার ওপর এ আলোচনার সফলতা নির্ভর করছে।

ভিয়েনার এ আলোচনা যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান দুই দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। এ আলোচনা দুই বছর আগে শুরু হয়েছিল। এতে স্বাক্ষর করেছিল ইরান, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, চীন ও রাশিয়া।

এ আলোচনার আলোকে সম্প্রতি রব মালের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ প্রতিনিধিদল তেহরান সফর করে। সেখান থেকে সোজা তারা ভিয়েনা যান। পরোক্ষ আলোচনা এজন্য বলা হচ্ছে, ভিয়েনায় বাস্তবে যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রতিনিধি দলের কেউ অংশ নেননি। তাদের পক্ষে অংশ নেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) তিন প্রতিনিধি।

অন্যদিকে, ইরানের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন উপ-পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। তাকে সহায়তা করেন দি ইউনিভার্সিটি অব কেন্টের একজন প্রখ্যাত ব্যক্তি, যিনি ২০১৫ সালে ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তি আলোচনাতেও অংশ নিয়েছিলেন।

উভয়পক্ষ বলেছে, মঙ্গলবারের আলোচনা পরমাণু চুক্তি রক্ষার ক্ষেত্রে সমাধানের একটি পথ তৈরি করবে। কিন্তু তা এখনই হবে, এমন নিশ্চয়তা নেই। হয়তো কয়েক মাস লেগে যেতে পারে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পতাকা

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে ২০১৮ সালে ওয়াশিংটন এ চুক্তি থেকে একতরফাভাবে বেরিয়ে যায়। দায়িত্ব নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, তিনি তার পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে এবং ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে ফিরে যেতে প্রস্তুত রয়েছেন।

এরপর গত ৫ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের সামনে যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলো কখনই খাটো করে দেখছি না। মাত্র আলোচনা শুরু হচ্ছে। দ্রুত কোনো বিরাট অগ্রগতি আশা করছি না। কারণ আমরা ধারণা করছি, আলোচনা কঠিন হবে। তবে বাইডেন প্রশাসনের লক্ষ্য হলো, চুক্তি মেনে চলতে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার মঞ্চ প্রস্তুত করা।

কিন্তু ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, মঙ্গলবারের বৈঠক হলো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের উপায় নিয়ে আলোচনা। উভয় দেশের মধ্যকার এ আলোচনা যে আরও কয়েক দফায় গড়াবে তা নিশ্চিত। কিন্তু শুরু হওয়া আলোচনায় উভয়পক্ষ যদি নিজেদের অবস্থান থেকে সরে না এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চায় তাহলে গ্যাঁড়াকলে পড়বে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কারণ তখন ইইউকে যুক্তরাষ্ট্র অথবা ইরানের মধ্যে একপক্ষকে বেছে নিতে হবে।