বাবরি মসজিদের পর এবার টার্গেট জ্ঞানবাপী মসজিদ!

বাবরি মসজিদ ঘটনার পর ভারতে আবার ঘনিয়ে উঠেছে মন্দির-মসজিদ বিতর্ক। এবার আলোচনায় ভারতের উত্তরপ্রদেশের জ্ঞানবাপী মসজিদ (আলমগিরি মসজিদ)। কট্টর হিন্দুদের দাবি, মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের ওপর গড়ে উঠেছে এ মসজিদের সৌধ। এর মীমাংসার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আর্কিওলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়াকে।

বাবরি মসজিদের পর এবার টার্গেট জ্ঞানবাপী মসজিদ!

তিন দশক পর জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে নির্দেশ দিল আদালত। পুরাতত্ত্ব বিভাগকে এ ব্যাপারে পাঁচ সদস্যের কমিটি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালতের রায় হাতে আসার পর তড়িঘড়ি কমিটি তৈরির কাজ শুরু করেছে পুরাতত্ত্ব বিভাগ।

প্রায় তিন দশক আগে এক মামলায় অভিযোগ করা হয়েছিল, মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব কাশীর বিশ্বনাথের মন্দির ভেঙে জ্ঞানবাপী মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। এ অভিযোগ ঠিক কিনা, তা খতিয়ে দেখতেই এ নির্দেশ দেন ফাস্ট ট্রেক কোর্টের বিচারক আশুতোষ তিওয়ারি।

আদালতের নির্দেশ, বিশেষজ্ঞ এবং দুই ধর্মে বিশিষ্টদের নিয়ে তৈরি করতে হবে পাঁচ সদস্যের কমিটি। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, মাসখানেক আগে ‘প্লেসেস অব ওরশিপ স্পেশাল প্রভিশন্স অ্যাক্ট ১৯৯১’-এর সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়, সে বিষয়ে কেন্দ্রের কাছে জবাব তলব করেছে শীর্ষ আদালত। ওই আইন অনুযায়ী, ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ সাল থেকে আর কোনো ধর্মস্থলের স্বরূপ পরিবর্তন করা যাবে না। অর্থাৎ, ওই দিনের পর থেকে বিতর্ক থাকলে কোনো মসজিদকে ভেঙে মন্দির করা যাবে না, বা কোনো মন্দির ভেঙে মসজিদ তৈরি করা যাবে না। তবে এক্ষেত্রে মামলা চলায় অযোধ্যাকে আইনটির আওতার বাইরে রাখা হয়েছিল।

বাবরি মসজিদের পর এবার টার্গেট জ্ঞানবাপী মসজিদ!

২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কাশী বিশ্বনাথ করিডর নির্মাণের কাজ শুরু করেন। প্রায় ৬০০ কোটি টাকার এ প্রকল্পে বিশ্বনাথ মন্দির থেকে গঙ্গার ঘাট পর্যন্ত সড়ক সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়। ফলে জ্ঞানবাপী মসজিদের আশপাশের বেশ কিছু বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়। মসজিদের কেয়ারটেকার সাইদ ইয়াসিন আশঙ্কা প্রকাশ করেন, চারপাশ ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় জমায়েতের আশঙ্কা বেড়েছে। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের আগেও এভাবেই বিতর্কিত কাঠামোটির চারপাশ খালি করা হয়েছিল।

আলমগিরি মসজিদের গল্পটা অনেক পুরোনো। ফিরে যেতে হবে নয়ের দশকের গোড়ায়। ১৯৯১ সাল। হঠাৎ একদিন খবর চাউর হয়, বারাণসী সিভিল কোর্টে একটি মামলা হয়েছে। মামলা করেছেন স্বয়ম্ভূ জ্যোতির্লিঙ্গ ভগবান বিশ্বেশ্বর নামে এক ব্যক্তি। তার দাবি, আংশিক নয়, গোটা মসজিদের নীচে রয়েছে বিশ্বনাথ মন্দিরের ভগ্ন অবশেষ।

জ্যোতির্লিঙ্গ এটুকু বলেই থেমে যাননি। তিনি দাবি তোলেন, মন্দির-মসজিদের পুরো চত্বর থেকে মুসলিমদের দূর করা হোক। ভেঙে ফেলা হোক গোটা মসজিদ। তারপর সেখানে নতুন করে তৈরি হোক বিশ্বনাথ মন্দিরের ভিত্তি।

এরপর সাত বছর পরের ঘটনা। জ্যোতির্লিঙ্গের আগ্রাসী পিটিশনের পালটা জবাব দেয় অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটি। তারা বলেন, সিভিল কোর্টে ধর্মীয় বিতর্কের শুনানি চলাটাই আইনবিরুদ্ধ বিষয়। গোটা ইস্যুটিকে হাই কোর্টে নিয়ে যাওয়া হোক। বারাণসী আদালতে এরপর নতুন করে শুনানি শুরু হয়। এক বছর, দুই বছর করে টানা ২২ বছর কাটে। কিন্তু কোনো সমাধান মেলে না।

তারপর ২০১৯। আইনজীবী বিজয়শঙ্কর রস্তোগি জ্যোতির্লিঙ্গের হয়ে পুনরায় আবেদন করেন। পাশাপাশি এএসআই-এর হস্তক্ষেপ চান। তবে শুধুমাত্র জ্ঞানবাপী মসজিদ খননের আর্জি জানান তিনি। গত বছর জানুয়ারিতে এর বিরুদ্ধে মুখ খোলে মসজিদ কর্তৃপক্ষ। তারা মসজিদের পাশাপাশি মন্দিরের পুরাতাত্ত্বিক খননেরও আবেদন করেন।

আপাতত এ অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে দুই পক্ষ। মামলার দ্রুত শুনানি চেয়ে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে আর্জি জানান রস্তোগি। বৃহস্পতিবার যার রায় ঘোষণা করে বারাণসী আদালত।