অনড় ইরান, পশ্চিমাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ

পারমাণবিক বোমা তৈরির পথে আরও এক পদক্ষেপ এগিয়ে গেল ইরান। শনিবার (১০ এপ্রিল) দেশটি তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ শুরুর ঘোষণা দিয়েছে। এদিন নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রে ১৬৪ আইআর-৬ সেন্ট্রিফিউজের বাক্সগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে বিজ্ঞানীদের হাতে তুলে দেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি।

অনড় ইরান, পশ্চিমাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ

বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, এ পদার্থ ও ইউরেনিয়ামের সংযোগে যেমন বিদ্যুৎ তৈরি করা যায়; তেমনি পারমাণবিক অস্ত্রও বানানো যায়। তেহরানের ভাষায়, বেসামরিক ব্যবহারের জন্য পরমাণুর সমৃদ্ধকরণ হলো।

গত মঙ্গলবার ভিয়েনায় অন্যান্য আন্তর্জাতিক পক্ষের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনায় বসে ইরান। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রকে ফের চুক্তিতে অংশীদার করা নিয়ে আলোচনার মধ্যেই সরাসরি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ বিশ্বে উদ্বেগ ছড়াবে। একই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার সমীকরণ পাল্টে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

২০১৫ সালে নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য- যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে ইরান। চুক্তির শর্ত মতে, পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত থাকে তেহরান। বিপরীতে তেহরানের ওপর থেকে বেশকিছু আর্থিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় যুক্তরাষ্ট্রসহ চুক্তি স্বাক্ষরকারী দেশগুলো।

কিন্তু ২০১৮ সালে চুক্তি থেকে একতরফাভাবে বেরিয়ে যায় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। তবে গত বছর জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর চুক্তিতে আবারো দেশটির ফেরার পথ তৈরি হয়। এরই অংশ হিসেবে ভিয়েনায় পরোক্ষভাবে তেহরানের সঙ্গে বৈঠকে বসে ওয়াশিংটন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, বৈঠকে পারমাণবিক চুক্তিতে ফিরতে যুক্তরাষ্ট্র কোনো নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে না বলে জানানোর পর গত শুক্রবার (৯ এপ্রিল) দুই দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা হয়। ইরান চাচ্ছে, ২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসন চুক্তি থেকে বেরিয়ে যেসব নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, সেসব তুলে নেওয়া হোক। কিন্তু ওয়াশিংটন বলছে, তেহরান তাদের দাবি থেকে না নড়লে আলোচনা ফলপ্রসূ হবে না।

অনড় ইরান, পশ্চিমাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেছেন, ‘ট্রাম্পের আরোপিত সব নিষেধাজ্ঞা ছিল চুক্তিবিরোধী এবং তা অবশ্যই প্রত্যাহার করতে হবে।’ তবে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ‘জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়, এমন সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে তারা প্রস্তুত।’ এর অর্থ- চুক্তিতে থাকা পারমাণবিক বিষয়গুলোর বাইরে জারি থাকা কোনো নিষেধাজ্ঞা তুলবে না ওয়াশিংটন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক চুক্তিতে ফেরার আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে তা যথেষ্ট হবে না যদি ইরান তাদের অবস্থানে অটল থাকে। তারা যদি ২০১৮ সালের পর আরোপিত সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বলে বা কোনো চুক্তি না হয়, তবে আমরা অন্য পথ বেছে নেব।’

দুই দেশের কঠোর অবস্থান ঘিরে ইউরোপিয়ান কর্মকর্তারা বলছেন, ইরান সর্বোচ্চ দর কষাকষি চালিয়ে যাচ্ছে। এতে চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেরার পথ ক্রমেই রুদ্ধ হয়ে পড়ছে।

ভিয়েনার ওই বৈঠকে পরমাণু চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী সব দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। পরে শুক্রবার আবার তারা বৈঠকে বসেন এবং আলোচনা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেন।

জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার প্রতিনিধি মিখাইল উলিয়ানভ বলেন, ‘গত তিন দিনে যে প্রাথমিক অগ্রগতি হয়েছে, তাতে সন্তুষ্ট যৌথ কমিশনের সদস্যরা। ইতিবাচক অগ্রগতি ধরে রাখতে আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত আলোচনা চালাবে কমিশন।’ অন্য পক্ষগুলো দুটি বিশেষজ্ঞ স্তরের দল গঠন করেছে। তারা যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নেবে, তার তালিকা এবং ইরান যে শর্তগুলো মানবে, তার তালিকা তৈরি করবে।

জাতিসংঘের পরমাণু শক্তি সংস্থায় চীনের রাষ্ট্রদূত ওয়াং কুন বলেন, ‘সব পক্ষই তাদের পার্থক্য কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। আমরা ধীরে ধীরে সম্মতির দিকে যেতে দেখব।’