মুয়াজ্জিন হত্যা: মিয়ানমারে এবার ধর্মীয় বিভেদে ‘উস্কানি’ জান্তার

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে গণতন্ত্রের দাবিতে বিক্ষোভে অংশ নিয়ে এ পর্যন্ত অন্তত ৭১৪ জন নিহত হয়েছে। দি অ্যাসিসট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) এ তথ্য দিয়ে বলেছে, গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে জান্তা সরকার বর্বর দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এদের মধ্যে ৬৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে। আর ৭১৭ জনের বিরুদ্ধে হুলিয়া দেওয়া হয়েছে।

মুয়াজ্জিন হত্যা: মিয়ানমারে এবার ধর্মীয় বিভেদে ‘উস্কানি’ জান্তার

এএপিপির অভিযোগ, সামরিক বাহিনী তাদের স্বভাবজাত কৌশলের অংশ হিসেবে ধর্মীয় বিভেদ তৈরিতে উস্কানির চেষ্টা করে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ইয়াঙ্গুনের তেমি শহরের একটি মসজিদের ভেতেরই মুয়াজ্জিনকে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করেছে। তার লাশ যখন মানুষ দেখতে পান, হাত পিঠমোড়া করে বাঁধা ছিল। প্রত্যেকের বেঁচে থাকা, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে, এটি তার মৌলিক অধিকার বলছে সংস্থাটি।

মিয়ানমারের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, জান্তা সরকার বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নির্মম অত্যাচার করছে। এর ফলে সেনাদের একাংশ বাহিনী ছাড়তে চেয়েও পারছেন না। কারণ এতে তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপর একই ধরনের বর্বরতা নেমে আসবে। পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন।

মিয়ানমার নাও খবর দিয়েছে, জান্তার পরিবারকে জিম্মি না করলে অনেক সেনা সদস্য একনায়কতন্ত্রের সঙ্গ ছাড়তে রাজি। অবশ্য অনেক সামরিক কর্মকর্তা জান্তার অধীনে কাজ করা থেকে ইতিমধ্যে বিরত রয়েছেন। গত মাসে ইয়াঙ্গুনে ৭৭ পদাতিক ডিভিশনের এক ক্যাপ্টেনসহ চার সেনা সদস্য দমন-পীড়ন ছেড়ে জনতার সাথে রাস্তায় বিক্ষোভে নামেন। অন্যান্য সেনা সদস্যরাও এখন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন এবং সুযোগ পেলে অন্য দেশে তারা পালিয়ে যাচ্ছেন বলে মিয়ানমার নাও উল্লেখ করেছে।

মুয়াজ্জিন হত্যা: মিয়ানমারে এবার ধর্মীয় বিভেদে ‘উস্কানি’ জান্তার

গত ১ ফেব্রুয়ারি অং সাং সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতার দখল নেয় সেনাবাহিনী। সু চিসহ শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকে জান্তার বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্রের দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ করে আসছে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের শঙ্কা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

মিয়ানমারের পরিস্থিতি পুরোপুরিভাবে সংঘাতের দিকে অগ্রসর হচ্ছে সতর্ক করে বুধবার (১৪ এপ্রিল) জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচলেট বলেছেন, ‘মিয়ানমারে যেন সিরিয়ার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সজাগ থাকতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সিরিয়া এবং বিশ্বের অন্যত্র ঘটে যাওয়া অতীতের মারাত্মক ভুলের পুনরাবৃত্তি মিয়ানমারে করতে দেওয়া উচিত হবে না। ২০১১ সালে সিরিয়ার যে পরিস্থিতি ছিল, অভ্যুত্থান পরবর্তী মিয়ানমারে তার স্পষ্ট প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে।’