নেতা গ্রেপ্তারের জের, আন্দোলনকারীদের হাতে ৬ পুলিশ বন্দি

অগ্নিগর্ভ পাকিস্তান! মহানবী হজরত মোহাম্মদ (স)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশকে কেন্দ্র করে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত বহিষ্কারের দাবিতে লাগাতার বিক্ষোভে জ্বলছে দেশটি। এ বিক্ষোভের জেরে ইসলামী দল ‘তেহরিক-ই-লাবায়েক পাকিস্তান’ (টিএলপি)-এর শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হলে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে বিক্ষোভ। খবরে বলা হয়েছে, রোববার ৬ জন পুলিশ সদস্যকে অপহরণ করেছে টিএলপি। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করল।

তেহরিক-ই-লাব্বায়েক পাকিস্তান (টিএলপি) কর্মীদের বিক্ষোভ

রোববার দিনভর পুলিশের সঙ্গে টিএলপির সমর্থকদের সংঘর্ষ চলতে থাকে। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি নিষিদ্ধ হওয়া ওই সংগঠনের দাবি, তাদের চারজন সমর্থক মারা গেছে পুলিশের গুলিতে। সহিংসতার আঁচ যাতে আরও ছড়িয়ে না পড়ে, সেই কারণেই পাকিস্তানের কোনো নিউজ চ্যানেলে ওই সংঘর্ষের দৃশ্য দেখানো হয়নি। কিন্তু টিএলপি’র অনেক সমর্থক সোশ্যাল মিডিয়ায় রোববারের সংঘর্ষের বিভিন্ন ভিডিও শেয়ার করেছেন। সেই সঙ্গে তাদের দলের সমর্থনে হ্যাশট্যাগও ছড়িয়ে দিয়েছেন তারা।

লাহোর পুলিশের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, দুটি জ্বালানি ট্যাঙ্কারে কয়েক হাজার লিটার পেট্রল নিয়ে সংঘর্ষ শুরু করেন টিএলপি সমর্থকরা। তারা পুলিশ সদস্যদের গায়ে পেট্রল বোমা ও পাথর ছুড়ে মারতে থাকেন। এরপর ৬ জনকে অপহরণ করে নিজেদের সদর দপ্তরে নিয়ে যান তারা। সদর দপ্তরে যাওয়ার সব রাস্তা অবরুদ্ধ করে দিয়ে পুলিশকে আরও বিপাকে ফেলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, সদর দপ্তরে পৌঁছতে পারেনি পুলিশ।

টিএলপি আগে থেকেই সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, ২০ এপ্রিলের আগেই পাকিস্তানের ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করতে হবে। সেই দাবি মানেনি ইমরান সরকার। সেখান থেকেই শুরু প্রতিবাদের। আসলে ফ্রান্সে হজরত মোহাম্মদ (স)-এর ব্যঙ্গচিত্র আঁকাকে কেন্দ্র করেই টিএলপির বিক্ষোভ। তাদের দাবি, ফ্রান্সের সঙ্গে সব রকম সম্পর্ক বন্ধ করতে হবে। কেবল ফরাসি রাষ্ট্রদূতই নয়, দেশ থেকে চলে যেতে হবে ফরাসি নাগরিক ও সংস্থাগুলোকেও।

আটক টিএলপি প্রধান সাদ হুসাইন রিজভি

নভেম্বরে ইমরান খানের ‘তেহরিক-ই-ইনসাফ’ সরকার ওই ফরাসি রাষ্ট্রদূতের বহিষ্কারের ব্যাপারে সম্মতি জানিয়ে টিএলপির সঙ্গে চুক্তি করেছিল। তখন জানা গিয়েছিল, ফেব্রুয়ারির মধ্যেই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে সরকার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। সেই চুক্তির মেয়াদই শেষ হচ্ছে মঙ্গলবার। এরইমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে দলের প্রধান সাদ হুসাইন রিজভিকে।

টিএলপির এ বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে সম্প্রতি অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। এরপর দলটিকে নিষিদ্ধ করা হয়।

ফ্রান্সের একটি শ্রেণিকক্ষে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স)-এর ব্যঙ্গচিত্র ব্যবহার এবং ম্যাগাজিনে ওই ব্যাঙ্গচিত্র প্রকাশের অধিকারের পক্ষে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো অবস্থান নেওয়ার পর টিএলপি এক মাস ধরে ইসলামাবাদ থেকে ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের দাবিতে আন্দোলন করছে। এ অবস্থায় ইসলামাবাদে অবস্থিত ফরাসি দূতাবাস তার দেশের জনগণকে পাকিস্তান ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। অনেক ফরাসি নাগরিক পাকিস্তান ছাড়ছেন বলে খবরে বলা হয়।