আশঙ্কার চেয়েও ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়ছে ভারতের অর্থনীতি

যতদিন যাচ্ছে, ভারতের অবস্থা তত ভয়ানক হয়ে উঠছে। করোনা সংক্রমণে আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে দেশটি। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ লাখের বেশি মানুষ নতুন করে এ প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বিশ্বে এই প্রথম কোনো দেশে একদিনে ৩ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেন। এক দিনে মারা গেছেন ২ হাজারের বেশি মানুষ।

‘পিউ রিসার্চ সেন্টার’-এর তথ্যমতে, ২০২০ সালে ভারতে দারিদ্র্য বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, দেশটির হাসপাতালগুলোতে এখন শয্যা খালি নেই। অস্বাভাবিক হারে চিকিৎসক-নার্সরা আক্রান্ত হচ্ছেন। অক্সিজেন ও চিকিৎসা সামগ্রীর অভাব। টিকা নিয়ে রাজ্যগুলোর সঙ্গে কেন্দ্রের মনোমালিন্য বাড়ছে। শ্মশানে নিভছে না আগুন। কবরস্থানে লাশ রাখার জায়গা নেই। চলছে হাহাকার অবস্থা।

এ পরিস্থিতিতে ফের লকডাউনের আতঙ্ক ছড়াতে শুরু করেছে অনেকের মনে। যদিও এ মুহূর্তে সেই পথে হাঁটতে চাইছে না কেন্দ্র। কিন্তু তা না হলেও সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কাতেই দেশের অর্থনীতি প্রবল সংকটের মুখে পড়তে চলেছে। তেমনটাই আশঙ্কা অর্থনীতিবিদদের। ‘নমুরা’ প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক রিপোর্টের দাবি, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব আশঙ্কার থেকেও খারাপ হতে চলেছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিনের খবরে বলা হয়, করোনা মহামারির প্রথম পর্যায়ে তথা সংক্রমণের প্রথম ঢেউয়ের ধাক্কায় ভারতের দারিদ্র্য দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল। ‘পিউ রিসার্চ সেন্টার’-এর এক রিপোর্ট থেকে তেমনটাই জানা গিয়েছিল। তার সঙ্গেই মুখ থুবড়ে পড়েছিল জিডিপি। লকডাউনের অপ্রত্যাশিত ধাক্কায় বিপুল পরিমাণ মানুষ কাজ হারিয়েছিলেন। প্রসঙ্গত, ২০১১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দারিদ্র্য মোকাবিলায় ভারত অনেকটাই সাফল্য পেয়েছিল। কিন্তু ২০২০ সালে করোনার ধাক্কায় রাতারাতি মুখ থুবড়ে পড়ে পরিস্থিতি। এমনিতেই দেশের অর্থনীতির পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হতে শুরু করেছিল। লকডাউনে তা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে।

করোনা মহামারিতে ভারতের অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসার প্রতীকী চিত্র

এ পরিস্থিতিতে দেশে শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। যাকে ঘিরে ফের সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছেন অর্থনীতিবিদরা। ‘নমুরা’র রিপোর্ট বলছে, যেভাবে সংক্রমণের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে তাতে ছোটখাটো ব্যবসা প্রবলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশব্যাপী লকডাউন না হলেও, যেভাবে বহু রাজ্য লকডাউনের পথে হাঁটতে শুরু করেছে, তার ফল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে চলেছে।

এরইমধ্যে মুম্বাই ও দিল্লিতে এর কুফল দেখা যাচ্ছে। যেহেতু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় বাড়তে থাকা সংক্রমণ কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, তাই সামগ্রিক ছবিটা যে আরও ভয়ানক হতে চলেছে, সেকথা ভেবে আশঙ্কিত বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, যদি টিকাকরণের পরিমাণ বাড়ে ও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসে, তাহলে আলাদা কথা। কিন্তু যদি মে মাসের শেষেও পরিস্থিতি উদ্বেগজনক থাকে, তাহলে মানুষের উপার্জনে তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে চলেছে।