সম্পর্কোন্নয়নে সুনির্দিষ্ট শর্ত পাকিস্তানের, মানবে কী ভারত

সম্পর্কের বরফ গলাতে আলোচনা শুরুর আগে কিছু বিষয়ে ভারতের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ প্রত্যাশা করে পাকিস্তান। বিশেষ করে কাশ্মিরের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করলে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় ইসলামাবাদ সম্মত বলে দেশটির একটি সূত্র আলজাজিরা বলেছে।

সম্পর্কোন্নয়নে সুনির্দিষ্ট শর্ত পাকিস্তানের, মানবে কী ভারত

পরিস্থিতি নিয়ে জানাশোনা থাকা পাকিস্তানি সূত্রটি প্রথমবারের মতো কী বিষয়ে ভারতীয় সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে, তার কিছু উদাহরণও তুলে ধরেছে।

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের পুলওয়ামায় সামরিক বাহিনীর ওপর সশস্ত্র হামলার পর ২০১৯ সাল থেকে পরমাণু শক্তিধর ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক কার্যত বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তবে এ বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যস্থতায় তাদের মধ্যকার বৈরি সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে।

অনানুষ্ঠানিক হলেও ২০০৩ সালের সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তি ধরে তারা আলোচনা করেছে। যৌথ নদী কমিশন বৈঠক করেছে এবং দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পরস্পরের কাছে চিঠি চালাচালি করেছেন। অবশ্য সম্পর্কের বরফ গলার ইঙ্গিত মিলেছিল গত মার্চে আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দিল্লি সফরে। আর পদক্ষেপ স্পষ্ট হয় বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে।

এ প্রতিবেদনে বলা হয়, গত জানুয়ারিতে সম্পর্ক উন্নয়নের অংশ হিসেবে গত জানুয়ারিতে আমিরাতে ভারত ও পাকিস্তানের উচ্চপদস্থ গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এক গোপন বৈঠকে মিলিত হন। যে বৈঠকের কথা গণমাধ্যমে আনেন যুক্তরাষ্ট্রে আমিরাতের রাষ্ট্রদূত ইউসেফ আল ওতাইব্যা।

তিনি বলেন, ‘কাশ্মিরকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে তার দেশ মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। এখন আবুধাবি আশা করছে, দুই দেশের সম্পর্ক এখন এমন একটি সুস্থ পর্যায়ে আসবে, যেখানে তারা পরস্পরের সাথে কথা বলবে, একে অন্যের রাজধানীতে হাইকমিশনারকে ফেরত পাঠাবে। হয়তো তারা ঘনিষ্ঠ বন্ধু হবে না। তবে আমরা চাই, তাদের মধ্যে আলোচনাটা শুরু হোক।’

ইউসেফ আল ওতাইব্যার এ বক্তব্যের পর করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশী বিমানে উড়ে আবুধাবি গিয়ে মুখোমুখি কথা বলেন।

সম্পর্কোন্নয়নে সুনির্দিষ্ট শর্ত পাকিস্তানের, মানবে কী ভারত

নামে প্রকাশে অনিচ্ছুক পাকিস্তানি সূত্র বলে, ‘কাশ্মির অঞ্চলের বিতর্ক আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেলেও একমাত্র তাদের পাশে রয়েছে পাকিস্তান। এজন্য কোনো আলোচনার জন্য প্রথমে আমরা কাশ্মিরিদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক দেখতে চায়।’

তিনি সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ উল্লেখ করেন, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে, আইন করে অন্যান্য অঞ্চল থেকে কাশ্মিরে এসে ভূমিকার যে অধিকার দেওয়া হয়েছে, তা বাতিল করতে হবে। ২০১৯ সালের আগস্টে সংবিধান থেকে ৩৭০ ধারা বিলোপের মাধ্যমে কাশ্মিরিদের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর থেকে উপত্যকাটির যেসব নাগরিকদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের মুক্তি দিতে হবে।

কাশ্মিরের যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক ও ব্যক্তির চলাচলের ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করতে হবে। অঞ্চলটি অবরুদ্ধ করতে ২০১৯ সালের আগস্টে যে বিপুলসংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়, তাদের প্রত্যাহার করতে হবে।

এসব পদক্ষেপ নিলে কাশ্মিরে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হবে। এরপরই কেবল পাকিস্তান আলোচনার জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ চিন্তা করবে। পাকিস্তানের দ্বিতীয় আরেকটি সূত্রের দাবি, এসব স্থায়ী দাবি ভবিষ্যতেও আলোচনা শুরুর শর্ত হিসেবে থাকবে। এগুলোর কোনোটিই যদি না হয়, তবে এ বিষয়ে আলোচনা এগোনোর আর সুযোগ নেই।

সম্পর্কোন্নয়নে সুনির্দিষ্ট শর্ত পাকিস্তানের, মানবে কী ভারত

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি পাকিস্তানি সূত্রের এসব শর্তের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জাহিদ হাফিজ চৌধুরীও দুই দেশের মধ্যকার বর্তমান যোগাযোগের সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে মন্তব্য করেননি। কিন্তু তিনি উল্লেখ করেন, পুনরায় অর্থবহ ও ফলপ্রসূ আলোচনা শুরু করতে হলে ভারতকেই কাশ্মিরে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। কারণ ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট তারাই পরিবেশটা নষ্ট করেছে।

মজার বিষয়, পাকিস্তান আলোচনা শুরুর জন্য ভারতের সংবিধানে ৩৭০ অনুচ্ছেদ পুনর্বহালের কোনো শর্ত দেয়নি। সূত্র বলছে, ৩৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে আমাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। কারণ আমরা সংবিধানের এ পদক্ষেপকে কখনো স্বীকৃতি দেইনি। তারা এটা ফেরাল কিনা তার চেয়ে বড় বিষয় কাশ্মীরিদের ‘স্বতন্ত্র পরিচয়’ পাওয়া জরুরি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তান যদি ৩৭০ অনুচ্ছেদ পুনর্বহালের কোনো শর্ত না দেয়, এর অর্থ তারা আলোচনা সামনে এগোতে চাইছে। দিল্লির দি কাউন্সিল ফর স্ট্রাটেজিক অ্যান্ড ডিফেন্স রিসার্চের প্রতিষ্ঠাতা হ্যাপিমুন জ্যাকব বলেন, ‘আমার মনে হয় পাকিস্তান সরকার ভালোই জানে ভারত কী করবে; কী করবে না। আর শর্তগুলো আলোচনার দাবি রাখে এবং এগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব। তবে পাকিস্তান ভূখণ্ডের সন্ত্রাসবাদের ঘাঁটি গুড়িয়ে দিতে ভারতের দাবিও দেশটিকে পূরণ করতে হবে।’

ইসলামাবাদভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক জিন্না ইনস্টিটিউটের সালমান জাইদি বলেন, ‘তৃতীয় বেসামরিক পক্ষের মধ্যস্থতায় আলোচনা হয়েছে। সুতরাং এ বিষয়ে আরও পর্যবেক্ষণ জরুরি।’

পাকিস্তানি সূত্রের দাবি, ‘পাকিস্তান আলোচনা নিয়ে উচ্ছ্বসিত। কিন্তু খুবই সতর্ক পা ফেলছে। কারণ কাশ্মির স্বতন্ত্র ইতিহাস। ভারত সম্পর্ক উন্নয়নে কাশ্মির নিয়ে আলোচনা করতে চায় কিনা তা খুবই সতর্কতার সাথে পরীক্ষা করা হবে।’