জান্তা-আসিয়ান সমঝোতা, ফিরবে কী গণতন্ত্র

মিয়ানমারে শান্তি ফেরাতে আলোচনার বিকল্প দেখছে না আঞ্চলিক জোট আসিয়ান। এজন্য বিবদমান সব পক্ষকে আলোচনায় বসাতে মধ্যস্থতার প্রস্তাবের পাশাপাশি মিয়ানমারে মানবিক সহায়তা দিতে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছেন জোটের নেতারা।

জান্তা-আসিয়ান সমঝোতায় কী ফিরবে গণতন্ত্র

ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় শনিবার (২৪ এপ্রিল) আসিয়ান নেতাদের বৈঠক শেষে জোটের পক্ষ থেকে দেওয়া পাঁচ দফায় এসব কথা বলা হয়। মিয়ানমারে রক্তপাত বন্ধ করতে আয়োজিত এ বৈঠকে দেশটির সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং উপস্থিত ছিলেন।

তবে ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে এর বিরুদ্ধে ও গণতন্ত্র ফেরানোর দাবিতে মিয়ানমারের বিক্ষোভকারীরা আসিয়ানের পাঁচ দফা সমঝোতার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে রবিবার (২৫ এপ্রিল) তারা স্পষ্ট জানিয়েছেন, সংঘাতে সৃষ্ট জাতীয় সংকট নিরসনে জান্তাপ্রধান ও আসিয়ান নেতারা যে সমঝোতায় পৌঁছেছেন, তা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে যথেষ্ট নয়। একই সাথে মাত্র কয়েক মাসে যে শত শত বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হলো, তার জন্য জান্তাপ্রধানকে ন্যূনতম জবাবদিহি করা হয়নি।

জান্তার এ বৈঠকের পরদিন রবিবার মিয়ানমারের বড় শহরগুলোতে কোনো বিক্ষোভ হয়নি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ সমঝোতার কড়া সমালোচনা করা হচ্ছে। মাওচি তুন তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘জান্তার হাতে খুন, নিপীড়নের শিকার হলো যেসব সাধারণ মানুষ, আসিয়ানের বিবৃতি তাদের গালে চপেটাঘাত ছাড়া কিছুই নয়।’

জান্তা-আসিয়ান সমঝোতায় কী ফিরবে গণতন্ত্র

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং প্রথম বিদেশ সফরে জাকার্তায় যান। সেখানে তিনি অংশ নেন ১০ দেশের আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের বৈঠকে। বিক্ষোভ দমনের নামে মিয়ানমারে রক্তপাত বন্ধ করা, আলোচনার পথ খোলা রাখা, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও রাজবন্দিদের মুক্তি— জান্তাপ্রধানের কাছে আসিয়ান নেতারা দাবি জানান।

বৈঠক শেষে আসিয়ানের বিবৃতিতে পাঁচ দফা উঠে আসে—

১. মিয়ানমারে বিবদমান সব পক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে সহিংসতার পথ ত্যাগ করবে ও চূড়ান্ত সংযম পালন করবে।

২. জনগণের স্বার্থে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে গঠনমূলক সংলাপ শুরু করতে হবে।

৩. আসিয়ানের সেক্রেটারি জেনারেলের সহায়তায় জোটের চেয়ারম্যানের বিশেষ দূত সংলাপে মধ্যস্থতা করবেন।

৪. আসিয়ান মিয়ানমারে মানবিক সহায়তা প্রদান করবে।

৫. আসিয়ানের বিশেষ দূত ও প্রতিনিধিদল বিবদমান পক্ষগুলোর সঙ্গে কথা বলার জন্য মিয়ানমার সফর করবে।

জান্তা-আসিয়ান সমঝোতায় কী ফিরবে গণতন্ত্র

বৈঠকে আসিয়ান নেতারা জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের কাছে নিরাপত্তা বাহিনীর লাগাম টানার প্রতিশ্রুতি চান, যাদের হাতে দি অ্যাসিসট্যান্স অ্যাসোসিয়েসন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্সের (এএপিপি) তথ্যে, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭৪৮ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। আর ৩ হাজার ৩০০ জনের বেশি গ্রেপ্তার হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সংঘাত বন্ধে যে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়নের কোনো রূপরেখা আসিয়ান তুলে ধরেনি। এমনকি ১ ফেব্রুয়ারি থেকে হাজার হাজার রাজনৈতিক বন্দির বিষয়েও কিছু বলা হয়নি। ফলে শেষ পর্যন্ত এটি একটি বৈঠক হিসেবেই চিহ্নিত হবে। এখান থেকে সমাধানের কোনো উদ্যোগ আসবে না।

জান্তা-আসিয়ান সমঝোতায় কী ফিরবে গণতন্ত্র

ন্যাঙ তিথ রুইন বলেন, ‘আসিয়ানের বিবৃতি জনগণের প্রত্যাশার বিপরীত। এখানে বন্দিদের মুক্তি, হত্যার দায় এমনকি নির্বাচনের ফলাফল ও গণতান্ত্রিক সরকার উৎখাত সচেতনভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এতগুলো জীবনের মূল্য কে চুকাবে?’

তবে দেশটির নেত্রী সু চির প্রশাসন ও জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী জাতীয় ঐক্যের সরকার (এনইউজি) আসিয়ানের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, জান্তাপ্রধানকে তার প্রতিশ্রুতি মেনে চলতে হবে। এনইউজির মুখপাত্র ডক্টর শাসা বলেন, ‘আসিয়ানের পদক্ষেপের ওপর আমরা নজর রাখছি। গণতন্ত্র ফেরাতে তাদের সিদ্ধান্ত কতটা কার্যকর আমরা দেখতে চায়।’

আসিয়ানের এ বৈঠকে মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া ও বৈঠকের সভাপতি হিসেবে ব্রনাইয়ের নেতা এবং লাউস, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।