গাজা সংকট: কী ভাবছে ইসরায়েলের আরব বন্ধুরা?
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
খুব বেশি দিন নয়, গত বছরের অক্টোবরের কথা। মধ্যপ্রাচ্যে ‘দখলদার’ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ চুক্তি করে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। পরে তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাহরাইন ও মরক্কো। আরো পরে এই তালিকায় যুক্ত হয় সুদানও। এ নিয়ে যখন গোটা মুসলিম দুনিয়ায় নানা সমালোচনা হচ্ছিল, তখন ইসরায়েল জোর গলায় দাবি করে, মধ্যপ্রাচ্যের আরো কয়েকটি দেশ তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে যাচ্ছে। এর সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং সৌদি যুবরাজ বিন সালমানের অন্যতম ঘনিষ্ঠ ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা
স্বাভাবিকভাবেই বেশ জোরালো গুঞ্জন চলছিল যে, ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরবর্তী তালিকায় রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব। সঙ্গে এ আলোচনাও ছিল যে, ইসরায়েলের সঙ্গে উল্লিখিত চার দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পেছনে মূল কারিগর বিন সালমান। অন্য দেশগুলোকে দিয়ে আগে কাজ করানোর মাধ্যমে নিজের কাজটা (সম্পর্ক স্বাভাবিক) করার রাস্তা পরিষ্কার করছেন তিনি।
যাই হোক, এখন ভিন্ন প্রসঙ্গে আসা যাক। সেটা হলো- গত বছরের ওই চুক্তির সময় মুসলিম বিশ্ব থেকে যখন ব্যাপক সমালোচনা হয় এবং ফিলিস্তিনিরা বলেই ফেলে যে, ‘তারা পেছন থেকে আমাদের পিঠে ছুরি মারছে’, তখন সৌদি আরবসহ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, এর মাধ্যমে বরং ফিলিস্তিনিরা উপকৃত হবে। কারণ চুক্তি অনুযায়ী অবৈধ বসতি স্থাপন তথা ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল থেকে সরে যাবে ইসরায়েল। এ ছাড়া ইসরায়েলি অবরোধ শিথিলসহ অর্থনৈতিক ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও পাবে ফিলিস্তিনিরা। পর্দার অন্তরালে কী হয়েছে, সেটা বলা মুশকিল- তবে বাস্তবে যা দেখা গেছে তাতে ফিলিস্তিনসহ মুসলিম উম্মাহর সিংহভাগই এই আশ্বাসে বিশ্বাস করতে পারেনি।
মুসলিম উম্মাহ তো বটেই, গোটা বিশ্ব যেন গত ১০ দিন ধরে সেই অনাস্থারই বাস্তবতা দেখছে ফিলিস্তিনে বর্বর ইসরায়েলি হামলার মাধ্যমে। সর্বশেষ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো যা বলছে, তাতে ফিলিস্তিন বিশেষ করে, ইসরায়েলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হামাসের অবস্থান গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। নিহত হয়েছেন দুই শতাধিক ফিলিস্তিনি, যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ শিশু। ইসরায়েল গর্ব করে বলেছে, আগামী কয়েক বছরে ঘুরতে দাঁড়াতে পারবে না হামাস।
এখন বিষয় হলো, ফিলিস্তিনে এই ধ্বংসযজ্ঞ ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর নতুন আরব মিত্রদের কাছে ইসরায়েল কি কোনো প্রশ্নের মুখে পড়বে? কিংবা এই অপরিপক্ক সম্পর্কে এর কি কোনো প্রভাব পড়বে?
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স তাদের এক বিশ্লেষণে বলেছে, সে ধরনের সম্ভাবনা একেবারে ক্ষীণ। কারণ আমেরিকার মধ্যস্ততায় ‘আব্রাহাম চুক্তির’ মধ্য দিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে উল্লিখিত তিন দেশের যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, সেখান থেকে বেরিয়ে বেশ কঠিন। তবে সৌদি আরবের কাছ থেকে ইসরায়েল স্বীকৃতি আদায়ের যে ‘দ্বারপ্রান্তে’ ছিল, সেটা প্রলম্বিত হতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিন তথা গাজায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের সমালোচনা উল্লিখিত দেশগুলোর পক্ষ থেকে করা হয়েছে। তবে তারা কিন্তু কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ব্যাপারে কোনো কথা বলেনি।
ট্রাম্পের উপস্থিতিতে হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের সঙ্গে সেই চুক্তির অনুষ্ঠান
মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্র স্থান আল-আকসা মসজিদে নিরীহ মুসল্লিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর সাড়াশি অভিযান এবং গাজা উপত্যাকায় নির্বিচার বিমান হামলার ঘটনাকে আরব দেশগুলোর কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের ‘প্রতিশ্রুতির নির্লজ্জ লঙ্ঘন’ বলে আখ্যায়িত করার পাশাপাশি নিন্দাও জানানো হয়েছে। তবে দেশগুলোর পক্ষ থেকে সেখানেও ‘সূক্ষ্ম ভারসাম্য’ বা ব্যালেন্স বজায় রাখা হয়েছে।
ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যকার সাম্প্রতিক সংঘাতে প্রেক্ষাপটে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পক্ষ থেকে তেল আবিবের হামলার নিন্দা করা হয়েছে। কিন্তু পাশাপাশি সেখানে হামাসের রকেট নিক্ষেপের ব্যাপারে কড়া ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। যাকে হামাসের ব্যাপারে ইসরায়েলের কথারই ‘প্রতিধ্বনী’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে তো এক ধাপ এগিয়ে আছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের ধর্মীয় নেতা ওয়াসিম ইউসুফ। এক টুইটে সম্প্রতি তিনি লিখেছেন, ‘সাধারণ নাগরিকদের অবস্থান লক্ষ্য করে রকেট হামলা করছে হামাস। তারই পাল্টা জবাব (বিমান হামলা) আসছে। অথচ এখন তারা- আরব ও মুসলমানরা কোথায়?- বলে চিৎকার করছে। এর মাধ্যমে (রকেট হামলা) তারা নিরাপরাধ মানুষ ও শিশুদের জন্য গাজাকে কবরস্থানে পরিণত করেছে।’
মুনথার আল-শেহহি নামে আরেক আমিরাতি তো টু্ইটারে হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে উল্লেখ করে তাদের কোনোভাবেই সমর্থন ও সহানুভূতি দেখাবেন না- যদিও সেটা মানবতা বা ধর্মের দৃষ্টিকোণ থেকেও হয়- বলে জানিয়েছেন।
অবশ্য ইসরায়েলের প্রতি নতুন মিত্রদের যে মনোভাব, সৌদি আরবের ক্ষেত্রে সেটা কিছুটা ভিন্ন বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, রিয়াদের আপাতত ইসরায়েলকে স্বীকৃতি জানানোর কোনো সম্ভাবনা নেই।
অনেক সৌদি নাগরিক অনলাইনে দেশটির বাদশাহ সালমানের উদ্ধৃতিসহ তার ছবি পোস্ট করেছেন। উদ্ধৃতি হলো- ‘দ্য প্যালেস্টাইনিয়ান কজ ইজ আওয়ার ফার্স্ট কজ’। যদিও পারস্য উপসাগরের আরব দেশগুলোর সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি হ্যাশট্যাগ দেখা যাচ্ছে। যেখানে বলা হচ্ছে ‘#প্যালেস্টাইন ইজ নট মাই কজ’।
এদিকে, সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ১৩ মে প্রচারিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মক্কার কাবার ইমাম আল্লাহর শত্রু তথা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের বিজয়ের জন্য দোয়া করছেন।
এ বিষয়ে ব্রিটেনের থিংক ট্যাংক চ্যাথাম হাউজের সহযোগী ফেলো নেইল কুইলিয়াম রয়টার্সকে বলেন, সৌদি আরবের শাসকরা আগামী দুই বছরের ‘মধ্যে’ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবেন- আপাতত এমনটা ভাবার কোনো সুযোগ নেই।
সৌদি তরুণ আবদুর রহমান আল-তোয়াজরি বলছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে যেসব আরব দেশ সম্পর্ক স্থাপন করেছে, বিষয়টি তাদের আবারো ভেবে দেখা উচিত, কারণ ইসরায়েল প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে না বলেই তার বিশ্বাস।
তিনি আরো বলছেন, ‘ঐক্যই শক্তি, আরব মুসলিম দেশগুলোর ঐক্যের মাধ্যমেই এই সংঘাত বন্ধ হতে পারে। যদি তারা (মুসলিম দেশ) ঐক্যবদ্ধ থাকতো, তাহলে এটা অনেক আগেই হতে পারতো।’
তবে ইসরায়েলের নতুন বন্ধুরা, আরব আমিরাতসহ, সম্ভবত ওই উল্লিখিত চুক্তির মাধ্যমে অনেক বেশি বিনিয়োগ করে ফেলেছে, যেখান থেকে তাদের ফিরে আসাটা এক প্রকার অসম্ভবই বটে।
এ বিষয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রখ্যাত বিশ্লেষক আব্দুল খালেক আব্দুল্লাহ বলছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে দেশগুলো যে চুক্তি করেছে, সেই ‘আব্রাহাম চুক্তি’ এমন একটা প্রক্রিয়া, যেখান থেকে আগের অবস্থায় ফিরে আসা ‘একেবারে’ অসম্ভব।
তিনি আরো বলছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত যে তাদের জাতীয় অগ্রাধিকার ও কৌশলগত স্বার্থের সঙ্গে সমন্বয় করেই এই চুক্তি করেছে, তা খুব স্পষ্ট। তাই এই চুক্তি থেকে ফিরে আসার পথ রুদ্ধ।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.