ইউরো ২০২০: ‘আন্ডারডগ’ ফিনল্যান্ড

পূর্বাভাসটা আগেই দিয়েছিল ফিনল্যান্ডের সমর্থক ও ফুটবল বিশ্লেষকরা। তাদের ভবিষ্যদ্বাণী ফলে গেছে। স্বপ্নপূরণ হয়েছে ফিনল্যান্ডের। প্রথমবারের মতো বড় কোনো টুর্নামেন্টের মূলপর্বের টিকিট পেয়েছে দেশটি। গ্রিস, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা ও আর্মেনিয়ার মতো দলকে পেছনে ফেলে স্বপ্নের ইউরোর টিকিট কাটে তারা। মূলপর্বে অংশ নিয়েই খুশি ফিনল্যান্ড। বড় কোনো স্বপ্ন নেই তাদের।

এরপরও কিছু হলে সেটা হবে বাড়তি চমক। খুব স্বাভাবিকভাবেই এবারের আসরে ফিনল্যান্ড খেলবে আন্ডারডগ হিসেবে। দলটার দুটো ম্যাচ হবে প্রতিবেশী দেশের সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে। ওখানে এসে খেলা দেখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ফুটবলপ্রেমীরা। যদিও পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে মাঠে এসে ফিনল্যান্ডের খেলা দেখার সুযোগ মিলছে না তাদের।

প্রধান কোচ - মার্কু কানেরভা: ২০১৬ সালে ফিনল্যান্ডের প্রধান কোচের দায়িত্ব নেন কানেরভা। তাকে দায়িত্ব দেওয়ার পর অনেকেই হেসে বলেছিল, ‘স্কুল শিক্ষক ইউরোর টিকিট এনে দেবে?” আসলেই তাই, কানেরভা স্কুল শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু থাকতে পারেননি সেই পেশায়। সেই ফুটবলেই ফিরে আসেন।

খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করা কানেরভা কোচ হিসেবেও নিজের জাত চিনিয়েছেন। তার অধীনে খেলেই প্রথমবারের মতো মৌলিক কোনো টুর্নামেন্টের মূলপর্বে জায়গা পেয়েছে ফিনল্যান্ড। জাতীয় দলে তার সাফল্য দেখে মুখ লুকিয়েছেন খোঁচা মারা সেইসব লোক। তবে সবকিছুই ইতিবাচকভাবে নিয়েছিলেন কানেরভা।

২০০১ সালে কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করা কানেরভা তিন বছর পর ফিনল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১ দলে কাজ করেন। ২০১১ সালে জাতীয় দলের সহকারী কোচ হিসেবে যাত্রা শুরু করেন। প্রধান কোচ চলে যাওয়ার পর কানেরভাকে প্রথমে নিয়োগ দিতে চাননি ফিনল্যান্ডের ফুটবল সংগঠকরা। শেষ পর্যন্ত নাটকীয়ভাবে দায়িত্ব নেন কানেরভা। দেখান চমক।

প্রধান অস্ত্র - টিমু পুক্কি: ফিনল্যান্ডের ইউরো টিকিটের নেপথ্য নায়ক কানেরভা। তবে মাঠের কাজটা করেছেন পুক্কি। বাছাইপর্বে দারুণ পারফর্ম করেছেন নরউইচ সিটির এই ফরওয়ার্ড। বাছাই ম্যাচগুলোতে নয় গোল করে ফিনল্যান্ডের ইতিহাস গড়ার ভিত তৈরি করে দেন পুক্কি।

গেল মার্চে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচেও তিন গোল করেন তিনি। এ পর্যন্ত ফিনল্যান্ডের হয়ে ৯১ ম্যাচে ৩০ গোল করেছেন পুক্কি। তাকে বলা হয় ঠাণ্ডা মাথার খুনি। সেই তিনিই আজকাল ভুগছেন চোটের অস্বস্তিতে। ফিনল্যান্ডের আশা, টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ফিট হয়ে উঠবেন তিনি।

তরুণ তুর্কি - মার্কাস ফোর্স: ইউরো টুর্নামেন্ট স্থগিত হওয়ায় সম্ভবত ফোর্স সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন। কয়েক মাস আগে ফিনল্যান্ড জাতীয় দলে ঢুকে পরেন তিনি। এসেই চমক দেখান ২১ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার। গত বছরের নভেম্বরে প্যারিসে প্রীতি ম্যাচে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে করেন দুর্দান্ত এক গোল।

ফোর্সের দারুণ পারফরম্যান্সে ওপর দাঁড়িয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে ২-০ গোলে হারায় ফিনল্যান্ড। তবে মূল একাদশে নয়, ফোর্স খেলতে পারেন পরিবর্তিত হিসেবে। প্রধান কোচ কানেরভার প্রথম পরিকল্পনা কাজে না এলে দ্বিতীয় পরিকল্পনার অংশ তিনি।

গ্রুপপর্ব: আগেই বলা হয়েছে টুর্নামেন্টে আন্ডারডগ ফিনল্যান্ড। ‘বি’ গ্রুপেও তাই। এই গ্রুপের তিনটি দলই তাদের চেয়ে শক্তিশালী এবং যথেষ্ঠ অভিজ্ঞ। প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে যেতে হলে বাছাইপর্বের মতোই চমক দেখাতে হবে ফিনল্যান্ডকে। তাদের গ্রুপে আছে বেলজিয়াম, রাশিয়া ও ডেনমার্ক। তিনটি দলের কাছেই অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে নবাগত দলটিকে।

সম্ভাব্য একাদশ: গোলরক্ষক: হ্রাডেকি; ডিফেন্ডার: রায়তালা, আরাজুরি, টয়ভিও, ইউরোনেন; মিডফিল্ডার: লড, স্পার্ভ, কামারা, টেলর; ফরওয়ার্ড: পুক্কি, পোজানপালো।

সেরা সাফল্য: নেই (প্রথম অংশগ্রহণ)

ফিফা র‌্যাঙ্কিং: ৫৪

ফিনল্যান্ড ম্যাচসূচি:

১২ জুন: ডেনমার্ক-ফিনল্যান্ড (পার্কেন স্টেডিয়াম; সেন্ট পিটার্সবার্গ)

১৬ জুন: রাশিয়া-ফিনল্যান্ড ((পার্কেন স্টেডিয়াম; সেন্ট পিটার্সবার্গ)

২১ জুন: ফিনল্যান্ড-বেলজিয়াম (পার্কেন স্টেডিয়াম; সেন্ট পিটার্সবার্গ)