আপনি পড়ছেন

২০২০ সালের ৩০ জুন হংকংয়ে জাতীয় নিরাপত্তা আইন জারি করে বেইজিং। এ আইনের ফলে গত এক বছরে রাজনীতিবিদ, আইনের বিরোধীতাকারী ও তথাকথিতভাবে যারা অভিযুক্ত হয়েছেন তারা ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হিসেবে আশ্রয় খুঁজেছেন। এরকম সব ভুক্তভোগী ও জাতীয় নিরাপত্তা আইনের প্রভাব নিয়ে চার পর্বের সিরিজ প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব প্রকাশ করেছে হংকংভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।

protesters seek refuge abroad to avoid arrest

সংবাদমাধ্যমটিতে কর্মরত সাংবাদিক নাতালি ওয়াং বেইজিংয়ের জাতীয় নিরাপত্তা আইনের ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ ব্যাপারে তার সিরিজ প্রতিবেদনের প্রথম পর্বে বলা হয়, টেডি (ছদ্মনাম) নামের এক ব্যক্তি গত বছর হংকং থেকে ৬০০ কিলিমিটারের পথ তাইওয়ানে পালাতে ছোট একটি স্পিডবোটে রওনা হন। তার কোনো ধারণাই ছিল না যে, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আশ্রয় প্রার্থনা করবেন। হংকংয়ে গত বছরের জুনে জাতীয় নিরাপত্তা আইন জারি করার কয়েক সপ্তাহ পরই তিনি পালিয়ে যান। হংকংয়ে জারি করা ওই আইনের মাধ্যমে বিচ্ছিন্নতাবাদ, নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড, সন্ত্রাসবাদ ও বিদেশি শক্তির সঙ্গে গোঁপন আঁতাত নিষিদ্ধ করে বেইজিং।

২০১৯ সালে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের জন্য ২৫ বছর বয়সী টেডির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আনা হয়। তাকে আট বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। নিজেকে বাঁচাতে ভয়ঙ্কর ওই নৌযাত্রার পর তিনি তাইওয়ানে পৌঁছান। রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার উল্লেখ করে সেখানে অবস্থানের জন্য তিনি আইনজীবী নিয়োগ করেন। স্বায়ত্তশাসিত তাইওয়ানে একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নতুন জীবন শুরু করার পরিকল্পনা করেছিলেন। তাইওয়ান কর্তৃপক্ষ টেডি ও তার সঙ্গে পলায়নকারীদের থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। তারা সেখানে নিম্মমানের জীবনযাপন করছেন এবং হংকংয়ে তাদের পরিবারের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

এদিকে তাদের নাটকীয়ভাবে পলায়নের বিষয়টি তাইওয়ানের একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এরপর তাদেরকে চলে যেতে বলা হয়। তাইওয়ান কর্তৃপক্ষ কেবল টেডিকে জানায়, সেখানে কিছু কূটনৈতিক কারণ রয়েছে যার কারণে টেডি সেখানে অবস্থান করতে পারবেন না। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে টেডি বলেন, ‘তারা আমাকে শুধু বলেছে- আমরা আপনাকে অন্য কোথাও পাঠিয়ে দেবো। আপনি আপনার পছন্দের জায়গাটির বিষয়ে বলতে পারেন।’

কোনো বৈধ পক্রিয়া প্রতিষ্ঠিত না হলেও তাইওয়ান হংকংয়ের ২০১৯ সালের অস্থিতিশীলতার পর আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য একটি অফিস খুলেছিল। এই বছরের জানুয়ারিতে টেডি তাইওয়ানের মানবিক ভিসায় ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছান এবং যুক্তরাষ্ট্রের আশ্রয় প্রার্থনা করেন। তিনি সেখানে আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে আবেদন করেন। তার আবেদনের ফলাফলের আগেই সেখানে স্বেচ্ছা নির্বাসিত আইনজীবী সিক্সটাস বাগজিও লেইং চুং হ্যাংয়ের সঙ্গে যুক্ত হন টেডি। যুক্তরাষ্ট্রে সিক্সটাস বাগজিং ‘হংকং লিবারেশন কোয়ালিশন’র সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। একটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপের মাধ্যমে তারা হংকং থেকে নির্বাসিতদের সেখানে সাময়িক আশ্রয় দেওয়ার কাজ করছেন।

সেখানে হংকংয়ের সম্মুখাসারির আরও তিনজন বিক্ষোভকারী রয়েছেন। শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় পেতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আবেদনের ফলাফল পাওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ে আশ্রয়প্রার্থীদের সাহায্য করতে নতুন ওই গ্রুপটি পরিচালনায় সহযোগিতা করছেন তারা। টেডির মতো তারা সেখানে নিজেদের নাম প্রকাশ না করে আশ্রয় চাইছেন।

হংকংয়ের ৪৭০ জন বিদেশে আশ্রয় চাইছেন

টেডির মতো হংকংয়ের কয়েকশ মানুষ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন যারা ২০১৯ সালের বিক্ষোভের পর অভিযুক্ত হয়েছিলেন। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের হিসেবে ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি ও নিউজিল্যান্ডে গত দুই বছরে ৪৭০ জন আশ্রয় খুঁজেছিলেন। সবথেকে বেশি মানুষ আশ্রয় খুঁজেছেন অস্ট্রেলিয়ায়। দেশটিতে শরণার্থী হিসেবে ৩০৫ জন আবেদন করেছিলেন। গত বছরের জুলাইয়ে জাতীয় নিরাপত্তা আইন বাস্তবায়নের পরই হংকংয়ের ৩৪ জন অস্ট্রেলিয়ায় আশ্রয় খুঁজেছেন যা একমাসে ছিল সর্বোচ্চ।

ব্রিটেন হংকংয়ের আশ্রয়প্রার্থীদের ১২১টি আবেদন গ্রহণ করেছিল তার মধ্যে ওই আইনটি জারি করার প্রথম তিন মাসেই ৩৫ জন আবেদন করেছিলেন। আবেদনকারীদের মধ্যে পাঁচ জনের বয়স ছিল ১৮ বছরের কম। গত বছরের শেষ দিকে কানাডার কাছে ২১টি আবেদন জমা পড়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র এসব আবেদনকারীদের পৃথক কোনো হিসাব রাখেনি। তবে অনুমান করা হয় হংকংয়ে অস্থিতিশীলতা তৈরির পর ১৫ জন সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন। জার্মানির কাছে তিনটি আবেদন জমা পড়ে এবং নিউজিল্যান্ডের কাছে অন্তত পাঁচজন আবেদন করেন।

লন্ডনের স্কুল অব অরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিস এর চীনা ইনস্টিউট’র পরিচালক স্টিভ স্যাং বলেন, ‘হংকংবাসীর জন্য বিদেশে আশ্রয় পাওয়া খুব সহজ নয়, বিশেষত যখন থেকে হংকংয়ে ওই আইন জারি করা হয়। যখন কেউ আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে আবেদন করে তাদের অবশ্যই দেখাতে হবে যে তারা প্রকৃতপক্ষেই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।’

আশ্রয়প্রার্থীদের অভিযোগ প্রমাণ সহজসাধ্য নয়

বেইজিংয়ের জাতীয় নিরাপত্তা আইন জারির পরই একশ’রও বেশি বিরোধী কর্মী গ্রেপ্তার হয়। ২০ জনের বেশি বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব হংকং থেকে পালায়। কোনো স্থানে নিরাপদে চলে যাওয়া অনেকের জন্য জীবনের অনিশ্চয়তার প্রথম ধাপ। তাদেরকে সাক্ষাৎকার ও আমলাতান্ত্রিক যাচাই-বাছাইয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।

১৯ বছর বয়সী সোফিয়া (ছদ্মনাম) ব্রিটেনে যাওয়ার ছয়মাস পরও এখন পর্যন্ত তার দ্বিতীয় সাক্ষাৎকারের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন। আবেদনকারীদের তাদের অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ দিতে হয়, যা কিছু সময় খুবই কঠিন।

সোফিয়া জানান, ২০১৯ সালে সামনের সারির বিক্ষোভকারী হিসেবে তিনি কী করেছেন তার কোনো প্রমাণ রাখেননি। তার কাছে কোনো ফটোগ্রাফ, ভিডিও অথবা লিখিত বার্তা নেই। এমনকি বিক্ষোভে আহত হওয়ার পরও তার অনেক দায়িত্বের মধ্যে ছিল টিয়ার গ্যাস কয়েকগুণ কমিয়ে দেওয়া। সোফিয়া সরকারি হাসপাতালগুলো এড়িয়ে চলেন। বিক্ষোভে সমর্থনকারী স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের দ্বারা পরিচালিত আন্ডারগ্রাউন্ড ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা চেয়েছিলেন।

তিনি হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি অধ্যায়ন কোর্স ফেলে দ্রুত অন্যদের সঙ্গে গতবছর পালিয়েছিলেন, যখন সেই জাতীয় নিরাপত্তা আইন চর্চা শুরু হয়েছিল। ওই বিক্ষোভে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়।

যদিও তিনি ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপদ ও শর্তহীনভাবে পড়ালেখার সুযোগ পেয়েছিলেন তবে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রচুর ফি তাকে হতাশ করেছিল। হংকংয়ে অবস্থান করা তার পরিবার তাকে সাহায্য করতে পারছিল না। তিনি নিজেও পারছিলেন না। ব্রিটেনে আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে কেবল একজন কাজের জন্য আবেদনের অনুমতি পেতে পারে। ব্রিটিশ সরকার একটি হোটেলে তার থাকার জায়গা করে দেয় এবং ভাতা দেয়। সোফিয়া একে ‘বেশ কঠিন’ জীবন হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি তার রুমে ছোট একটি ইনডাকশ ন চুলায় রান্না করেন। কোনো ফ্রিজ নেই। সোফিয়া বলেন, ‘আমার চেয়ে অনেকে আরও কঠিন জীবন পার করছেন।’

সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.