রূপকথার ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার বিদায়, শেষ আটে স্পেন

ফুটবল এমনই। কখনো কখনো কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যায়। স্পেন-ক্রোয়েশিয়ার মহারণ সেই কথাটাই আরেকবার মনে করিয়ে দিল। কী ছিল না ম্যাচটাতে! আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ, গোল পাল্টা গোল, গোলপোস্টের নাটকীয়তা, পরতে পরতে উত্তেজনা- সবমিলিয়ে হাইভোল্টেজ ম্যাচটার সমাপ্তি হলো মহানাটুকেভাবে। আট গোলের স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচটায় শেষ হাসি হাসল ইউরো বিশ্বকাপের সাবেক চ্যাম্পিয়ন স্পেন।

সোমবার রাতে কোপেনহেগেনে নির্ধারিত দেড় ঘণ্টার থ্রিলার লড়াই অমীমাংসিত থেকেছে ৩-৩ গোলে। দুই গোলে পিছিয়ে থেকেও শেষ সাত মিনিটে অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাচে সমতায় ফিরে আসে ক্রোয়েশিয়া। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত ত্রিশ মিনিটে। এই সময়ের প্রথম অর্ধের দুই গোলে বাজিমাত লা রোজাদের। ক্রোয়াটদের ২-০ গোলে হারিয়ে চলমান ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেল স্পেন।

এখন অবধি আসরের সেরা ম্যাচটার সার্বিক ফল ৫-৩। তবে ম্যাচটা হারার আগে হারল না গত বিশ্বকাপের ফাইনালিস্টরা। সেরা একাদশের তিন ফুটবলারকে ছাড়াই স্পেনের সঙ্গে অভাবনীয় লড়াইটা করেছে ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্বপ্ন বাঁচাতে পারেননি লুকা মডরিচ অ্যান্ড কোং, ছিটকে গেছেন টুর্নামেন্ট থেকে। আগামী শুক্রবার সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে স্পেনের প্রতিপক্ষ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স।

ম্যাচটা যারা মিস করেছেন হাইলাইলাইটস দেখে নিশ্চয়ই আক্ষেপ করবেন। পুরো ম্যাচে গোলের উদ্দেশ্যে শট হয়েছে ৩৫টি! যা চলমান টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোলের চেষ্টা। যেখানে স্পেন গোলমুখে শট রেখেছে ১০টি। ক্রোয়েশিয়ার শট লক্ষ্যে ছিল সাতটি। পুরো ম্যাচে ফাউল হয়েছে ৩৬টি! যার ২৬টিই করেছে ক্রোয়েশিয়া। বরাবরের মতো এই ম্যাচের বল দখলে আধিক্য ছিল স্পেনেরই (৬৭%)।

গোলবৃষ্টির ম্যাচে শুরুতে লিড নিয়েছিল ক্রোয়েশিয়াই। স্পেনের রক্ষণের ভুলে আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে যায় তারা। ম্যাচের কুড়ি মিনিটে ৪৯ গজ দূর থেকে ব্যাক পাস দিয়েছিলেন গঞ্জালেস পেদ্রি। কিন্তু বল নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি স্প্যানিশ গোলরক্ষক সিমন। বল খুঁজে নেয় জালের ঠিকানা। তাতে কিঞ্চিত পরিমাণ হলেও হোঁচট খেয়েছেন দর্শকরা। হতভম্ব হয়ে যান সিমন-পেদ্রি। বোঝাপড়ায় কী সাংঘাতিক ভুল!

সমতায় ফিরতে মরিয়া স্পেন খুব বেশি সময় নেয়নি। ৩৮ মিনিটে সারাবিয়ার গোলে লড়াইয়ে ফেরে স্প্যানিয়ার্ডরা। বিরতি থেকে ফিরে পরপর দুই গোল করে স্পেন। সিজারে আজপিলিকুয়েতার গোলে ম্যাচে প্রথমবার লিড নেয় তারা। ৭৬ মিনিটে ফেরান তোরেস ব্যবধান ৩-১ করেন। স্বাভাবিকভাবে ম্যাচটা ওখানে শেষ যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মহারণ মহানাটক যে তখনো শুরুই হয়নি!

৮৫ মিনিটে স্পেনকে একটি গোল ফিরিয়ে দেন অরসিচ। যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে আরেক চমক। ক্রোয়েশিয়াকে সমতায় ফেরান প্যাসালিচ। গোলের উৎস অরসিচ। তাতে বড় একটা ধাক্কা খায় স্পেন। অমীমাংসিত ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত ত্রিশ মিনিটে। ১০৩ মিনিটের মধ্যে দুই গোল করে ফেলে স্পেন। আলভারো মোরাটার গোলের দুই মিনিট পর জালে বল পাঠান ওয়্যারজাবাল।