ইউরো ২০২০: রাতে স্বপ্নপূরণের ফাইনাল

ফুটবলপ্রেমীদের জন্য আজ রোমাঞ্চের এক দিন। ঘুম থেকে উঠেই দর্শকরা উপভোগ করেছেন দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। ঘুমাতে যাওয়ার আগে আরো একটা ফাইনাল দেখার সুযোগ সমর্থকদের। কোপা আমেরিকার পর এবার ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা নির্ধারণী লড়াইয়ের অপেক্ষা। আর তো মাত্র কয়েক ঘণ্টা।

প্রতীক্ষার প্রহর শেষে ইউরোর ফাইনালে মুখোমুখি শক্তিশালী ইতালি ও স্বাগতিক ইংল্যান্ড। বাংলাদেশ সময় রাত একটায় লন্ডনের বিখ্যাত ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে ইউরোপের দুই পাওয়ারহাউজ। যেখানে স্বপ্নের প্রথম রুপালি ট্রফির জন্য লড়বে ইংলিশরা। আর ইতালির স্বপ্ন দ্বিতীয় শিরোপার; হারানো রাজত্ব উদ্ধারের।

তর্ক সাপেক্ষে ফুটবলের জন্মদাতা ইংল্যান্ড। অথচ এই দলটার মৌলিক কোনো সাফল্য বলতে- একটি মাত্র শিরোপা। সেটাও পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ ৫৫ বছর। ১৯৬৬ সালে জার্মানিকে হারিয়ে বিশ্বকাপ শিরোপা রেখে দেয় স্বাগতিক ইংল্যান্ড। এরপর সাড়ে পাঁচ দশক পেরিয়ে গেলেও কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালেই উঠতে পারেনি থ্রি লায়নরা।

এবারের ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ অপেক্ষা ঘুচিয়েছে ইংলিশদের। প্রথমবারের এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেছে তারা। ঘরের মাঠে এবার আরো একটা ইতিহাস গড়তে মরিয়া ব্রিটিশরা। আজকের ফাইনালে তাদের জন্য সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণার নাম- ঘরের মাঠে পরিচিত দর্শকদের সামনে খেলতে পারাটা। ইতালির জন্য কাজটা কঠিন।

ইংলিশদের দুর্গ ওয়েম্বলি থেকে শিরোপা নিয়ে ঘরে ফেরা তাদের কাছে স্বপ্ন। কিন্তু ৬০ হাজারেও বেশি দর্শকদের সামলে, ইংল্যান্ডের স্বপ্ন ভেঙে ইতালি কি পারবে আগের দুই ফাইনালের দুঃখ ঘুচতে? উত্তরটা তোলা থাকল সময়ের হাতে। কার্যত এই দলটাকে মাঠে গিয়ে সমর্থন দিতে এক হাজার ইতালিয়ান দর্শক পাড়ি জমিয়েছেন লন্ডনে।

এর বেশি ইতালিয়ান দর্শক ইংল্যান্ডে ঢোকার অনুমতি পায়নি। কঠোর স্বাস্থ্য বিধির কারণেই এমন সিদ্ধান্ত ব্রিটিশ সরকারের। প্রায় একই সিদ্ধান্ত বহাল ছিল ডেনমার্কের বেলাতেও। সেমিফাইনালে ভরা গ্যালারির সামনে ডেনিসদের বিতর্কিত পেনাল্টি গোলে হারিয়েছে ইংলিশরা। বিশ্বজুড়ে ফুটবলপ্রেমীদের ভয়, ডেনমার্কের মতো ইতালিকে না আবার ভুগতে হয়!

ভয়টা জাগাচ্ছে এবারের ইউরোর সাম্প্রতিক কয়েকটা ম্যাচ ও ইংল্যান্ডের অতীত ইতিহাস। ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ড ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড যে ফাইনাল জিতেছিল তা ছিল বিতর্কে মোড়ানো। সেদিন জার্মানরা পারেনি, আজ ইতালি পারবে তো ওয়েম্বলিতে শিরোপা উৎসব করতে? তাদের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন একঝাঁক প্রতিভাবান ও অভিজ্ঞ ফুটবলাররা।

কাগজে-কলমে ও পারফরম্যান্সে এবারের আসরে সবচেয়ে শক্তিশালী দল ইতালি। তাদের মতো আসর শুরুর আগে ফেভারিট ছিল ইংল্যান্ডও। তবে ফাইনালটা লন্ডনে বলেই কিছুটা এগিয়ে রাখা হচ্ছে ইংলিশদের। তা ছাড়া ইতালিয়ানদের ফাইনালে জোড়া দুঃখ আছে। ২০০০ ও ২০১২ সালে পরপর দুবার ফাইনালে হেরেছে তারা। এবার অপেক্ষা ঘোচাতে ব্যাকুল ইতালি।

আজ ইতিহাসের দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসতে মরিয়া চারবারের বিশ্বকাপ জয়ী ইতালি। সেলক্ষ্যে সেরা একাদশ নিয়েই মাঠে নামতে পারছে তারা। দলে নেই কোনো ইনজুরি বা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব। এদিক থেকে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছে ইংল্যান্ড। চোটের কারণে মাঠে নামা অনিশ্চিত ফিল ফোডেনের। ইংলিশ কোচ গ্যারেথ সাউথগেট অবশ্য এনিয়ে একদম ভাবছেন না।

কারণ একাদশে খেলানোর মতো ফুটবলারের অভাব নেই তার দলে। বরং ইংলিশ কোচ মধুর সমস্যায় আছেন ফাইনালে কাকে রেখে কাকে খেলাবেন তা নিয়ে! তবে যে-ই খেলুক। ইংল্যান্ডের মূল ভরসা হ্যারি কেন। গ্রুপপর্বের তিন ম্যাচে গোল না পাওয়া এই স্ট্রাইকার জ্বলে উঠেছেন সময় মতো। নক আউট পর্বের তিন ম্যাচেই গোল করেছেন তিনি।

আর আসরজুড়ে দুর্দান্ত খেলা রহিম স্টার্লিং তো আছেনই। তার গতির ঝড়ে হার মেনেছে ডেনমার্ক। এই ঝড় থামাতে প্রস্তুত ইতালির শক্তিশালী রক্ষণ। কিয়েলিনি-বনুচ্চিদের মতো পরীক্ষিতরাই আজ অতিথিদের ঘর সামলাবেন। রক্ষণ যথেষ্ঠ শক্তিশালী ইংল্যান্ডেরও। পুরো আসরে মোটে একটি গোল হজম করেছে তারা। সেটাও সেমিফাইনালে।

শুধু রক্ষণ নয়, আক্রমণেও যথেষ্ঠ ধার আছে ইতালির। দলটিতে আছেন ইনসিগনে, চিয়েসার মতো ফর্মে থাকা স্ট্রাইকার। আসরজুড়ে আক্রমণাত্মক মেজাজে দেখা গেছে তাদের। তাই লড়াইটা দুই দলের আক্রমণ বনাম রক্ষণের। ধারণা করা হচ্ছে, এই লড়াই-ই গড়ে দেবে এবারের ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা ভাগ্য।