আপনি পড়ছেন

হাজার হাজার বছরের জীবনাচরণ ত্যাগ করে আফ্রিকার পিগমিরা আধুনিক জীবনে আসতে পারেনি আজও। আধুনিক জীবনের প্রতি তাদের কোনো আগ্রহ নেই, আসতেও চায় না।

pygmy people 1

পিগমিদের বসবাস মূলত পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকায়। তারা পৃথিবীর সবচেয়ে খাটো মানুষ। তারা শিকার করার পদ্ধতিটি এখনও আগের মতোই ব্যবহার করে, যা হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসছে। তাদের কৃষ্টি-কালচার নিজেরাই সংরক্ষণ করছে। টিআরটি ওয়ার্ল্ড।

পিগমিরা বিশ্বের অন্য অঞ্চলের মানুষের কাছে সাধারণত ‘বামন’ নামে পরিচিত। গ্রিক মিথে এ ধরণের মানুষের কথা উল্লেখ রয়েছে। পিগমিদের গড় উচ্চতা ১২০ সেন্টিমিটার বা ৩.৯ ফুট। বিশ্বে পিগমিদের সংখ্যা এখন ১ লাখ ২০ হাজার। তাদের অধিকাংশই এখন বাস করে আটলান্টিক মহাসাগর ঘেঁষা ক্যামেরুনের জঙ্গল এলাকায়।

pygmy people 2

এছাড়া রুয়ান্ডা, বুুরুন্ডি, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, কঙ্গো, জাম্বিয়া এবং অ্যাঙ্গোলায়ও তাদের কমবেশি দেখা মেলে।

আফ্রিকার বৃষ্টিবহুল বন এলাকায় পিগমিরা নিজেদের অস্তিত্বকে মেলে ধরেছে। তারা কাঠ সংগ্রহ, বিক্রি এবং খনিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। দিন দিন তাদের এলাকা সংকুচিত হচ্ছে, কারণ সংরক্ষিত বনাঞ্চলে তাদের থাকতে দেওয়া হচ্ছে না।

pygmy people 3

ক্যামেরুন সরকার পিগমিদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। দেশটির সরকার পিগমিদের লাইফস্টাইল পরিবর্তন করতে চাইলেও হাজার বছর ঐতিহ্যবাহী জীবন থেকে পিগমিরা সরে আসতে রাজি হয়নি।

পিগমিরা বিদেশিদের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখা কিংবা তাদের সাথে ছবি তোলা পছন্দ করে না। তারা এক ভিন্ন জীবন-জগতের মধ্যে নিজেদেরকে আটকে রাখতে চায়। আফ্রিকার সাধারণ মানুষের জীবনাচরণও তারা গ্রহণ করেনি।

পিগমিরা আজও প্রাচীন। তারা গহীন বনে এখনও পশু শিকার করতে অভ্যস্ত, যা হাজার বছর আগেও একইরকম ছিল। তারা বন থেকে ফলমূল সংগ্রহ করে জীবন ধারণ করে। তারা মুদ্রা ব্যবস্থার পরিবর্তে বিনিময় পদ্ধতিতে তাদের ব্যবসা পরিচালিত করে।

শিকার ও পশু ধরার জন্য পিগমিরা নিজেদের বাসস্থান পরিবর্তন করে। কাঠ ও পাথরের তৈরি তীর, বর্শা, চাপাতি ইত্যাদি দিয়ে বানর, হরিণ, হাতি, শিম্পাঞ্জি শিকার করে। পিগমিদের অন্যতম খাদ্য বুনো ফল। বুনো তাল, আম, বাদামসহ নানা ফল তারা খায়। এগুলো খেয়েই তারা তাদের জীবন পার করে।

পশ্চিম ক্যামেরুনের শহর কিরবি থেকে ৭০ কিলোমিটার পশ্চিমে বিকিস্তি এনজুলে পিগমিদের প্রধান পরিবার বাস করে। তাদের প্রধান এনজাই ফুয়ার আনাদোলু এজেন্সিকে বলেন, আধুনিক মানুষেরা বন কাটছে। তারা আমাদের বাসস্থান ধ্বংস করছে। আমরা মাছ, প্রাণী শিকার করেই আমাদের জীবন চালাতে চাই। কিন্ত এখন তা হুমকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে।

পিগমি সদস্য আবুমাইয়িম আমোরা বলছেন, আমরা বনে জন্মেছি, বনে মরতে চাই। বন আমাদের সব চাহিদা পূরণ করে। আমরা বন থেকে আমাদের চিকিৎসার জন্য ওষুধ পাই। গাছের বাকল কিংবা পাতার মধ্যেই তাদের রোগ বালাইয়ের ওষুধ রয়েছে। তিনি বলেন, পিগমিদের সামাজিক সেবা গ্রহণের অনুমতি নেই। বিশেষ করে স্বাভাবিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে তারা বঞ্চিত।

পিগমিরা তাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ‘মরিঙ্গা গাছ’ ব্যবহার করে। গাছটিকে মিরকল গাছও বলা হয়। বিষক্রিয়ার চিকিৎসায় তারা এনলোয়ার নামে একটি গাছ থেকে ক্রিম তৈরি করে। আবদা জোয়াক গাছ থেকে তৈরি হয় সিরাপ যা এলিফ্যান্ট ট্রি নামে পরিচিত। এই সিরাপ পেটের সমস্যার দূর করে এবং নারীদের গর্ভকালীন রোগ সারাতে কাজে দেয়।

হাড় ও জয়েন্টের ব্যথায় তারা আজবে গাছের সহায়তা নেয়, এ গাছের কাণ্ড আগুনে পুড়িয়ে ছ্যাকা দিলে ব্যথা চলে যায়। ফল ও প্রাণি শিকার শেষে তারা রাতে একস্থানে জড়ো হয় এবং আগুন জ্বালিয়ে উল্লাস করে। এ সময় তারা তাদের বড়দের উপদেশ শোনে এবং নাচে।

পিগমিরা প্রকৃতিপূজায় বিশ্বাসী। তারা মনে করে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে প্রকৃতি। মরার পরের জীবনেও তাদের বিশ্বাস রয়েছে। সে জীবনেও প্রকৃতি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে বলে পিগমিদের বিশ্বাস।

তারা পরকালে যেমন বিশ্বাস করে, তেমনি মনে করে তাদের পূর্বপুরুষরা সবসময় সব স্থানে বিরাজমান রয়েছে। তারা তাদের মৃতদেহ গাছের খাদে কিংবা গুহায় সমাহিত করে। সাম্প্রতিক সময় কিছু পিগমি যারা সামাজিক জীবনে ফিরছে, তাদের মধ্যে কিছু খ্রিস্টান কিংবা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে থাকতে পারে বলে মনে করা হয়।

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.