ভিন্ন তালেবানের সামনে চ্যালেঞ্জ

একটা গুলি খরচ না করেই তালেবানের কাবুল দখলের ঘটনায় পুরো বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছে। তালেবান এখন পুরো দেশই নিয়ন্ত্রণ করছে এবং একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে তারা দেশ চালাবে বলে মনে হচ্ছে। ঘানি সরকারের কেউ নতুন তালেবান সরকারে যুক্ত হলে গ্রহণযাগ্যতা পাবে বলে ধরা হচ্ছে। আশরাফ ঘানি দেশ থেকে পালিয়েছেন। দ্য ডন।

তালেবান

সোমবার (১৬ আগস্ট) ইসলামাবাদে আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় জোটের সাবেক নেতাদের একটি প্রতিনিধি দল পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তারা মত প্রকাশ করেছেন, তালেবানের সরকারে যুক্ত হতে তারা ইচ্ছুক এবং এজন্য তারা তালেবানের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করবেন।

তারা মনে করছেন, তাদের প্রস্তাব তালেবানের কাছে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ হবে। কারণ তালেবান চাচ্ছে সমগ্র আফগান নেতৃত্বের স্বার্থে একটি বিস্তৃতভিত্তিক, সম্পূর্ণ প্রতিনিধিত্বমূলক একটি সরকার গঠন করতে। এতে সকল জাতি ও গোষ্ঠীকে একত্রিত করে একসঙ্গে শাসন কিভাবে করা যায় সে বিষয়ে একমত্য তৈরি করতে পারে।

তবে এটি একেবারে প্রাথমিক একটি চিন্তা বলা যায়। কবে নাগাদ এ চিন্তা বাস্তবায়ন হবে তার ঠিক নেই। প্রতিনিধি দলটি মনে করছে, তালেবান বিশ্বব্যাপী তাদের সরকারের স্বীকৃতি চাইবে।

সেক্ষেত্রে তাদের সাবেক প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপগুলোর সঙ্গে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলে তারা আগাতে চাইবে। এছাড়া এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক যে, তালেবান সর্বশেষ যে সময় ক্ষমতায় ছিল তখনকার তালেবান এখন অনেক বদলেছে।

তালেবানের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, নারী অধিকার ও সামগ্রিক মানবাধিকার রক্ষা করা। এটা করতে পারলে তালেবান সরকার বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি আদায় করতে পারবে। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগান জনগণকে ভাল রাখতে এবং সরকার টিকিয়ে রাখতে তালেবান সরকারের দরকার হবে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা।

তালেবান সেনারা তাদের বিজয় সহজে উদযাপন করতে পেরেছে। কিন্তু তাদের বুঝতে হবে সরকার টিকিয়ে রাখতে আরও বেশি শক্তি ও নিরাপত্তা দরকার হবে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, চীন, রাশিয়া, পাকিস্তান ও ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক এখনও ইতিবাচক।

কাবুল দখলের সময় তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাবই দেখিয়েছে। এখন পরবর্তীতে তাদের সঙ্গে ভাল আচরণ অব্যাহত রাখতে হবে যাতে তারা সরকারকে স্বীকৃতি দেয়। তাদের স্বীকৃতির ওপর বিশ্বের অন্যান্য দেশ স্বীকৃতি দেবে কি দেবে না তা পরিষ্কার হবে।

তালেবানদের জন্য এটা সম্মানের যে, তারা খুবই দ্রুত নিজেদের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে আফগানে। তারা নারীর প্রতি যথাযথ সম্মানও দেখিয়েছে। পুরো বিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে তালেবান নারী শিক্ষার ব্যাপারে কি পদক্ষেপ নেয়।

তালেবান কাবুল দখলের পর দেশে সংঘাত নেই। তালেবানের দরকার এই শান্তি ও সংহতি আরও স্থিতিশীল করা এবং তাদের অবস্থানকে পরিষ্কার করা।

মার্কিন বিমান তাদের নাগরিকদের উড়োজাহাজে করে ফিরিয়ে নেওয়ার সময় আফগান ত্যাগ করতে ইচ্ছুক এমন নাগরিকদের বাধার মুখে পড়ে। বহু উঁচু অর্থাৎ শূন্য থেকে বিমানে ঝুলে থাকা অবস্থায় তিনজনের ভূপতনের ঘটনাটিও বিশ্ব অনেকদিন ধরে মনে রাখবে।

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা তাদের আতঙ্কজনক প্রত্যাবর্তন অনেক দিন মনে রাখবে এবং যারা আফগানে সেনা মোতায়েন ও ৮৩ বিলিয়ন ডলার খরচ করে তালেবানকে হটাতে চেয়েছিল সেইসব নেতাদের ঘৃণা করবে। যারা শিখতে চায়, তাদের জন্য আফগানে মার্কিন পতনের ঘটনায় একটি বড় শিক্ষা রয়েছে।