খলিলজাদের জন্যই কি আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের ‘পরাজয়’
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে, যুক্তরাষ্ট্রের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিলো। যেখানে একজন মার্কিন নাগরিককে আফগানিস্তানে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত জালমে খলিলজাদ সম্পর্কে মন্তব্য করতে দেখা যায়।
জালমে খলিলজাদ
ভিডিওতে দেখা যায়- মার্কিন এই বিশেষ দূত যখন একটি সরকারি ভবনে প্রবেশ করছিলেন, তখন সেই ব্যক্তি খলিলজাদকে ‘পরাজিত ব্যক্তি’ বলে সম্বোধন করেন। এসময় ওই ব্যক্তি আফগানিস্তানে কী ঘটেছে সে সম্পর্কেও জানতে চান। কোন কথা না বলেই খলিলজাদ দ্রুত তাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন!
সামাজিক মাধ্যমে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পরপরই সাংবাদিক, কৌশলগত বিষয় বিশেষজ্ঞ এবং সাধারণ মানুষ এটিকে শেয়ার দিয়েছেন। কিছু ব্যবহারকারী মার্কিন নাগরিকের এমন আচরণের নিন্দা করলেও অধিকাংশই তাকে সমর্থন করেছেন।
পাশাপাশি ব্যবহারকারীরা খলিলজাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন যে, তিনি পাকিস্তানের নির্দেশে আফগানিস্তানকে তালেবানদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তালেবানের কাবুল দখল এবং আফগানিস্তানের বর্তমান সংকটের জন্য একমাত্র দায়ী ব্যক্তি হলেন খলিলজাদ। এ ছাড়া পাকিস্তান ঘেষা নীতির কারণেও বিশ্ব গণমাধ্যমে তার ব্যাপক সমালোচনা করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম পলিটিকো বলছে- ‘আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের ৯/১ পরবর্তী সকল অর্জনই নষ্ট করে দিয়েছে জালমে খলিলজাদ।’
শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে বিশেষ দূত হিসেবে খলিলজাদেকে আফগানিস্তানে নিযুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, আফগানিস্তানে তিনি মার্কিন নীতিকে পাকিস্তানের অনুকূলে রাখতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। আর শান্তি আলোচনা পুরোটাই পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার কয়েক মাস পরেই কাবুলসহ সমগ্র আফগানিস্তান দখল করে নেয় তালেবান।
খলিলজাদে গত এক বছরে অসংখ্যবার পাকিস্তান সফর করেছেন। কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছেন, আফগানিস্তান শান্তি আলোচনায় ইসলামাবাদকে রাজি করাতেই তিনি সেখানে গেছেন। কিন্তু প্রতিবারই তিনি দেশটির সেনাপ্রধান ও গোয়েন্দা প্রধানের সঙ্গে দেখা করেছেন। আর এ নিয়ে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে অসংখ্যবার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
এর বাস্তব উদাহরণ ২১ এপ্রিল ২০২১ এর একটি ঘটনা। পাকিস্তানের পৃষ্ঠপোষকতায় তালেবান যখন আফগানিস্তানে প্রবলভাবে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, তখন সিনেটের এক শুনানিতে পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলেন এই বিশেষ দূত। তিনি সিনেটকে জানান, পাকিস্তান তালেবানকে কোন প্রকার সহায়তা করছে না। ফলে, ইমরান খানের সরকারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি সিনেট।
আফগান শান্তি আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ায় বিশ্ব মিডিয়ায় পাকিস্তানের স্তুতি গেয়েই ক্ষান্ত থাকেননি, খলিলজাদে, চলে যান পাকিস্তান সফরে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও সেনাপ্রধান ওমর জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গে দেখা করেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে ধন্যবাদ জানান! তার এমন কর্মকাণ্ডে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় যে, পাকিস্তান ছাড়া আফগান শান্তি আলোচনা কখনোই সম্ভব নয়।
এ ছাড়া খলিলজাদকে আফগানিস্তানে বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার বেশ কয়েকটি ছবি প্রকাশিত হয়েছে। ছবিগুলো পর্যবেক্ষণ করে ধারণা করা হচ্ছে, তালেবান নেতাদের সঙ্গে তার অন্তরঙ্গ সম্পর্ক রয়েছে। এ ছাড়া তালেবানের প্রশংসা করে তার দেওয়া বিবৃতিও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে।
এদিকে আফগানিস্তানের প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট আমেরুল্লাহ সালেহ ঠিক জালমে খলিলজাদের বিপরীত। তিনি আফগানিস্তানের বৃহত্তর স্বার্থে তালেবানের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান এবং পাকিস্তানের ষড়যন্ত্রের মোক্ষম জবাব দিতে চাইতেন। অথচ খলিলজাদেরও একই প্রত্যাশা থাকার কথা থাকলেও তিনি তালেবান ও পাকিস্তানের হয়েই কাজ করেছেন। আর সন্ত্রাসীদের চক্ষুশূল হয়েছেন সালেহ।
ফলে দেখা যায় গত বছরের সেপ্টেম্বরে সালেহকে হত্যা করতে হামলা চালায় সশস্ত্র তালেবান। এতে ভাইস প্রেসিডেন্ট সালেহ’র ১০ নিরপত্তারক্ষী নিহত ও মারাত্মক আহত হন অন্তত ৩১ জন। সামান্য আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান আমরুল্লাহ সালেহ। আর এর কিছুদিন পরে খলিলজাদে যখন দোহায় শান্তি আলোচনায় যোগ দেন, তখন তালেবানকে তার সঙ্গে হাস্যজ্জল মুখে কুশল বিনিময় করতে দেখা গেছে!
তাই বিশ্লেষকরা বলছেন, গত দুই দশকে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের যতটা অর্জন ছিলো বিশেষ দূত হিসেবে জালমে খলিলজাদের নিয়োগের পর সেই অর্জনকে ‘বিসর্জন’ দিয়েছে ওয়াশিংটন। শুধু তাই নয় এর মধ্যে দিয়ে এই অঞ্চলে কৌশলগত আধিপত্য হারিয়েছে মার্কিনিরা। আর ক্ষমতায় যাওয়ার রাস্তা প্রশস্ত করেছে তালেবান। সেই সুযোগে পাকিস্তানকে ব্যবহার করে দৃশ্যপটে হাজির হয়েছে চীন, পিছিয়ে নেই মস্কোও। ফলে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আফগানিস্তান!
সূত্র: জিনিউজ
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.