তালেবানের শাসনে কার লাভ, কার ক্ষতি
- Details
- by মাহফুজ সাদি
দুই দশকের পশ্চিমা আগ্রাসনের মুখে ২০০১ সালে আফগানিস্তানের ক্ষমতা হারিয়েছিল তালেবান। দীর্ঘ লড়াই শেষে সম্প্রতি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির ফের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে গোষ্ঠীটি। তারা এখনো সরকার গঠন করতে না পারলেও এরইমধ্যে পাল্টে গেছে কাবুল কেন্দ্রিক হিসাব-নিকাশ।
কাতার শান্তি আলোচনায় তালেবান নেতারা, ফাইল ছবি
এমন প্রেক্ষাপটে আফগানিস্তানে ক্ষমতার পালাবদলে নতুন মেরুকরণের দিকে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতি। বিশেষ করে বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের দেশগুলোতে তার কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে ভাবছেন অনেকেই। ভবিষ্যৎ তালেবান সরকারের আমলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কার লাভ, কার ক্ষতি হবে, সেই বিশ্লেষণ সামনে এসেছে।
মোটাদাগে বলতে গেলে, তালেবানের প্রাধান্য পেতে যাওয়া আফগানিস্তানের সম্ভাব্য সরকারের সময় সবচেয়ে লাভবান হবে পাকিস্তান। একইভাবে ক্ষতির মুখে পড়বে তাদের ‘চির শত্রু’ ভারত। সেটি এরইমধ্যে ক্রমেই স্পষ্ট হতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তালেবান যোদ্ধারা, ফাইল ছবি
আজ শনিবার এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির পতনের পর দেশটিতে নতুন সরকার গঠনে বর্তমানে তিনটি পক্ষ তৎপরতা চালাচ্ছে। সেগুলো হলো- দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয়া তালেবান, তাদের বিরোধী শিবির এবং প্রতিবেশী পাকিস্তান। প্রথম দুই পক্ষের মধ্যে কাবুলের ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে দেন-দরবার তথা মধ্যস্থতা করছে তৃতীয় পক্ষটি।
পাকিস্তানের এই সক্রিয়তার বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আয়েশা সিদ্দিকা বলছেন, সন্দেহাতীতভাবে কাবুলে নিজেদের পছন্দমতো একটি সরকার চায় ইসলামাবাদ। তাতে তালেবানের প্রাধান্য থাকবে, সেটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে পাক সরকার। পাকিস্তান মনে করে, সবসময় তাদের পক্ষে থাকবে তালেবান। এতে আফগানিস্তানে খর্ব হবে ভারতের প্রভাব। এটি নিজেদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্যও খুব জরুরি। কেননা, ২০০১ সালে মার্কিন আগ্রসানে তালেবানের পতন হলে কাবুলে প্রভাব দ্রুত কমে ইসলামাবাদের, বিপরীতে বাড়ে ভারতের প্রভাব।
তালেবান প্রতিনিধি দলের সঙ্গে পাক কূটনীতিকরা, ফাইল ছবি
এদিকে, আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখলের দুই দিন পরই ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে তালেবান। দেশটিতে অবস্থিত দুটি ভারতীয় দূতাবাসেও গোষ্ঠীটির তল্লাশি চালানোর খবর বেরিয়েছে। তাতে বলা হয়, দূতাবাসের বাইরে থাকা গাড়িও জব্দ করেছে তালেবান।
দিল্লির ব্যবসায়ী নেতারা জানান, আফগানিস্তানের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার ভারত। চলতি বছর এখন দেশটিতে ভারতের রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ৮৩ দশমিক ৫ কোটি মার্কিন ডলার। একই সময়ে আফগানিস্তান থেকে ভারত আমদানি করেছে প্রায় ৫১ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য। তালেবান মুখপাত্র সোহাইল শাহীন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ভারতকে আর তাদের স্বার্থে আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। তবে আফগানিস্তানে তাদের অসমাপ্ত অবকাঠামো এবং পুনর্গঠনমূলক প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারবে দিল্লি।
পাকিস্তান হয়ে আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তানের বাণিজ্যসহ বিভিন্ন খাতে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে। তাছাড়া আফগানিস্তানে ভারতের বিনিয়োগের পরিমাণও অনেক। যা প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার। দেশটিতে বর্তমানে প্রায় ৪০০টি ভারতীয় প্রকল্প চলমান।
এ ছাড়া তালেবানের দখলে থাকা কাবুলের আকাশ পথে ঢুকছে না ভারতসহ অনেক দেশের বিমান। এশিয়া থেকে ইউরোপ যাওয়ার অন্যতম এই পথ পরিবর্তন করে বিকল্প পথে যেতে নিজেদের বিমান সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছে কিছু দেশ। এর ফলে বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ভারত।
অন্যদিকে, আফগানিস্তানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পুরোটা সময় জুড়েই তালেবানের পাশে ছিল চীন। এখনও দেশটি প্রচ্ছন্নভাবে হলেও সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছে, কয়েকদিন আগে তালেবানের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল বেইজিং সফর করে এসেছে। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বৃহস্পতিবার বলেছেন, আফগানিস্তানকে ইতিবাচকভাবে নেওয়া উচিত।
মোল্লা আবদুল গনি বারাদারের সঙ্গে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই, ফাইল ছবি
আল-জাজিরা জানায়, আগামী দিনগুলোতে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আফগানিস্তানের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ হতে যাচ্ছে চীন। কারণ অন্যান্য পরাশক্তি আফগানে হস্তক্ষেপ করার ফলে বহু বছর ধরে শুধু যুদ্ধই চলেছে, বহু মানুষ নিহত হয়েছে। বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে তালেবানকে পাশে পেতে চায় চীন।
এই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর মধ্যে সাম্প্রতিককালে তালেবানের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে রাশিয়া ও ইরানেরও। দেশ দুটি তালেবানের ক্ষমতা দখলে বেশ ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তুরস্কও তালেবানকে স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। কাবুলের নতুন প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে আঙ্কারা।
এর বাইরে কাবুলের পরিবর্তনের দিকে সতর্ক নজর রাখার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। তিনি আরো জানান, নতুন সরকারে যারাই আসুক, সেটি জনগণের সরকার হলে গ্রহণ করবে ঢাকা। তবে দেশটির শরণার্থীদের গ্রহণের বিষয়ে মার্কিন প্রস্তাব নাকচ করা হয়েছে।
গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকেই তালেবানের সম্ভাব্য কট্টর শাসন নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে আসছে পশ্চিমা দেশগুলো। তালেবানের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, তারা আর আগের মতো কট্টরপন্থা অনুসরণ করবে না। এরপরও অধিকাংশ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তাদেরকে কট্টর হিসেবেই প্রচার করা হচ্ছে। তবে দীর্ঘ দুই দশক পর ফের আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া তালেবানের অবস্থা বুঝতে হলে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.