আয়লান কুর্দিহীন বিশ্বের ছয় বছর

ছয় বছর আগে সমুদ্র উপকূলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিল ছোট্ট একটি শিশু। নীল প্যান্ট, লাল টি-শার্ট এবং কেডস পরা সিরীয় শরণার্থী শিশু আয়লান কুর্দির করুণ মৃত্যুতে চোখে পানি আসেনি এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। বিশ্বজুড়ে দুর্ভাগা অভিবাসীদের প্রতীক হয়ে ওঠেছিল এ ছবিটি। ২০১৫ সালের ওই ঘটনা নাড়া দিয়েছিল পুরো বিশ্বকে। ওইদিন আয়লানের সাথে তার মা-ভাইসহ মারা যান আরো ১১ জন।

জানা যায়, আয়লানের পরিবার থাকতো সিরিয়ার কোবানে শহরে। সেখানে আইএস জঙ্গিদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর লড়াই শুরু হওয়ার পর তারা প্রথমে তুরস্কে পালিয়ে যায়। সেখান থেকে কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন। কিন্তু তাদের সে আবেদন নাকচ হয়ে যায়। এরপর তারা তুরস্ক থেকে গ্রিসে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে।

ছোট্ট আয়লানও ছিল তার পরিবারের সঙ্গে। কিন্তু তাদের বহনকারী নৌকাটি সাগরে ডুবে গেলে তিন বছর বয়সী আয়লান, তার পাঁচ বছর বয়সী ভাই এবং মায়ের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নৌকার ১৬ আরোহীর ১২ জনই মারা যান। তবে সৌভাগ্যক্রমে ওই দুর্ঘটনায় বেঁচে যান আয়লানের বাবা। পরে আয়লানের লাশ ভেসে ওঠে তুরস্কের সমুদ্র সৈকতে। উপুড় হয়ে পড়ে থাকা তার নিথর দেহের দৃশ্য হয়ে উঠেছিল বিশ্বব্যাপী চলমান শরণার্থী সংকটের প্রতিচ্ছবি। গতকাল বৃহস্পতিবার আয়লান কুর্দির লাশ ভেসে ওঠার ছয় বছর পূর্ণ হয়েছে।

মর্মান্তিক সেই ঘটনার পার হয়ে গেছে ছয়টি বছর

বিশ্বজুড়ে অভিবাসীদের নিয়ে ব্যবসা করে থাকে বিভিন্ন দেশের মানবপাচারকারী চক্র। আয়লানদের মৃত্যুর ঘটনাতেও জড়িত ছিল তুরস্ক ও সিরিয়ার একাধিক পাচারকারী চক্র। তাদের অনেককেই ইতোমধ্যে সাজা দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত বছর তিন আসামিকে ১২৫ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়।

আয়লানের ওই মৃত্যুর পর শরণার্থী ইস্যু নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। বিভিন্ন দেশ শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার বিষয়ে উদারনীতি অবলম্বন করে। তবে এখনো শরণার্থী স্রোত ইউরোপের একটি বড় সমস্যা।

সিরিয়া, ইয়েমেনের মতো যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশগুলোর লোকজন জীবন বাঁচাতে ইউরোপকেই শেষ আশ্রয় মনে করছে। এখনো বহু শরণার্থী ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে। এ প্রাণ হারানোর মিছিলে প্রতি বছর বাংলাদেশির নামও দেখা যায়।