‘বিশেষ মহল’কে দায়ী করলেন ওসি প্রদীপের আইনজীবী

বহুল আলোচিত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা ‘বিশেষ মহলের নির্দেশে’ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন আসামি বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ দাশের আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত। সেইসঙ্গে সাক্ষীরাও সেই মহলের নির্দেশে সাক্ষ্য দিচ্ছেন বলে আজ সোমবার মন্তব্য করেন তিনি।

সিনহা মো. রাশেদ খান, ফাইল ছবি

এ মামলায় দ্বিতীয় ধাপের সাক্ষ্যগ্রহণের দ্বিতীয় দিন শেষ হয়েছে আজ। এদিন সাক্ষ্য দেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক কামাল হোসেন। পরে তাকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। এর আগে গতকাল রোববার সাক্ষ্য নিয়ে উভয় পক্ষের আইনজীবীদের গণমাধ্যমে কথা বলার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। এ বিষয়ে রানা দাশ গুপ্ত গতকাল বলেন, সাক্ষ্য নিয়ে ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ হওয়ার বিষয়টি আদালতকে অবহিত করা হয়েছে। সেটি আমলে নিয়ে মিডিয়ায় কোনো বক্তব্য না দিতে দু’পক্ষের আইনজীবীদের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আদালত চত্বরে আজ তিনি বলেন, ১৬৪ ধারায় আগে দেয়া জবানবন্দির সঙ্গে সাক্ষী কামালের বক্তব্য কোনো মিল নেই। বিশেষ মহলের নির্দেশে সাক্ষীরা ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন, প্রত্যেক সাক্ষীর ক্ষেত্রেই একই অবস্থা। মিডিয়া ট্রায়ালের বিষয়ে রানা দাশ গুপ্ত বলেন, প্রসিকিউশনে লেখাগুলো গণমাধ্যমে চলে আসায় টেলিভিশন টকশোতে মনগড়া তথ্য দেখা যাচ্ছে। বিষয়টি কেউ আদালতের নজরে আনেনি, স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে গণমাধ্যমে কথা বলার ক্ষেত্রে সংযত হতে বলেছেন আদালত।

আদালতে চত্বরে রানা দাশ গুপ্ত

এ মামলায় ১৫ জন সাক্ষীকে তলব করা হলেও ২৩-২৫ আগস্ট মামলার বাদী ও সফরসঙ্গীর সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হয়। তারা হলেন- মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস ও দুই নম্বর সাক্ষী শাহেদুল ইসলাম সিফাত। বাকি ১৩ জনের সাক্ষ্য নেয়া সম্ভব না হওয়ায় ৫-৮ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দফায় সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন আদালত। গতকাল সাক্ষ্য দেন মোহাম্মদ আলী, তাকে জেরা করেন আসামিদের আইনজীবীরা।

সিনহার সফরসঙ্গী ও প্রত্যক্ষদর্শী শাহেদুল ইসলাম সিফাত সাক্ষ্যে বলেছিলেন, গত বছরের ৩১ জুলাই রাতে পুলিশের পরিদর্শক লিয়াকত আলী গুলি করার পর রাস্তায় ঢলে পড়েন সিনহা। তিনি কাতরানো অবস্থায় ঘটনাস্থলে পৌঁছে লিয়াকতের সঙ্গে আড়ালে গিয়ে কথা বলেন ওসি প্রদীপ। পরে সিনহার একেবারে কাছে গিয়ে আপত্তিকর ভাষায় গালি দেন এবং পা দিয়ে সিনহার শরীর নাড়িয়ে দেখেন তিনি।

সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক লিয়াকত আলী, ফাইল ছবি

তখনো জীবিত সিনহা ‘পানি পানি’ বলে চিৎকার করলে তার বুকে লাথি মারেন ওসি প্রদীপ। এরপর নিজের পা দিয়ে সিনহার গলা চেপে ধরে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন তিনি। পরে তার সফরসঙ্গী সিফাতকে তল্লাশি চৌকির ভেতরে নিয়ে মারধর করেন প্রদীপ, বলেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সিফাত।

সিনহার বড় বোন ও প্রথম সাক্ষী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস আদালতকে জানান, ওসি প্রদীপের নির্দেশে লিয়াকতের গুলিতে সিনহা খুন হন। হত্যাকাণ্ডটি পূর্বপরিকল্পিত দাবি করে আদালতের কাছে অভিযুক্ত ১৫ আসামির সর্বোচ্চ শাস্তির আকুতি জানান তিনি।

গত ২৭ জুন সিনহা হত্যা মামলার ১৫ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালত। টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে গত বছরের ৩১ জুলাই রাতে গাড়ি তল্লাশিকে কেন্দ্র করে বিতণ্ডার এক পর্যায়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা। পরে গত ৫ আগস্ট এ ঘটনায় নিহতের বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলায় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ (পরিদর্শক) লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি করা হয়। এছাড়া টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়। মামলাটি তদন্ত করার জন্য র‌্যাবকে আদেশ দেন আদালত। প্রধান আসামি লিয়াকত আলী ও প্রদীপ কুমার দাশসহ ৭ পুলিশ সদস্য গত ৬ আগস্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলাম গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। মামলার অন্যতম অভিযুক্ত প্রদীপ কুমারের অন্যতম সহযোগী কনস্টেবল সাগর দেব ঘটনার শুরু থেকেই পলাতক ছিলেন। অবশেষে গত ২৪ জুন আত্মসমর্পণ করেন তিনি।