লেবাননে ১৩ মাস পর নতুন সরকার

লেবাননে ১৩ মাসের অচলাবস্থার অবসান ঘটিয়ে যাত্রা শুরু করেছে নতুন সরকার। গতকাল শুক্রবার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নাজিব মিকাতির নেতৃত্বে ২৪ সদস্যের মন্ত্রিসভা ঘোষণা করে দেশটির প্রেসিডেন্টের কার্যালয়। সে দিনই এ সংক্রান্ত একটি ডিক্রিতে সই করেন প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন ও প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি।

ডিক্রিতে সই করছেন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়া নাজিব মিকাতি

মিকাতি যে ধরনের সরকার গঠন করেছেন, লেবাননে তা এই প্রথম। নতুন মন্ত্রিসভায় চারজন বিচারক এবং একজন নারী রয়েছেন। বিচারকরা হলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য আব্বাস আল-হালাবি, বিচার মন্ত্রণালয়ের জন্য হেনরি খুরি, অভ্যন্তরীণ মন্ত্রনালয়ের জন্য বাসাম আল-মাওলভী, হিজবুল্লাহর সাথে যুক্ত সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের জন্য মোহাম্মদ মোর্তাদা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তা ইউসুফ খলিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ বাউহাবিব পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

ফিরাস আবিয়াদকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। নাসির ইয়াসিনকে দেয়া হয়েছে পরিবেশ মন্ত্রীর দায়িত্ব। অন্যদিক সালামকে অর্থনীতি মন্ত্রী ঘোষণা করা হয়। উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সায়াদা আশ শামি।

বৈঠকে লেবাননের শীর্ষ তিন নেতা

সরকার গঠনের ঘোষণার পর মিকাতি দেশের অবস্থা বর্ণনা করে বলেছেন, আমরা এখন একটি বিমানের জরুরি অবতরণ করছি। প্রত্যেককে অবশ্যই তাদের সিটবেল্ট বেঁধে রাখতে হবে এবং আশা করি আমরা শিগগিরই এই বিমানের গতিপথ পরিবর্তন করতে পারব। পরিস্থিতি কঠিন এবং আমাদের অর্থ ফুরিয়ে গেছে। আবার আমাদের ভর্তুকি দেয়ারও অর্থ নেই।

দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আসুন রাজনীতি একপাশে রেখে মানুষের জন্য কাজ করি। আমাদের অনেক কাজ আছে। আসুন আমরা মানুষের মনোবল বাড়াই, একটি ভালো শব্দও এক্ষেত্রে অনেক উপকার করতে পারে।

মিকাতি অশ্রুসিক্ত নয়নে বলেন, পরিস্থিতি কঠিন। আমরা মৌল মানবিক অধিকারগুলো সুরক্ষিত রাখতে আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে যোগাযোগ করব। আমি আরব দেশগুলোর দরজায়ও কড়া নাড়ব, কারণ লেবানন এই আরব বিশ্বের অন্তর্গত।

সরকার পার্লামেন্ট নির্বাচন করবে কি-না জানতে চাইলে মিকাতি বলেন, আমি অবশ্যই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, ৮ মে পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং পৌরসভা নির্বাচনও যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে।

সিরিয়ার সাথে সরকারের যোগাযোগের সম্ভাবনার ব্যাপারে তিনি বলেন, এই সরকার লেবাননের সর্বোত্তম স্বার্থের জন্য এসেছে। আর সেক্ষেত্রে আমরা ইসরায়েল ছাড়া অন্য যে কারো সাথে যোগাযোগ করব।

গত বছরের ৪ আগস্ট বৈরুত বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াবের সরকার পদত্যাগ করে। এর পর থেকে ১৩ মাসের বেশি সময় ধরে লেবানন কার্যত সরকার ছাড়াই চলেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলো নতুন সরকার গঠন নিয়ে চরম মতবিরোধে জড়িয়ে পড়েছিল। এসব কারণে দেশটির অর্থনৈতিক মন্দা ত্বরান্বিত হয়।

এ অবস্থায় সাদ হারিরি সরকার গঠন করতে ব্যর্থ হওয়ার পর গত ২৬ জুলাই নাজিব মিকাতিকে সরকার গঠনের দায়িত্ব দেন প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন। তারপর তিনি পার্লামেন্টের ১১৮ সদস্যের মধ্যে ৭৩ সদস্যের ভোট লাভে সমর্থ হন। পার্লামেন্টে সমর্থন লাভের একদিন আগে তিনি লেবাননের সাবেক তিনজন প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি হিজবুল্লাহসহ সক্রিয় বেশ কিছু দলেরও সমর্থন পেয়েছিলেন। তখন থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল, মিকাতি দ্রুত লেবাননের জন্য নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করবেন।

সূত্র: আল জাজিরা