তালেবানের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে আইএস

উগ্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) পূর্ব আফগানিস্তানে তালেবান যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে ধারাবাহিকভাবে বোমা হামলা করেই যাচ্ছে। রাস্তার পাশে তারা বোমা পুতে রাখছে, আর তাতেই ধরাশায়ী হচ্ছে তালেবান। হামলাগুলোর দায় স্বীকারও করছে আইএস। বার বার এই হামলার ফলে তালেবান ও আইএসের মধ্যে ব্যাপক সংঘাতের সৃষ্টি হয়েছে।

আইএস নিয়ে নতুন করে সমস্যায় পতিত হচ্ছে তালেবান

যুক্তরাজ্যভিত্তিক হ্যাম্পশায়ার গেজেটের খবরে বলা হচ্ছে, আফগানিস্তানের প্রাদেশিক শহর জালালাবাদে সপ্তাহান্তে তালেবানদের গাড়ি লক্ষ্য করে একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে। এসব হামলায় আটজন তালেবান যোদ্ধা নিহত হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। সর্বশেষ সোমবার, ২০ সেপ্টেম্বর, আরও তিনটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।

খবরে বলা হচ্ছে, তালেবানরা আইএস সদস্যদের নিয়ন্ত্রণে চাপের মুখে রয়েছে। কারণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দেওয়া প্রতিশ্রুতি মোতাবেক তালেবানদের দেশটির মাটিতে আইএস ও অন্যান্য সন্ত্রাসী গ্রুপের হামলা মোকাবেলা করতে হবে। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানদের মধ্যেও ব্যাপকভাবে প্রত্যাশা রয়েছে, তালেবান জনসাধারণের নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনবে।

আইএসের বোমা হামলায় সম্প্রতি নিহত ব্যক্তির স্বজন ফেদা মোহাম্মদ বলছেন, তার ভাই ১৮ বছর বয়সী রিকশাচালক ও ১০ বছর বয়সী তার আরেক স্বজন বোমা হামলায় নিহত হয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম তালেবান এসেছে, শান্তি আসবে। কিন্ত শান্তি ও নিরাপত্তা নেই। বোমা বিস্ফোরণের খবর ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছে না।

খবরে বলা হচ্ছে, তালেবান কাবুল দখলের পরই সেখানকার হামিদ কারজাই বিমানবন্দরে আইএস বোমা হামলা করে। ওই হামলায় ১৩ মার্কিন সেনাসহ অন্তত ১৮০ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়। আইএসের হামলা থেমে নেই। আর এখন আফগানিস্তানের অর্থনীতি পতনের দিকে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এবং দেশের শিক্ষিত অভিজাত শ্রেণীর হাজার হাজার সদস্য পালিয়ে গেছে। দেশটিতে এখন খরা, ক্ষুধা এবং দারিদ্র্যের পূর্বাভাস।

জালালাবাদের এক দোকানদার আবদুল্লাহ সোমবার বলেন, আমাদের দুঃখ-দর্দশা চরমে পৌঁছেছে। মানুষের কোনো কাজ নেই, মানুষ আটা কিনতে তাদের কার্পেট বিক্রি করছে। এখনও বোমার বিস্ফোরণ হচ্ছে। এসব বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করছে আইএস।

খবরে বলা হচ্ছে, এসব হামলায় আফগানিস্তানে আরও সহিংসতার আশঙ্কা জোরদার হচ্ছে। অর্থনৈতিক মন্দার মুখোমুখি তালেবান সরকারের দুর্বলতার সুযোগে আইএস তাদের সহিংসতা বাড়িয়ে দিয়েছে। একটি আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের পরামর্শদাতা ও বিশ্লেষক ইব্রাহিম বাহিস বলছেন, আফগানিস্তানে আইএস নাটকীয়ভাবে প্রত্যাবর্তন করছে।

এখন গ্রুপগুলোর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী লড়াই হতে পারে। তিনি বলছেন, আইএস আফগানিস্তানে আপাতত পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে হামলা না করলেও স্থানীয়ভাবে তারা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়ছে।

প্রতিবেদন বলছে, আফগানিস্তানে এখন আইএসের লক্ষ্য ভিন্ন। তারা মূলত গোটা মধ্যপ্রাচ্যে যে কথিত খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায় তাতে আফগানিস্তানকেও জুড়ে দিতে চায়। তালেবান ও আইএস পরীক্ষিত শত্রু। তালেবান যেমন মার্কিনিদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, তেমনি কিছু স্থানে আইএসের সঙ্গেও তাদের লড়াই করতে হয়েছে।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, আইএস আফগানিস্তান ও আশপাশের বৃহত্তর অঞ্চলের জন্য হুমকি। মূলত শিয়া মুসলিমদের লক্ষ্য করে আইএস স্কুল, মসজিদ ও হাসপাতালে নৃশংস হামলা চালিয়ে আসছে।