মার্কিন সামরিক নেতৃবৃন্দ: আফগানিস্তান নিয়ে হিসাবে ভুল ছিল

দীর্ঘ দুই দশক অবস্থানের পর এক রকম পরাজয়ের লজ্জা নিয়েই আফগানিস্তান ছেড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এক শুনানিতে মার্কিন শীর্ষ সামরিক নেতৃবৃন্দ স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, আফগানিস্তান নিয়ে ওয়াশিংটনের হিসাব ভুল ছিল। প্রচুর অর্থ ব্যয়ে গড়া আফগান সেনাবাহিনী ও সরকার তাদের হতবাক করেছে। আল জাজিরা ও এবিসি নিউজ।

লয়েড অস্টিন ও মার্ক মিলি

আফগানিস্তান যুদ্ধ এবং এর পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার মার্কিন কংগ্রেসে শুনানির মুখোমুখি হন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন, মার্কিন সেনাবাহিনীর জেনারেল জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান মার্ক মিলি, ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জেনারেল ফ্রাঙ্ক ম্যাকেঞ্জিসহ আরো কয়েকজন। এর আগে এ ধরনের শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।

মঙ্গলবার শুনানির প্রথমদিনে প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেন, মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহারের ঘোষণার প্রেক্ষিতে আফগানিস্তানের সেনাবাহিনী যেভাবে বসে পড়েছে, তা সবাইকে হতবাক করেছে। আফগান সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা, উচ্চ-পদস্থ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি এবং দুর্বল নৈতিকতাসহ আমেরিকার ২০ বছরের দীর্ঘ যুদ্ধের ব্যাপারে ওয়াশিংটন যে হিসাব করেছিল তা ভুল ছিল। আফগান সেনাবাহিনীকে এত সময় ও অর্থ ব্যয় করে প্রশিক্ষণ দেয়া হলেও  ক্ষেত্রবিশেষে কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই দ্রুত পরাজয় মেনে নিয়েছে।

কাবুলে মার্কিন সেনা, ফাইল ছবি

শুনানিতে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর জেনারেল, জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান মার্ক মিলি জানান, তালেবানের ক্ষমতা দখলের গতির ব্যাপারে তিনি যথাযথ আন্দাজ করতে পারেননি।

তবে তিনি দাবি করেন, গত বছরের শেষের দিকে কোনো ধরনের চুক্তি ছাড়াই তড়িঘড়ি করে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য প্রত্যাহার হলে আফগান সামরিক বাহিনী এবং সরকারের পতন ঘটতে পারে বলে তিনি সতর্ক করে দিয়েছিলেন।

মিলি বলেন, প্রযুক্তি ও ক্ষমতার ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় আমরা সাংস্কৃতিক দিকগুলোকে গুরুত্ব দেইনি। তার মতে, ভিয়েতনাম ও আফগানিস্তান উভয় ক্ষেত্রে একটি শিক্ষা ছিল, যুদ্ধকে আমেরিকান করবেন না।

ধারণা করা হচ্ছে, জেনারেল মিলি রিপাবলিকানদের কাছ থেকে বুধবার আরো কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে পারেন। বেশ কয়েকবারই মিলির বরখাস্তের দাবি উঠেছিল রিপাবলিকানদের পক্ষ থেকে।

কংগ্রেস সদস্যরা তাকে এবং জেনারেল ম্যাকেঞ্জিকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের শেষ প্রান্তে দুটি ঘটনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন। তার একটি হচ্ছে- কাবুল বিমানবন্দরে আইএসকের হামলায় ১৩ মার্কিন সেনাসহ ১৮২ জন নিহত হওয়া এবং অপরটি ২৯ আগস্ট কাবুলে মার্কিন ড্রোন হামলার বিষয়ে। একই পরিবারের ১০ জন নিরীহ সদস্য নিহত হয় এই হামলায়।

এছাড়া মিলির বিরুদ্ধে অভিযোগ, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সময়ে চীনের সামরিক বাহিনীর সাথে তিনি যোগাযোগ করেছিলেন। জানা গেছে, এ বিষয়গুলো নিয়ে মিলি ও ম্যাকেঞ্জিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

নাইন ইলেভেন হামলার পর ২০০১ সালের শেষের দিকে মার্কিন সেনারা আফগানিস্তানে প্রবেশ করে। ২০ বছরে তারা সেখানে ৯৮৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে।