তালেবানের জমকালো কুচকাওয়াজ, দুশ্চিন্তায় পশ্চিমা বিশ্ব

আফগানিস্তানে ২৫০ জন সেনার গ্রাজুয়েশনপ্রাপ্তি উপলক্ষে গত রোববার এক কুচকাওয়াজের আয়োজন করে তালেবান প্রশাসন। কাবুল দখলের তিন মাসের মাথায় এমন জমকালো কুচকাওয়াজে চমকে গেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব। তাদের হাতে থাকা অস্ত্রসম্ভার ও সক্ষমতা দেখে কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে মার্কিন প্রশাসনের। রয়টার্স।

তালেবানের জমকালো কুচকাওয়াজের একাংশ

গত ৩১ আগস্ট আফগানিস্তানে থাকা সব বিদেশি সেনা নিজ দেশে ফেরত যায়। তড়িঘড়ি ও অপরিকল্পিতভাবে সেনা প্রত্যাহারের জেরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে কোটি কোটি ডলার মূল্যের অত্যাধুনিক হাতিয়ার ফেলে যেতে বাধ্য হয় মার্কিন বাহিনী। ব্ল্যাকহক, চিনুক হেলিকপ্টার থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম কাবুল বিমানবন্দরে ফেলে আসে মার্কিন সেনারা। 

অবশ্য যাওয়ার আগে তারা সেখানে থাকা অস্ত্রশস্ত্র ও সামরিক যানবাহনের সর্বোচ্চ ক্ষতি সাধন করে। পাশাপাশি বেসামরিক বিমান নিয়ে পালিয়ে যেতে বলা হয় আফগান পাইলটদের। ফলে একই সাথে সমরাস্ত্র ও মানবসম্পদ- উভয় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ার কথা ছিল তালেবানের। পেন্টাগনে গিয়ে আফগান ফেরত মার্কিন সেনারা তেমনই প্রতিবেদন জমা করেছেন।

তালেবানের ইউনিফর্মে এসেছে পরিবর্তন

এ অবস্থায় সরকার গঠনের মাত্র আড়াই মাসের মাথায় এমন কুচকাওয়াজকে অনেকেই পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি সতর্কবার্তা বলে মনে করছেন। তালেবানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এনায়েতুল্লা খাওয়ারেজমি জানান, ডিফেন্স অ্যাকাডেমি থেকে ২৫০ জন নতুন সৈন্যের পাসআউট অনুষ্ঠান উপলক্ষে এই কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিদ্রোহী বাহিনীকে নিয়মিত ও স্থায়ী সামরিক বাহিনীতে রূপান্তরের একটি ধাপ হল এই কুচকাওয়াজ।

সামরিক এই কুচকাওয়াজে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি এস-১১৭ সাঁজোয়া গাড়ি দেখা গেছে। সেগুলোকে নিরাপত্তা দিতে আকাশে চক্কর দিচ্ছিল এম-১৭ হেলিকপ্টার। কাবুলের প্রধান সড়ক দিয়ে অত্যন্ত ধীর গতিতে সামরিক গাড়িগুলো চালানো হয়। বেশ কয়েকজন সৈন্যকে দেখা যায় আমেরিকায় তৈরি এম-৪ অ্যাসল্ট রাইফেল বহন করতে।

একইসঙ্গে, বদল হয়েছে তালেবান বাহিনীর পোশাকও। এর আগে তারা সাধারণত ঐতিহ্যবাহী আফগান পোশাকই পরত। কিন্তু রোববারের কুচকাওয়াজে সেনা সদস্যদের সকলকে প্রচলিত সামরিক ইউনিফর্ম পরতে দেখা গেছে।

জানা গেছে, সাবেক আফগান জাতীয় সেনাবাহিনীর বেশিরভাগ পাইলট, মেকানিকসহ অন্য বিশেষজ্ঞদেরও নতুন বাহিনীতে সামিল করছে তালেবানরা। কর্মকর্তারা বলেছেন, বাহিনীকে পেশাদার করে তুলতেই সাবেক সেনা সদস্যদের তালেবান সরকারের নতুন এই বাহিনীতে একীভূত করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র মনে করেছিল, তাদের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে সামরিক ক্ষেত্রে তালেবান কার্যত পঙ্গু হয়ে যাবে। কিন্তু রোববারের কুচকাওয়াজে দেখা যায় ভিন্ন পরিস্থিতি।

দিনকয়েক আগে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আশঙ্কা প্রকাশ করেন, তালেবানের সহযোগিতায় চীন ও রাশিয়ার হাতে পড়েছে মার্কিন হাতিয়ারগুলো। সেগুলো তৈরির প্রযুক্তি ‘রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং’-এর মাধ্যমে হাতিয়ে নেবে মস্কো ও বেইজিং।

গত বছরের শেষদিকে প্রকাশ করা মার্কিন সরকারের এক মূল্যায়ন অনুযায়ী, আফগান সরকারকে অস্ত্র, গোলাবারুদ, যানবাহন, নাইট-ভিশন ডিভাইসসহ মোট ২৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের প্রতিরক্ষা সামগ্রী এবং পরিষেবা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তালেবানের কাবুল দখলের সময় বেশ কিছু সামরিক বিমান, যুদ্ধযান নিয়ে মধ্য এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়েছিলেন আফগান সেনারা। মার্কিন সেনাও বহু বিমান, সাঁজোয়া গাড়ি এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে। কিন্তু তা যে যথেষ্ট ছিল না, সেটা কুচকাওয়াজের ছোট্ট প্রদর্শনীতেই প্রমাণিত।