‘কাগজের পোস্টার ছিঁড়লেও মানুষের মনের ভেতরের পোস্টারতো ছিঁড়তে পারবে না’

তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী হিসেবে দেশে প্রথমবারের মতো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন নজরুল ইসলাম ঋতু। ঝিনাইদহের ত্রিলোচনপুরের এই নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান বলছেন, পোস্টার যতই ছিঁড়ুক না কেন, আমার কোনো অসুবিধা নাই। তবে মানুষের মনের ভেতরে যে পোস্টার ঢুকে গেছে, সেটা কিন্তু ছিঁড়ে নিতে পারবে না।

নির্বাচনী প্রচারণায় নজরুল ইসলাম ঋতু, ফাইল ছবি

নজরুল ইসলাম ঋতুর জয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এই প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের কোনো ব্যক্তি স্থানীয় পর্যায়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন। স্থানীয় পর্যায়ে তিনি ঋতু হিজড়া নামেই পরিচিত। নির্বাচনী অভিজ্ঞতা নিয়ে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, প্রথম প্রথম তো ভালোই যাচ্ছিল। কিন্তু নির্বাচন যখন ঘনিয়ে এলো, তখন খুব অত্যাচার শুরু হলো। আমার পোস্টার থাকতো না। আমার লোকজন মারধর করা হতো। আমাকে মাঠে নামতে দেয়া হতো না। অপমান করা হতো।

ওই সময়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে আমি বলেছি, আমাকে যতই অপমান করা হোক না কেন, পোস্টার যতই ছিঁড়ুক না কেন, আমার কোনো অসুবিধা নাই। কিন্তু মানুষের মনের ভেতরে যে পোস্টার ঢুকে গেছে, সেটা কিন্তু ছিঁড়ে নিতে পারবে না।

ইউপি নির্বাচন

নির্বাচনের প্রাথমিক ফল অনুযায়ী, নজরুল ইসলাম ঋতু ৯ হাজার ৫৫৭টি ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকের নজরুল ইসলাম সানা পেয়েছেন ৪ হাজার ৫২৯টি ভোট।

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে পাঁচ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন নজরুল ইসলাম ঋতু। ভোটে এত ব্যবধানের ব্যাপারে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, পেছনে কী কারণ, সেটা তো বলতে পারবো না। কিন্তু গত ১৫ বছর ধরে আমি জনগণের মাঝে আছি। তাদের আমি ভালবেসেছি, তারাও আমাকে ভালোবেসেই ভোট দিয়েছে।

জনগণের বিপদে-আপদে আমি সাহায্য করি। গরীব মানুষ যারা আছে, তাদের কাছে আমি ছুটে যাই। কারো বিয়েশাদী লাগলে বা কারো বিপদ হলে আমি ছুটে যাই। এই জন্য হয়তো জনগণ ভালো মনে করে আমাকে ভোট দিয়েছে।

বাংলাদেশে তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিরা এমনিতে সমাজে অবহেলিত। মাত্র কয়েক বছর আগে তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ অবস্থায় তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীকে ঝিনাইদহের ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের বাসিন্দারা ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করেছে। এর মাধ্যমে কী বাংলাদেশে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে?

এর জবাবে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান বলছেন, আমাদের ইউনিয়নে আমি নির্বাচন করেছি। জনগণ আমাকে ভালোবাসে, তাদের সাথে আমি মিলে গেছি। (অন্যরাও) যদি জনগণের সাথে তারা মিলতে পারে, জনগণের কাজ করতে পারে, সেবা করতে পারে, তাহলে হয়তো এই দৃষ্টিটা পাল্টে যেতে পারে।