কানাডার টিকিট কেটেছেন মুরাদ, ফেরত দেননি লাল পাসপোর্ট

নানা বিতর্কিত মন্তব্য করে ব্যাপক সমালোচনার মুখে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন ডা. মুরাদ হাসান। তিনি তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছিলেন। গত মঙ্গলবার, ৭ ডিসেম্বর, পদত্যাগ করার পর থেকেই আলোচিত এই রাজনীতিক দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন বলে শোনা যাচ্ছিল।

ডা. মুরাদ হাসান, ফাইল ছবি

এরই এক পর্যায়ে সবশেষ তথ্যে জানা যাচ্ছে যে, ডা. মুরাদ কানাডার টিকিট কেটেছেন। তিনি আজ বৃহস্পতিবার, ৯ ডিসেম্বর, রাতের টিকিট কেটেছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে। একই সঙ্গে একটি সূত্র বলছে, প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায় মুরাদ হাসান যে লাল পাসপোর্ট ব্যবহার করতেন সেটি এখনো সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেননি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য মতে, আজ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে দেশের বাইরে যেতে পারেন গত কয়েক দিন ধরে ‘আত্মগোপনে’ থাকা মুরাদ হাসান। রাতে বিমানের টিকিট সংগ্রহ করায় এমনটা ধারণা করা হচ্ছে। সূত্র এও বলছে, মুরাদ প্রথমে সপরিবারে দেশের বাইরে যাওয়ার চিন্তা করেন। কিন্তু পরিবারের অন্য সদস্যদের ভিসা না থাকায় শেষ পর্যন্ত একাই দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন তিনি।

প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাস ধরে নানা বিতর্কিত ও নিন্দিত বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন এই ডা. মুরাদ হাসান। যেমন- রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম না রাখা, সংবিধানে বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম না রাখা, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, তার সহধর্মিনী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও তার মেয়ে জাইমা রহমান সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেন তিনি। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও এর নারী শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে ন্যাক্কারজনক মন্তব্য করেন তিনি। একই সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নানা নারী সম্পর্কেও বাজে মন্তব্য করেছেন তিনি।

এরই এক পর্যায়ে গত সোমবার, ৬ ডিসেম্বর, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি অডিও ভাইরাল হয়। যেখানে নায়িকা মাহির সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অত্যন্ত অশ্লীল ভাষায় কথা বলেন সরকারের এই তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী। এই অডিও ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে প্রথমে চট্টগ্রামে চলে যান ডা. মুরাদ। সেখান থেকেই মূলত দেশের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।

এদিকে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর গত মঙ্গলবার তিনি পদত্যাগপত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেন। পরে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হলে তা গ্রহণ করেন তিনি। অপরদিকে, নিজ জেলা জামালপুর আওয়ামী লীগের পদ থেকেও তাকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে।

একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা অবস্থায় মুরাদ হাসান যে লাল পাসপোর্ট বা বিশেষ পাসপোর্ট ব্যবহার করতেন, সেটি তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার কাছে ছিল। কিন্তু মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের কিছুক্ষণ আগে ব্যক্তিগত একজন সহকারীকে দিয়ে সেই বিশেষ পাসপোর্ট নিজের কাছে নিয়ে নেন তিনি। এরপর প্রতিমন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করলেও তার কাছেই রয়ে গেছে লাল পাসপোর্ট। যদিও নিয়মানুযায়ী পদত্যাগের সঙ্গে লাল পাসপোর্টও জমা দেওয়ার কথা। অবশ্য লাল পাসপোর্টধারী ব্যক্তি সরকারি আদেশ, জিও, ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ করতে পারেন না। সেক্ষেত্রে নিজের কাছে লাল পাসপোর্ট থাকলেও মুরাদ হাসান তার সুবিধা কতটা নিতে পারবেন তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

এদিকে, এসব বিষয়ে সদ্য পদত্যাগকারী প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের বক্তব্য জানতে তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। অবশ্য ‘আত্মগোপনে’ যাওয়ার পর থেকেই তার ব্যক্তিগত ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াতেও তাকে সরব দেখা যাচ্ছে না। তবে গতকাল বুধবার, ৮ ডিসেম্বর, সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে নিজের পেজ থেকে একটি পোস্ট দিয়েছেন তিনি। যেখানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থাকা নিজের একটি পুরনো ছবি সংযুক্ত করে দিয়েছেন মুরাদ। ছবির ক্যাপশনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজের কর্মকাণ্ডের জন্য আল্লাহর ওয়াস্তে মাফ চান তিনি।