আপনি পড়ছেন

২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি ক্ষমতায় বসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি মধ্যবিত্তের জন্য সুগম ও মার্কিন স্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কে স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে গেছেন। এই বছরে রাষ্ট্র পরিচালনায় তার লিখিত-অলিখিত মূলনীতিগুলোর মধ্যে ছিল বিশ্ব সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত হওয়া, মার্কিন নেতৃত্ব জোরদার, মার্কিন নেতৃত্বাধীন দীর্ঘতম যুদ্ধগুলোর অবসান, চীনের ক্রমবর্ধমান দৃঢ়তার প্রতি আরও ভালো প্রতিক্রিয়া দেখানো, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে স্থিতিশীলতা, ইরানের সঙ্গে যুগান্তকারী পারমাণবিক চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করা, মেক্সিকোর সঙ্গে দক্ষিণ সীমান্ত বরাবর ওয়াশিংটনের নীতিতে আরও মানবতার সন্নিবেশ ঘটানো।

china usa flag 2019যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের পতাকা

২০২১ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসন প্রকৃত মূল মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করেছে ওয়াশিংটন। বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলায় বাইডেন হয়ে উঠেছেন একজন নেতৃস্থানীয় ‘কুশলী রাজনীতিবিদ’। কিন্তু মানবাধিকার নেতৃত্বপূর্ণ পররাষ্ট্র নীতির প্রতিশ্রুতি মেনে চলতে ব্যর্থ হওয়ায় সমালোচনার সম্মুখীনও হয়েছেন তিনি। ২০২১ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির মূল পদক্ষেপগুলো নিচে উলে­খ করা হলো।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং মিত্রদের সঙ্গে পুনঃসম্পৃক্ততা: প্রেসিডেন্ট হিসাবে প্রথম দিন অফিসে বসেই প্যারিস জলবায়ু চুক্তি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় পুনরায় যোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন। এর মাধ্যমে তিনি অফিসের উদ্বোধনী দিনেই একটি ‘স্বতন্ত্র সম্পর্ক’ তৈরির ইঙ্গিত দেন। ট্রাম্প যথাক্রমে ২০১৭ এবং ২০২০ থেকে উভয় বিষয় থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। বাইডেন ট্রাম্পের দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতি পরিহার করে ন্যাটো মিত্রদের আশ্বস্ত করারও চেষ্টা করেছেন তিনি তাদের সঙ্গে আছেন।

উত্তর আমেরিকার প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই দেওয়া, জাতিসংঘে মার্কিন নিযুক্তি পুনরুদ্ধার করা এবং ওয়াশিংটনকে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নেতা হিসাবে অবস্থান নেওয়া বাইডেনের কুশলী পররাষ্ট্রনীতিরই বহিঃপ্রকাশ। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশৃঙ্খল প্রত্যাহার প্রাথমিকভাবে বাইডেনের ওপর বিশ্বাস কিছুটা হলেও হারিয়েছে ওয়াশিংটন।

চীনের সঙ্গে উত্তেজনা শীতল করার চেষ্টা: বাইডেন এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের প্রথম শীর্ষ বৈঠককে বছরব্যাপী তৈরি হওয়া উভয় দেশের মধ্যে চলমান বাকযুদ্ধ এবং ক্রমবর্ধমান উত্তেজনাকে শীতল করার প্রচেষ্টা হিসাবে দেখেছেন পররাষ্ট্রনীতির বিশ্লেষকরা। ২০১৮ সাল থেকে ওয়াশিংটন এবং বেইজিং এক ‘বাণিজ্য নেতা’ হওয়ার যুদ্ধে লিপ্ত। বাইডেনের আমলেও সেটি অব্যাহত আছে।

বাইডেন প্রশাসন স্পষ্ট করেছে, তারা বেইজিংকে তার শীর্ষ বৈদেশিক নীতি অগ্রাধিকার হিসাবে বিবেচনা করে। মার্চ মাসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিঙ্কেন চীনকে আমেরিকার একমাত্র অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক, সামরিক এবং প্রযুক্তিগত শক্তির চ্যালেঞ্জ হিসাবে অভিহিত করেন। সেই সঙ্গে এই উন্মুক্ত চ্যালেঞ্জকে গুরুত্বের সঙ্গে মোকাবেলা করারও ইঙ্গিত দেন। এদিকে বাইডেন বেইজিংসহ কয়েকটি পক্ষের এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন যে, ওয়াশিংটন এশিয়ান পরাশক্তির সঙ্গে একটি নতুন শীতল যুদ্ধের পথে রয়েছে।

যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিতভাবে এই অঞ্চলে চীনের জবরদস্তিমূলক এবং দৃঢ় পদক্ষেপের নিন্দা করেছে। চীন সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তাইওয়ানের আকাশসীমার কাছে রেকর্ড সংখ্যক ফাইটার জেট উড়িয়েছে। শি-বাইডেন মুখোমুখি বৈঠকের পর বেইজিং বলেছে, ওয়াশিংটন কর্তৃক তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে সমর্থন করা আগুন নিয়ে খেলার শামিল।

লেজেগোবরে অবস্থায় আফগানিস্তান ত্যাগ: সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তালেবানের সঙ্গে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। কিন্তু একটি বিশৃঙ্খল উচ্ছেদের দরুন হাজার হাজার দুর্বল আফগানকে কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মরিয়াভাবে দেশত্যাগের জন্য জড়ো করেছে। সেখানে একটি আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ১৮০ জন আফগান এবং ১৩ জন মার্কিন সেনা নিহত হয়েছেন।

মধ্যপ্রাচ্যের সৈন্য প্রত্যাহার সুদূর পরাহত: ৯ ডিসেম্বর ওয়াশিংটন ঘোষণা করেছিল, ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন যুদ্ধমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে। যদিও এই অঞ্চলের শীর্ষ মার্কিন কমান্ডার বলেছেন, দেশটিতে ২ হাজার ৫০০ মার্কিন সেনা সদস্য উপদেষ্টা ও সহায়কের ভূমিকা পালন করছেন। অদূর ভবিষ্যতেও তারা নিয়োজিত থাকবেন। এদিকে সিরিয়ায় থাকা প্রায় ৯০০ মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের আশাও সুদূর পরাহত।

বাইডেন প্রশাসন অফিসে প্রবেশ করে বলেছিল, তারা ট্রাম্পের অধীনে স্বাক্ষরিত আব্রাহাম চুক্তি বাতিল করবে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি আরব দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে। নভেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লোহিত সাগরে একটি যৌথ নৌমহড়ার আয়োজন করেছিল। বাইডেন ইসরায়েলের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রেখেছেন ।

ইরান পারমাণবিক চুক্তি: ২০১৫ সালের ইরান পারমাণবিক চুক্তি বা জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) পুনরুজ্জীবিত করার একজন কট্টর উকিল ছিলেন বাইডেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে তেহরান নিষেধাজ্ঞা উপশমের খাতিরে তার পারমাণবিক কর্মসূচি হ্রাস করেছে। ট্রাম্প চুক্তিটি থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। পাশাপাশি যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন এবং রাশিয়া ইরানের বিরুদ্ধে ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগের প্রচারণা চালিয়ে গিয়েছিল। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সময়সীমা এবং কোন নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাহার করা হবে সেসব বিষয়ে দুই দেশ এখনো দ্বন্দ্বে লিপ্ত।

ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে দ্বন্দ্ব: রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাইডেনের প্রাথমিক আশা ভেস্তে গেছে। ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ান সেনামহড়া দেশটিতে আক্রমণের আশঙ্কা আরও প্রকট করেছে। ৭ ডিসেম্বর পুতিনের সঙ্গে একটি ভিডিও বৈঠকের পর বাইডেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিলে গুরুতর পরিণতি হবে, যা পুতিন ভাবতেও পারেন না।’ এর জবাবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন স্পষ্ট হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে পশ্চিমাদের অবন্ধুসুলভ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে পালটা পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত রাশিয়া।’

আফ্রিকায় চীনা প্রভাব মোকাবেলা: আফ্রিকার প্রতি বাইডেন প্রশাসনের কূটনীতি মূলত ইথিওপিয়ায় চলমান সংঘাত এবং সুদানে সাম্প্রতিক সামরিক দখলের ফল। সেই সঙ্গে ট্রাম্পের অধীনে চালু হওয়া একটি বাণিজ্য উদ্যোগকে সমর্থন করার দিকে মনোনিবেশ করেছেন তারা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন এ বিষয়ে পদ্ধতিগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘মহাদেশটিকে একটি প্রধান ভূরাজনৈতিক শক্তি হিসাবে বিবেচনা করা হবে এবং শুধু চীনা প্রভাব মোকাবেলার ক্ষেত্র হিসাবে নয়।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.