আপনি পড়ছেন

চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের পর থেকে সারাবছর লুকিয়ে-পালিয়ে অথবা গা-ঢাকা দিয়ে জীবনবাজি রেখে সাংবাদিকতা করছেন মিয়ানমারের মুক্তকণ্ঠী সাংবাদিকরা। জান্তার ভয়ে পালিয়ে জঙ্গলে আসা এক সাংবাদিক বলছেন, এখানেই ভালো আছি। পিপাসায় পান করেন নদীর পানি, ক্ষুধা মেটাতে নির্ভর করেন জঙ্গল থেকে কুড়িয়ে পাওয়া ফলমূল।

Journalist press১৪ ডিসেম্বর সেনা কাস্টডিতেই মারা যান কো সোয়ে নাইং

‘গণতন্ত্র খেঁকো’ বর্বর জান্তা সরকারের বড় বাধা মুক্তবুদ্ধি ও বাকস্বাধীনতা। লুটপাট, গুম-হত্যা, ধর্ষণের খবর যেন কেউ জানতে না পারে, এ কারণেই সাংবাদিকদের ওপর মরিয়া হয়ে উঠেছে সেনারা। একমাত্র চক্ষুশূল রাজনৈতিক বিরোধী ও গণমাধ্যম।

ডেল্টা নিউজ এজেন্সির প্রধান সম্পাদক সোয়ে ইয়া রেডিও ফ্রি এশিয়াকে বলছেন, গণতান্ত্রিক অধিকার এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বর্তমান অভাবের কারণে পালিয়ে বেড়ানো সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার হওয়া এবং না হওয়ার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। কারণ, পালিয়ে থেকেও স্বস্তিতে নেই তারা।

২০২১ সাল ছিল মিয়ানমারের সাংবাদিক নির্যাতনের বছর। সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকেই হত্যা, হুমকি, ধরপাকড় আর নির্যাতনের মুখে দায়িত্ব পালন করেছেন স্থানীয় ও বিদেশি সাংবাদিকরা। সামরিক অভ্যুত্থান পরবর্তী প্রতিবাদ বিক্ষোভ আর গণহত্যার সংবাদ বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে প্রাণবাজি রেখে কাজ করতে হচ্ছে।

জান্তার নির্যাতনে জেলেই প্রাণ হারিয়েছেন এক সাংবাদিক। ৮৭ জন সাংবাদিককে আটকের ঘটনা ঘটেছে। এদের অধিকাংশ এখনও কারাগারে রয়েছেন। পাশাপাশি তারা ‘গলা টিপে’ হত্যা করেছে ৪০টি অনলাইন সংবাদমাধ্যম। ৪৯টি দেশি ও আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে নির্যাতন আর ধরপাকড়ের জন্য টার্গেট করেছে তারা।

১০ ডিসেম্বের ইয়াঙ্গুনে অভ্যুত্থানবিরোধী এক মৌনবিক্ষোভ থেকে গ্রেপ্তার হন ফ্রিল্যান্স ফটো সাংবাদিক সোয়ে নাইং। তার ঠিক ৪ দিন পর, ১৪ ডিসেম্বর সেনা কাস্টডিতেই মারা যান কো সোয়ে নাইং। এটাই জান্তা সরকারের হেফাজতে প্রথম সাংবাদিক হত্যা। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার ওপর নৃশংসতা চালানো হয়েছে বলে জানা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি সংস্থা কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) বলেছে, ‘এ বছর বিশ্বে সাংবাদিকদের জেল দেওয়ার দিক দিয়ে সবচেয়ে খারাপ দেশের মধ্যে মিয়ানমার দ্বিতীয়। প্রথমে রয়েছে চীন। ডিসেম্বরেই মিয়ানমারে জেল দেওয়া হয়েছে ২৬ জনকে। মোট গ্রেপ্তার বা জেলে পাঠানোর চেয়ে বাস্তব পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ।

মিয়ানমার সার্ভিসের প্রতিবেদন অনুসারে, ৩১ জন সাংবাদিককে ৩০ জুনের আগে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। আত্মগোপনে রয়েছেন আরও ২৬ জন সাংবাদিক। মিয়ানমারের স্থানীয় ম্যাগাজিন ‘ফ্রন্টিয়ার মিয়ানমার’র ব্যবস্থাপক সম্পাদক মার্কিন সাংবাদিক ড্যানি ফেনস্টারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল মার্চে। মুক্তি দেওয়া হয় নভেম্বরে।

মান্দালয়ের এক সাংবাদিক জানিয়েছেন, ‘তারা প্রত্যেকের মোবাইল ফোন পরীক্ষা করা হয়। সাংবাদিকরা বাইরে গিয়ে তাদের কাজ করতে পারেন না। কারণ আমাদের ফোনে সবসময় সংবাদের ছবি থাকে।’

তিনি আরও বলেন, আগে ‘প্রেস’ লেখা হেলমেট পরে বাইক চালাতেন। এখন ওই শব্দটি সবচেয়ে বিপজ্জনক।