টিকা নিয়ে ক্ষেপলেন ম্যাক্রোন, সমালোচনার ঝড়

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন, যারা ভ্যাকসিন নেয়নি তাদের জীবন তিনি কঠিন করে তুলতে চান। ফ্রান্সের লে প্যারিসিয়েন পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে গতকাল মঙ্গলবার (৪ ডিসেম্বর) তিনি বলেছেন, যারা ভ্যাকসিন নেবে না, আমি সত্যিই তাদের ঝামেলা করতে চাই এবং আমরা শেষ পর্যন্ত এটি করতে থাকব। বিবিসি।

ইমানুয়েল ম্যাক্রোন

রাজনৈতিক বিরোধীরা বলছেন, সাক্ষাৎকারে ম্যাক্রোন যে ভাষা ব্যবহার করেছেন তা একজন প্রেসিডেন্টের কাছে কাম্য নয়। কোভিড পাস সংক্রান্ত একটি বিল বিলম্বিত হওয়ায় বিরোধী সাংসদরা সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পর ম্যাক্রোনের ওই কড়া মন্তব্য এসেছে।

ওই বিলের ওপর সংসদে একটি বিতর্ক হয়েছে, যা টিকা না দেওয়া ব্যক্তিদের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। এই সপ্তাহে আইনটি ভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এটি ভ্যাকসিন বিরোধীদের ক্ষুব্ধ করেছে এবং বেশ কয়েকজন ফরাসি এমপি বলেছেন, তারা এই বিষয়ে মৃত্যুর হুমকি পেয়েছেন।

মঙ্গলবার ম্যাক্রন বলেন, তিনি জোর করে টিকা দেবেন না। তবে সামাজিক জীবনে যতটা সম্ভব তাদের চলাফেরা সীমিত করে তুলবেন, ‘আমি টিকাবিহীন লোকদের কারাগারে পাঠাব না। তবে ১৫ জানুয়ারি থেকে তারা আর রেস্টুরেন্ট, কফি শপ, থিয়েটার কিংবা সিনেমায় যেতে পারবেন না। আমি ফরাসিদের ভালোবাসতে শিখেছি কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তাদের ঘৃণা করতে পছন্দ করি।’

ম্যাক্রোনের ভাষার এমন ব্যবহার অপবাদ হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে এবং বিরোধী রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। এএফপির উদ্ধৃতি দিয়ে ডানপন্থী রিপাবলিকানদের সিনেট নেতা ব্রুনো রিটেইলিউ বলেছেন, জরুরি স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে এ ধরনের কথাকে সমর্থন করা যায় না।

উগ্র ডানপন্থী নেতা মেরিন লে পেন টুইট করেছেন, একজন রাষ্ট্রপতির এমন কথা বলা উচিত নয়। ইমানুয়েল ম্যাক্রোন তার পদের অযোগ্য। ইতিমধ্যে বামপন্থী রাজনীতিবিদ জিন-লুক মেলেনচন এই মন্তব্যকে ‘আশ্চর্যজনক স্বীকারোক্তি’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। এটি স্পষ্ট যে, তিনি টিকাবিরোধিদের ব্যক্তি স্বাধীনতার বিরুদ্ধে একটি সম্মিলিত শাস্তি ঘোষণা করেছেন।

ইইউ জোনে ফ্রান্সে কোভিড টিকা দেওয়ার হার সবচেয়ে বেশি। দেশটির প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ৯০ শতাংশেরও বেশি ডবল ডোজ সম্পন্ন করেছে। গতকাল মঙ্গলবার দেশটিতে ২ লাখ ৭১ হাজার ৬৮৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মহামারি শুরুর পর থেকে ফ্রান্সে দৈনিক সংক্রমণের সর্বোচ্চ রেকর্ড এটি।

আগামী এপ্রিলে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। দ্বিতীয় মেয়াদে ম্যাক্রোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কি-না, তা এখনও স্পষ্ট করেননি তিনি। স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ভালো হলে সিদ্ধান্তটি জানান দেবেন তিনি।