প্রস্তুত রাশিয়া-ইউক্রেন: সংকেত পেলেই যুদ্ধ!

ট্যাঙ্ক, সেনাদল ও অন্যান্য সামরিক যান নিয়ে ভূমধ্যসাগরের দিক থেকে এগিয়ে আসছে ছয় ছয়টি রুশ যুদ্ধজাহাজ। প্রস্তুত রয়েছে শত শত যুদ্ধবিমানও। এখন শুধু প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশের অপেক্ষা মাত্র। ইউক্রেন ঘিরে বাজতে শুরু করেছে যুদ্ধের দামামা। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে রুশ বাহিনী। ইউক্রেনের সঙ্গে ৪ হাজার মাইলেরও বেশি সীমান্তজুড়েই সেনা মোতায়েন করেছে রুশ প্রশাসন। দ্য গার্ডিয়ান।

যুদ্ধের জন্য বনের ভেতর প্রশিক্ষণ নিচ্ছে ইউক্রেনের হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক, ছবি-গার্ডিয়ান

যুদ্ধ সংকেত পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়বে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী। সম্ভাব্য আক্রমণ ঠেকাতে পুরোপুরি প্রস্তুত ইউক্রেনও। এদিকে মস্কোর বিরুদ্ধে আবারও কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব। বলেছে, হামলা চালানোর কয়েক দিনের মধ্যেই রাশিয়ার ওপর সম্মিলিতভাবে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। রোববার ইউরোপীয় ইউনিয়নের, ইইউ, এক সিনিয়র কর্মকর্তা এক বিবৃতিতে এই হুঁশিয়ারি দেন।

ইউক্রেনে সম্ভাব্য রুশ আগ্রাসন থামাতে গত কয়েক সপ্তাহের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা কোনো ফল দেয়নি। আলোচনায় অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এ অচলাবস্থাই যুদ্ধের আশঙ্কাকে আরও ঘণীভূত করেছে। ইউক্রেন সীমান্তজুড়ে আগে থেকেই লক্ষাধিক রুশ সেনা মোতায়েন রয়েছে।

বেলারুশেও সেনা, যুদ্ধবিমান এবং ভারী অস্ত্রশস্ত্র মোতায়েন করেছে রাশিয়া। সুদূর পূর্বাঞ্চল থেকে বিশেষ কৌশলগত ব্যাটালিয়ন এসেছে, তাদের সঙ্গে উরুগান স্ব-চালিত রকেট লঞ্চার এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০ রয়েছে। এই শক্তিশালী বাহিনী এখন কিয়েভ থেকে মাত্র ২০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। এদিকে ভূমধ্যসাগরে ইউক্রেনের দক্ষিণ উপকূলে মোতায়েন করা হয়েছে ছয় ছয়টি যুদ্ধ জাহাজ। অত্যাধুনিক সব ব্যাটল ট্যাঙ্ক, সেনা ও সামরিক যান নিয়ে জাহাজগুলো ক্রমেই উপকূলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দারা দাবি করেছেন, রাশিয়া ভাড়াটে যোদ্ধাও নিয়োগ দিয়েছে এবং যুদ্ধের সম্ভাব্য ক্ষেত্রে প্রস্তুতি রাখতে দোনেস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলে ওই ভাড়াটে বাহিনীকে জ্বালানি, ট্যাঙ্ক এবং স্ব-চালিত আর্টিলারি সরবরাহ করছে। শুধু তাই নয়, স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, অভিজাত স্পেটসনাজ বাহিনী এবং বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রসহ একটি বড় সামরিক বাহিনী রাশিয়ার পূর্ব সামরিক জেলা থেকে বেলারুশে এসে পৌঁছেছে।

পিছিয়ে নেই ইউক্রেনও। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলো ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তা বাড়িয়েছে। গত সপ্তাহেই ব্রিটেন ২ হাজারের বেশি পরবর্তী প্রজন্মের হালকা অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক লঞ্চার পাঠিয়েছে এবং প্রশিক্ষক হিসেবে একটি নতুন রেঞ্জার রেজিমেন্ট থেকে প্রায় আড়াই ডজন সেনা পাঠিয়েছে।

প্রতিবেশী দেশ এস্তোনিয়া বলেছে, তারা ইউক্রেনকে জ্যাভলিন অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল দিবে। আর স্টিংগার অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট মিসাইল পাঠাবে লিথুয়ানিয়া এবং লাটভিয়া। নেদারল্যান্ডসও জানিয়েছে, তারা ইউক্রেনকে প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্র সরবরাহ করতে প্রস্তুত।

কিয়েভের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়ার পক্ষ থেকে যেকোনো ধরনের অনুপ্রবেশ ইউক্রেনের ব্যাপক প্রতিরোধের মুখোমুখি হবে। ইউক্রেনীয় নিরাপত্তা ও সহযোগিতা কেন্দ্রের প্রধান সের্হি কুজান বলেন, বর্তমানে সীমান্তে পর্যাপ্ত রাশিয়ান বাহিনী দ্রুত আক্রমণের অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু জয়ের জন্য পর্যাপ্ত বাহিনী তাদের নেই। ইউক্রেনের রয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার সেনা, পাশাপাশি ৪ লাখ সামরিক দেশপ্রেমিক তো রয়েছেই।

অস্ত্রের দিক থেকে সারফেস টু এয়ার মিসাইল হবে ইউক্রেনের সেরা চমক এবং চলতি সপ্তাহে ব্রিটেন পাঠিয়েছে বেশকিছু ট্যাঙ্কবিধ্বংসী অস্ত্র। যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে তারা আজভ সাগর বরাবর উপকূল খনন করেছে এবং জাহাজবিরোধী ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপন করেছে। এটি রাশিয়ান উভচর অবতরণকে বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন করবে বলে কুজান জানান।

ইউক্রেনে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস থেকে কর্মীদের সরিয়ে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র: সম্ভাব্য যুদ্ধের আশঙ্কায় ইউক্রেন থেকে মার্কিন কূটনীতিকদের পরিবার ও দূতাবাস কর্মীদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবারের আগেই এসব কূটনীতিক পরিবারগুলোকে ইউক্রেন থেকে চলে যেতে বলা হয়েছে।

মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ফক্স নিউজ বলেছে, মার্কিন নাগরিকদেরও ইউক্রেন ছাড়তে বলছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাদের আগামী সপ্তাহের মধ্যেই বাণিজ্যিক ফ্লাইটের মাধ্যমে ইউক্রেন ছাড়তে বলা হচ্ছে। যদিও এই মার্কিন ঘোষণার পক্ষে কোনো দাপ্তরিক বিজ্ঞপ্তি বা বিবৃতির কথা বলা হয়নি ফক্স নিউজের প্রতিবেদনে।

ইউক্রেন-রাশিয়া নিয়ে মন্তব্যে জার্মান নৌপ্রধানের পদত্যাগ: এদিকে ইউক্রেন-রাশিয়া নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন জার্মান নৌবাহিনীর প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল কে-আচিম শোয়েনবাখ। শনিবার গভীর রাতে নিজের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন এ কর্মকর্তা। শুক্রবার ভারত সফরে এসে একটি অনুষ্ঠানে শোয়েনবাখ বলেন, রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করতে চেয়েছিল এটি ‘বাজে কথা’। এতেই সমালোচনার ঝড় শুরু হয়।