অসলো আলোচনায় তালেবান, সংকট উত্তরণের প্রত্যাশা

তালেবান প্রতিনিধি দল প্রথম ইউরোপ সফর শুরু করেছে। নরওয়ের রাজধানী অসলোতে তিন দিনের আলোচনার প্রথম দিন রোববার আফগান নাগরিক সমাজের সাথে তাদের আলোচনা শুরু হয়েছে। নরওয়ের মধ্যস্থতায় আয়োজিত আলোচনায় আফগানিস্তানে মানবাধিকার ও মানবিক সংকটের উপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ আলোচনায় আশার আলো দেখছে তালেবান। এবিএনএ নিউজের খবর।

নরওয়ের অসলোতে তালেবান প্রতিনিধি দল

আজ সোমবার তালেবান প্রতিনিধিদল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রিটেন, জার্মানি, ইতালি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের, ইইউ, প্রতিনিধিদের সাথে দেখা করবে। আগামীকাল মঙ্গলবার নরওয়েজিয়ান কর্মকর্তাদের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হবে তাদের।

গত শনিবার তালেবানের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, তালেবান আশা করছে- আলোচনা যুদ্ধের পরিবেশকে একটি শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতিতে রূপান্তর করতে সাহায্য করবে।

ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির নেতৃত্বে তালেবান প্রতিনিধি দলটি রোববার থেকে পশ্চিমা সরকারি কর্মকর্তা এবং আফগান নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা শুরু করে। যার মধ্যে আছে আফগানিস্তানের নারী কর্মী, সাংবাদিক এবং আফগান প্রবাসী। পশ্চিমা কর্মকর্তাদের সাথে উচ্চ-প্রত্যাশিত বৈঠকের আগে প্রতিনিধি দলটি আলোচনাগুলো শেষ করবে।

আফগানিস্তান সবচেয়ে খারাপ মানবিক সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কারণ ২০২১ সালের আগস্টে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রায় ৯.৫ বিলিয়ন সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে। তালেবানরা বারবার সম্পদ ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু ওয়াশিংটন তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক মিত্র এবং পশ্চিমা সরকারও মূলত তখন থেকেই আফগানিস্তানে তাদের আর্থিক সহায়তা স্থগিত করেছে। সাহায্য সংস্থা এবং জাতিসংঘ পূর্বভাস দিয়েছে, আফগানিস্তানের ৩৮ মিলিয়ন জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি এই শীতে ক্ষুধার্ত হবে।

তালেবান ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আফগানিস্তান শাসন করেছিল। ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট আবার ক্ষমতা গ্রহণ ও ৭ সেপ্টেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে। কোনো দেশ এখনও তাদের শাসনকে স্বীকৃতি দেয়নি। তারপর থেকে তালেবানরা একটি গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কট নিয়ন্ত্রণে লড়াই করছে।

যাইহোক, পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার জন্য তাদের প্রচেষ্টা এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার দ্বারা ক্ষুণ্ন হয়েছে। কারণ ব্যাংকগুলিতে নগদ অর্থের অভাব রয়েছে এবং বেসামরিক কর্মচারীরা বেতন পাচ্ছে না।

গত ২১ জানুয়ারি নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানিকেন হুইটফেল্ড জোর দিয়ে বলেন, অসলো আলোচনা তালেবানের বৈধতা বা স্বীকৃতির প্রতিনিধিত্ব করবে না। কিন্তু আমাদের অবশ্যই দেশের ডি ফ্যাক্টো কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে হবে। আমরা রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও খারাপ মানবিক বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যেতে দিতে পারি না।

তিনি বলেন, আমরা আফগানিস্তানের গুরুতর পরিস্থিতি নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন, যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ একটি পূর্ণাঙ্গ মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছে। আফগানিস্তানের বেসামরিক জনগণকে সাহায্য করতে সক্ষম হওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং সমাজের বিভিন্ন অংশের আফগান উভয়েই তালেবানদের সাথে আলোচনায় জড়িত হওয়া অপরিহার্য।

আমরা তালেবানদের প্রতি আমাদের প্রত্যাশা সম্পর্কে পরিষ্কার থাকব। বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষা এবং সমাজে নারীদের অংশগ্রহণের অধিকারের মতো বিষয়ে।